ইয়াহিয়া খানের নীরব ষড়যন্ত্রের কয়েকটি দিন
এ কে এম শাহনাওয়াজ
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
১৯৭১-এর ২ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অসহযোগ আন্দোলন করছিল বাঙালি। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এ আন্দোলনকে খুব একটা মূল্যায়ন করেনি। তাই বঙ্গবন্ধু নতুন করে অসহযোগের ডাক দেন। ১৫ মার্চ ঘোষণা করেন ‘লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার জন্য মোট ৩৫টি নির্দেশাবলি ঘোষণা করে। এসব নির্দেশ সমাজের সর্বস্তরে যেমন-সরকারি অফিস-আদালত, কল-কারখানা, রাষ্ট্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব ক্ষেত্রেই মেনে চলা হলো। এমনকি রেডিও, টিভিও বঙ্গবন্ধুর আদেশ মেনে চলল। মুখ্যত এ সময় দেশ চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই।
সম্ভবত এবার ইয়াহিয়া খান সংকট অনুধাবন করতে পারলেন। তিনি আলোচনার মাধ্যমে সংকট থেকে বেরোনোর চিন্তা করলেন। তবে অনেকেরই ধারণা, এ আলোচনা ছিল আইওয়াশ। নিজেদের গোপন উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্যই ছিল তার আলোচনা। যাই হোক, ইয়াহিয়া খান ১৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য ঢাকায় আসেন।
লক্ষণীয় যে, ঢাকায় তাকে বাঙালিদের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়নি। বিমানবন্দরের সব পথ সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। চারদিকে সৈন্যরা পাহারায় ছিল। প্রেসিডেন্টকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল ১৮ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়নের এক কোম্পানি সৈন্য। মেশিনগানে সজ্জিত গাড়ি ছিল। ঢাকা সফর সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে বাংলাদেশের অতিথি হিসাবে স্বাগত জানানো হবে।’ ইয়াহিয়ার বিমান শ্রীলংকা ঘুরে ঢাকায় পৌঁছে বিকাল ৩টায়।
এ সময় পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি কতটা নাজুক ছিল, তা পাকিস্তানি মেজর সিদ্দিক সালিকের গ্রন্থে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তিনি লিখেছেন, ‘আমি অনেক প্রেসিডেন্ট আর দেশের প্রধানদের আগমন দেখেছি; কিন্তু ১৫ মার্চ ঢাকায় যে পরিবেশের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এসে অবতরণ করলেন, তা আমি কখনোই ভুলব না। বিমানবন্দরে প্রবেশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। টার্মিনাল ভবনের ছাদের ওপর স্টিলের হেলমেট পরা প্রহরীদের দাঁড় করানো হয়।
বিমানবন্দর ভবনের প্রতিটি সদস্যকে ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। পিচঢালা পথে প্রবেশের একমাত্র রাস্তা পিএএফ গেটে সেনাবাহিনীর ভারি অস্ত্রে সজ্জিত একটা দলকে বসানো হয়। পদাতিক সৈন্যের (১৮ পাঞ্জাব) ট্রাকভর্তি একটি কোম্পানি (প্রায় ১০০ জনের) ফটকের বাইরে মেশিনগান নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে করে শহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সতর্কতার সঙ্গে বাছাই করা অল্প কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিমানবন্দরের ভেতরে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। আমিসহ তাদের বিশেষ নিরাপত্তা পাস দেওয়া হয়। কোনো ফুলের তোড়া ছিল না, ছিল না কোনো বেসামরিক কর্মকর্তা।
শহরের অভিজাতদের কেউ নেই, নেই সাংবাদিকদের ধাক্কাধাক্কি বা ক্যামেরার ক্লিক। এমনকি সরকারি ফটোগ্রাফারকেও অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ ছিল এক অদ্ভুত ভীতিকর পরিবেশ, যেখানে জড়িয়ে ছিল মৃত্যুর স্তব্ধতা’ (আত্মসমর্পণের দলিল, মূল বই সিদ্দিক সালিক, Witness to Surrender, মুক্তিযুদ্ধ আর্কাইভ, পৃ. ৮০)’ ১৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেন। এ বৈঠক প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে। এদিন ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ একটি বিবৃতি প্রচার করে। বিবৃতিটি নিচে উদ্ধৃত করা হলো-
‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, জোহা হল, মুন্নুজান হল, যশোর এবং রংপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম এবং ঢাকার ফার্মগেট দ্বিতীয় রাজধানী ও কচুক্ষেত এলাকায় পাশবিক অত্যাচার চালায়। অনেক লোক খুন হয়েছে এবং স্ত্রীলোক পর্যন্ত ওদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে অবশ্যই এসব সৈন্য ফিরিয়ে নিতে হবে।’
ঢাকার প্রেসিডেন্ট হাউসে ইয়াহিয়ার তখন কার্যত বন্দিদশা। বিরাট সশস্ত্র রক্ষীদল ছাড়া তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। পূর্ব পাকিস্তানে তখন শেখ মুজিবের কিংবা তার দলের নির্দেশ ছাড়া কিছুই চলছিল না, কোনো কাজই হচ্ছিল না। আওয়ামী লীগের নির্দেশাবলিই ছিল তখন দেশের সর্বোচ্চ আইন। ইয়াহিয়ার কর্তৃত্ব প্রহসনে পরিণত হয়েছিল’ (রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, মুক্তধারা, চতুর্থ প্রকাশ, ১৯৯১, পৃ.৫৩-৫৪)।
ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এই ১৭ মার্চে। ১ ঘণ্টাব্যাপী চলা বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের জানালেন, ‘আলোচনা চলবে।’ এতে অনেকে অনুমান করেন, আলোচনায় তেমন একটা অগ্রগতি হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ইয়াহিয়া খানের প্রতি মানুষের তেমন একটা আস্থা ছিল না। ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছিল, এ বৈঠক ছিল ভুট্টো-ইয়াহিয়ার একটি সাজানো নাটক। সময়ক্ষেপণ ছাড়া আর কিছু নয়। একদিকে ঢাকায় ইয়াহিয়া খান আলোচনার মাধ্যমে অগ্রগতি ঘটাতে চাইছেন, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টো দম্ভোক্তি করছেন, তাকে ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তিনি তা প্রতিহত করবেন।
১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ফোন করলেন বঙ্গবন্ধুর বন্ধুপ্রতিম পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিক ওয়ালী খান। তিনি বৈঠকের ভবিষ্যতের কথা জানতে চাইলেন। বঙ্গবন্ধু তার দূরদর্শিতা দিয়ে বললেন, ‘কী আর হবে, ইয়াহিয়া খান এসেছেন, এরপর ভুট্টো আসবেন, আলোচনা ভেঙে যাবে। পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমরা যুদ্ধ করব। শেষ পর্যন্ত আমাদেরই জয় হবে’ (প্রণব সাহা)।
এর মধ্যে একটি মজার ঘটনা ঘটে। প্রেসিডেন্ট হাউসের বাঙালি পাচক নূরু মিয়া বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে আছেন জানিয়ে ইয়াহিয়া খানের খাবার রান্না বন্ধ করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু জানলেন, প্রেসিডেন্ট তিন দিন ধরে বিস্কুট আর কফি খেয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু তখন প্রেসিডেন্টের জন্য বুটের ডাল ও রুটি পাঠালেন।
এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বাঙালি অফিসারদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। তারা পাক সেনাশাসকদের ভয়ানক ষড়যন্ত্রের কিছুটা আঁচ করতে পারেন। পাশাপাশি গোপনে নিজেদের প্রস্তুত করতে থাকেন। এ সেনা অফিসারদের অন্যতম চট্টগ্রামের ইপিআর সদর দপ্তরের অ্যাডজুট্যান্ট মেজর রফিকুল ইসলামের গ্রন্থে এ সময়ের কিছু খণ্ড চিত্র পাওয়া যায়। তার বর্ণনা থেকে ১৭ মার্চের একটি চিত্র এখানে উদ্ধৃত করা হলো-
‘... আমার একজন বিশ্বস্ত অফিসার ক্যাপ্টেন হারুন ছিলেন ইপিআর-১৭ উইং-এর সদর দপ্তর কাপ্তাইয়ে। আমি তার সঙ্গে আলোচনা এবং করণীয় সম্পর্কে কিছু বলার জন্য মার্চের প্রথম সপ্তাহে তাকে আমার বাসভবনে আসতে বললাম। আমি তাকে শেষবারের মতো প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেই মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। তখনই আমি তাকে গোপনীয় সাংকেতিক বার্তার অর্থ জানিয়ে দেই।
কাপ্তাই এলাকার সব অপারেশনের দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত ছিল এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী পরে চট্টগ্রামে আমার সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। আমার সমর সদর দপ্তর করা হয়েছিল চট্টগ্রাম রেলওয়ে হিল এলাকায়।
১৭ মার্চ আমি চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর তরুণ বাঙালি অফিসারদের পূর্বাপর ঘটনা এবং আমার প্রস্তাবিত কর্মপন্থা অবহিত করার জন্য সারসন রোডস্থ আমার বাসায় আমন্ত্রণ জানালাম।
