মুক্তিযুদ্ধে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অবদান কে মনে রাখে!

একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মার্চ মাস মানেই স্বাধীনতার মাস। আনন্দ ও বেদনার এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে প্রতিবছর মার্চ মাস ফিরে আসে। এ মাসের প্রথম দিন থেকে জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন ঘটনাবলি নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন পরিবেশিত হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের সেসব অজানা কাহিনি যখন বিভিন্ন মিডিয়ায় পরিবেশিত হয়, তখন প্রশ্ন জাগে-যে দেশকে, যে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আমরা এত গর্ব করি, সেই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস আমরা কতটুকুই বা জানি।
এ দেশকে স্বাধীন করতে সেদিন যারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেসব অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কাহিনি আমরা কতটুকুই বা জানার চেষ্টা করি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক ব্যতিক্রম ঘটনা। ১৯৭১ সালে মাত্র নয় মাসের স্বাধীনতাযুদ্ধে ত্রিশ লাখ প্রাণ আত্মোৎসর্গ করেছিলেন।
পৃথিবীতে এত অল্প সময়ে এত বেশি প্রাণ উৎসর্গ একমাত্র বাঙালি জাতিই করেছে। জাতি-ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষ সেদিন স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করতে পারিনি। জাতি হিসাবে এর চেয়ে বড় দুর্বলতা আর কী আছে! জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বা জামুকা এ তালিকা তৈরির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। এত বছর পর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি এত সহজ কাজও নয়।
তবে যে পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, তাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধার নাম এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। সমাজে অবহেলিত এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন, যারা পদ্ধতিগত জটিলতার জন্য নিজেদের নাম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারছেন না।
ফলে, এসব মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্র কর্তৃক বরাদ্দকৃত সুযোগ-সুবিধা থেকে হচ্ছেন বঞ্চিত। দারিদ্র্যের কশাঘাতে থেকেও তাদের অনেকে বলেন, ‘কোনো সনদ বা কাগজের জন্য বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে এ দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। কী হবে ওই কাগুজে সনদ নিয়ে? কোনো স্বার্থ বা অর্থের লোভে তো মরণপণ সেই স্বাধীনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়িনি।’ অথচ ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে সমাজের উঁচু স্তরের ব্যক্তিরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েও রাষ্ট্রের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। নির্লোভ, দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধারা সমাজে আজও নিগৃহীত। তাদের অনেকে সমাজপতিদের দ্বারা বাস্তুচ্যুত হয়েও এ দেশের মাটি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন।
আগেই বলেছি, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে চুপচাপ বসে থাকতে পারেনি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যুবকরাও। মার্চের প্রথম থেকেই বাংলার সর্বস্তরের মানুষ ধীরে ধীরে যেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করে দিয়েছিল। প্রস্তুত হয়েছিল দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলো। রাজশাহী-দিনাজপুরের সাঁওতাল, ওরাঁও; ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, শেরপুর, নেত্রকোনা এলাকার গারো, হাজং, কোচ জনগোষ্ঠীগুলো থেকে কয়েক হাজার উপজাতি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।
সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলউড়া, বড়লেখা, চুনারুঘাট, মাধবপুর, বৈকণ্ঠপুর, গোয়াইনঘাট, সিলেট ও ফেঞ্চুগঞ্জের আনুমানিক ৮৩টি বাগানের উপজাতি জনগোষ্ঠী ও চা-শ্রমিক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে কমপক্ষে ৬০২ জন শহিদ হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন ৪৩ জন এবং মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছিল ৮৩ জনের। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমাসহ এমন হাজারও উপজাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এ দেশকে দখলদারমুক্ত করেছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের সেই অবদানকে আমরা অস্বীকার করি কী করে!
সমাজের নিপীড়িত এবং রাষ্ট্র কর্তৃক অবহেলিত এক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মহান বীর মুক্তিযোদ্ধার কথা আজ জানব। অন্য অনেকের মতো দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলাধীন হালজায় গ্রামের বিপন্ন আদিবাসী ‘কড়া সম্প্রদায়’-এর মানুষও সেদিন মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরবের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিল। বছর ঘুরে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস ফিরে আসে, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মধ্যে বেঁচে থাকা এ মহান মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কথা আমরা কতজনই বা স্মরণ করি।
বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এ ‘কড়া সম্প্রদায়’। এক সময় কড়া সম্প্রদায়ের হাজারও পরিবার বাস করত রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু কালের আবর্তে বাঙালি ভূমিদস্যুদের রোষানলে পড়ে বাস্তুভিটা হারিয়ে দারিদ্র্যের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে কড়া সম্প্রদায়ের মানুষ। ফলে ভাত-কাপড়ের অভাবে বাধ্য হয়েছে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ভারতে পাড়ি জমাতে।
বর্তমানে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার হালজায় কোনো রকমে টিকে আছে মাত্র ১৯টি পরিবার। এ দেশে এ সম্প্রদায়ের বসবাস শুরু হয় সেই ইংরেজ আমলে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কড়া সম্প্রদায়ের মানুষের পূর্ব নিবাস ছিল ভারতের বর্তমান ঝাড়খণ্ড জেলায়। কথিত আছে, কড়া জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষরা মাটি খোঁড়ার কাজে ছিল পারদর্শী। সে থেকেই নাকি সম্প্রদায়ের নাম হয়ে যায় কড়। ব্রিটিশ আমলে যখন পূর্ব বাংলায় রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়; এ রেলপথের মাটি কাটার কাজের সন্ধানে এসে তাদের পূর্বপুরুষরা এ দেশে বসবাস শুরু করে।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতা সংগ্রামের যখন সারা দেশ উত্তাল, সে সময় সাতান কড়া ও থোপাল কড়া দুই তরুণ স্বাধীনতা সংগ্রামে উজ্জীবিত হয়ে সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য একই এলাকার ইদ্রিস আলী, মজিবর, দেবেন ও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের জাসেফসহ গোপনে ভারতে পাড়ি দেন। ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরে অবস্থিত গঙ্গারামপুরের কাছে শিববাড়ি ইয়োথ ক্যাম্পে গিয়ে তারা হাজির হন।
শিববাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্পের প্রশিক্ষক হিসাবে তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন বাংলাদেশের দিনাজপুরের আরেক বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধা জর্জ দাশ। জর্জ দাশ তৎকালীন ইপিআরের অবসরপ্রাপ্ত একজন সদস্য। অস্ত্র প্রশিক্ষণে তিনি দক্ষ ছিলেন। সাতান ও থোপাল কড়া শিববাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর তাদের নিজ সম্প্রদায়ের বাবু কড়া, চিনু কড়া ও গোপাল কড়ার সঙ্গে দেখা হয়। গোপাল কড়া ছিলেন থোপাল কড়ার বড় ভাই। তারা সবাই জর্জ দাশের অধীন অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন।
প্রশিক্ষণ শেষে ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে অস্ত্র হাতে পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে দিনাজপুরের হামজাপুর এলাকা থেকে হিলি পর্যন্ত দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এর মধ্যে ঘুঘুডাঙ্গার স্কুল পাড়ার কাছে অ্যাম্বুশ উল্লেখযোগ্য। নভেম্বর মাসের শেষের দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি লজিস্টিক গাড়িবহরে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তারা একটি জিপ ও দুটো পিকআপ ভ্যান গাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেন। শুরু হয়ে যায় শত্রুপক্ষের সঙ্গে তুমুল লড়াই।০ পাকিস্তানিরা পালটা অ্যাম্বুশ করলে গোপাল কড়া, বাবু কড়া ও অলি মিয়া শহিদ হন। পাকিস্তানিদের পক্ষেও তিনটি গাড়িসহ লোকবলের অনেক ক্ষতি হয়।
যুদ্ধে অংশ নিয়ে সাতান ও থোপাল কড়ার মতো এমন অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নিঃস্বার্থ অবদান রাখলেও রাষ্ট্র তাদের দীর্ঘদিন মনে রাখেনি। এসব বীর যোদ্ধা বরাবরই লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে গেছেন। মুক্তিযোদ্ধার সনদ সংগ্রহের জটিল সমীকরণ তাদের বোধগম্য নয় বলে সনদ পাওয়ার চেষ্টাও করেননি। মুক্তিযুদ্ধের পরপর জেনারেল ওসমানী স্বাক্ষরিত যে সনদ তারা পেয়েছিলেন, অযত্ন ও অবহেলায় তা-ও খোয়া গেছে।
১৯৮৮ সালে দেশব্যাপী ভয়াবহ বন্যার পানির সঙ্গে তাদের সেই সনদপত্রও ভেসে গেছে। শুধু কি তাই, ক্ষমতাভোগী সমাজের কিছু চিহ্নিত ভূমিদস্যু স্বাধীনতাযুদ্ধের এ বীর সন্তানদের বাস্তুচ্যুত করে জবরদখল করে তাদের কয়েক একর ফসলি জমিসহ বসতবাড়ি কেড়ে নেয়। মুক্তিযোদ্ধা সাতান ও থোপালরা হয়ে যান সহায়-সম্বলহীন নিঃস্ব। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সন্তানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা তখন দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। যাওয়ার মুহূর্তে সন্তানরা তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও এদেশ ছেড়ে চলে যেতে রাজি হননি একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সাতান কড়া।
রাষ্ট্র ও সমাজের শতবঞ্চনা ও অবহেলা সহ্য করে সাতান কড়া মাটি কামড়ে পড়ে রইলেন এদেশে। বাস্তুচ্যুত থোপাল ও সাতান কড়া প্রভাবশালী সব মহলের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। প্রশাসন কিংবা ক্ষমতাসীন জনপ্রতিনিধিদের কেউ তখন তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। সনদবিহীন এ মুক্তিযোদ্ধাদের যখন জিজ্ঞেস করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সনদ তো নেই, এখন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করবেন কী করে? সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধাই বা ভোগ করবেন কীভাবে?