সন্ধ্যার ঠিক পরে ক্যাপ্টেন অলি, ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান এবং লেফটেন্যান্ট শমসের মবিন বেবিট্যাক্সিতে এলেন। সে সময় আমি আমার বাসার লনে পায়চারি করতে করতে কোন কথা দিয়ে কথা শুরু করব এবং কী পরামর্শ দেব, সে সম্পর্কেই ভাবছিলাম। কিছুক্ষণ পর ক্যাপ্টেন হারুন, ডা. জাফর এবং জনাব কায়সারও এলেন। ডা. জাফরের সঙ্গে আগেই কথা হয়েছিল, প্রথমে আমরা আমার বাসায় মিলিত হব। তারপর যে যার পথে শহর থেকে ২০ মাইল দূরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান আলমের বাসায় গিয়ে আবারও মিলিত হব। জনাব আলমকে একথা আগেই বলা ছিল। আমাদের বৈঠক সম্পর্কে পুরোপুরি গোপনীয়তা রক্ষার জন্যই এরূপ ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
আগত অফিসারদের আমি জানাই, তাদের সঙ্গে আমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা আছে এবং আলম সাহেবের বাসায় গিয়ে তারা কথা বলতে রাজি কিনা। অফিসাররা সম্মতি জানালেন। তারপর ডা. জাফর, জনাব আতাউর রহমান কায়সার এবং আমি একটি গাড়িতে আর ক্যাপ্টেন অলি, হারুন, খালেকুজ্জামান এবং মবিন ক্যাপ্টেন হারুনের ভক্সওয়াগনে জনাব আলমের বাসার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলাম। সেখানে তাদের সঙ্গে আমার প্রায় আধ ঘণ্টা কথা হলো।
ডা. জাফর এবং জনাব কায়সার বাড়ির চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখছিলেন। আমি তাদের বললাম, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালিদের ওপর হামলা চালানোর জন্য শক্তি সঞ্চয় করছে। প্রস্তুতি পূর্ণ হলেই তারা আঘাত হানবে। ওদের আঘাত হানার জন্য আমরা তৈরি না হলে ওরা আমাদের সবাইকে হত্যা করবে। এ অবস্থায় আমাদের কি সশস্ত্র আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত নয়? ওদের আগেই আমাদের আক্রমণ করা দরকার।
অফিসাররা আমার সঙ্গে একমত হলেন। ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে অফিসাররা অবহিত দেখে আমি খুশি হলাম। আমি তাদের বললাম, প্রায় ১৫০০ বাঙালি ইপিআর সেনা নিয়ে আমি প্রস্তুত রয়েছি এবং ঠিক সময়ে ওদের ওপর আঘাত হানব। আমি মনে করি, আপনারাও খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের সৈন্যদল নিয়ে আমার সঙ্গে যোগ দেবেন।
আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, যেহেতু ডা. জাফরের পক্ষে চিকিৎসক হিসাবে আমাদের সঙ্গে যে কোনো সময় দেখা করা সম্ভব হবে এবং তাতে কেউ কিছু সন্দেহ করতে পারবে না। কাজেই তার মাধ্যমে আমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হবে। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় বৈঠক শেষ করে আমরা যার যার বাসায় ফিরে এলাম।’
এ দিনই ইয়াহিয়া খান টিক্কা খানকে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন। মূল অপারেশনাল পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়নের জন্য ১৮ মার্চ সকালে জিওসির কার্যালয়ে মেজর জেনারেল খাদিম রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি বৈঠকে বসেন। এ সময় সম্ভবত গণহত্যার পরিকল্পনা পাকা করা হয়।
২৫ মার্চ আলোচনা স্থগিত করে দিয়ে ইয়াহিয়া খান সোজা এয়ারপোর্টে চলে যান। গণহত্যার সবুজ সংকেত দিয়ে সোজা চলে যান করাচি। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান ও মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনও একই বিমানে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যার মধ্য দিয়ে তাদের কণ্ঠরোধ করার জন্য ৬ ডিভিশন সৈন্যকে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। করাচি বিমানবন্দরে পৌঁছে ইয়াহিয়া খান সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
সেখানে তিনি সাবলীলভাবে বলেন, ‘আল্লাহ পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে।’ ইয়াহিয়া খানের ঢাকা ত্যাগের খবর ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত সবাই এ সংবাদে একটি অশনিসংকেত দেখতে পেলেন। অনুমান করলেন আজ রাতেই বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
এ কে এম শাহনাওয়াজ : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
shahnawaz7b@gmail.com