এক সময়ের ৩৬ একর জমির মালিক সাতান কড়া, ভূমিখোরদের দ্বারা সর্বস্বান্ত হয়েও প্রত্যুত্তরে যখন বলেন, ‘দেশ থেতুর হাম স্বাধীন করোইয়ে, হামার নিজের থেতুল স্বাধীন নাহি করোইয়ে’, অর্থাৎ ‘নিজের জন্য নয়, দেশের জন্য স্বাধীনতা এনেছি’; তখন মনে হয়, শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে অর্জিত এ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বোধহয় এমনই হয়। এমন হাজার হাজার অসহায় মুক্তিযোদ্ধা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। তাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং পুনর্বাসনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, আমাদের জানা নেই।
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত করার সময় জামুকা এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না, জানি না। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত এসব মানুষের কাছে মুক্তিযোদ্ধা সনদপ্রাপ্তির ফরম পূরণ করা এক দুরূহ কাজ, ফরমের চাহিদা অনুযায়ী নানা প্রমাণ জোগাড় করাও তাদের কাছে জটিল বিষয়।
স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পর এসব প্রমাণ হাজির করাও কষ্টসাধ্য। মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রমাণের জন্য ‘লাল বই’-এ তাদের নাম আছে কি না-জিজ্ঞেস করে জানা যায়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এ মুক্তিযোদ্ধারা এ ‘লাল বই’ সম্পর্কেও অজ্ঞ। তা ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি, তাদের সন্তুষ্টি করতে না পারলে তালিকাভুক্তির কাগজপত্র উপরে পাঠানো হয় না ইত্যাদি। দেখা গেছে, এ সবকিছু মিলিয়েই সমাজে পিছিয়ে পড়া অনেক মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র পাওয়ার বিষয়ে হতাশ।
শুধু সাতান কিংবা থোপাল কড়াই নয়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের এমন হাজারও সাতান ও থোপাল কড়া কাগুজে সনদের অভাবে রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তারপরও ‘দিন আনতে পান্তা ফুরায় জীবন’ নিয়ে আজও তারা স্বাধীনতাকে বুকে ধারণ করে বেঁচে আছেন। ‘কাকে খেতাব দেওয়া হলো বা কার খেতাব কেড়ে নেওয়া হলো’ তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে এতটুকু বোঝেন, যে দেশ ও মাটির জন্য তারা একদিন জীবন বিপন্ন করে লড়াই করেছিলেন, সে দেশের কিছু মানুষ তাদের পায়ের নিচের মাটি কেড়ে নিয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশ ছাড়া করেছে; তাদের বোধহয় এভাবেই লড়াই করেই বেঁচে থাকতে হবে!
আমার বিশ্বাস, জামুকা এ বিষয়গুলো নিশ্চয়ই গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে। দুঃখ, কষ্ট, অভিমান কিংবা পদ্ধতিগত কারণে তারা জামুকা পর্যন্ত পৌঁছতে না পারলেও এমন কোনো ব্যবস্থা কি নেওয়া যায় না যে, জামুকা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছায়? তাতে পদ্ধতিগত কোনো পরিবর্তন করার প্রয়োজন যদি অনুভূত হয়, তাহলে সে পদক্ষেপ তারা নিতেই পারেন। যেহেতু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করাই জামুকার মূল কাজ। কাজেই অন্য কোনো কাজে অধিক মনোনিবেশ না করে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেক মুক্তিযোদ্ধা যাতে তালিকাভুক্ত হতে পারেন-সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই তারা গ্রহণ করবেন আশা করি।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা