Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইয়াহিয়ার প্রহসনমূলক বৈঠক

Icon

একেএম শামসুদ্দিন

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইয়াহিয়ার প্রহসনমূলক বৈঠক

পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করলে প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সমগ্র বাঙালি জাতি এবং অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠে গোটা ঢাকা শহর। অতি দ্রুত দেশজুড়ে তখন একটার পর একটা ঘটনা ঘটে যেতে থাকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে লাগাতার ধর্মঘট আহ্বান করে বললেন, ৭ মার্চ রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে জনসভায় তিনি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

জাতীয় সংসদ অধিবেশন স্থগিতের পর বাঙালি জাতি বুঝে গিয়েছিল, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কিছুতেই বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের শাসনভার হস্তান্তর করবে না।

বাঙালির এ আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না- তা সামরিক জান্তাদের আচরণে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে থাকে। আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ে বিস্ময়ের ঘোর কেটে যেতেই ক্ষমতা হস্তান্তর না করার পাঁয়তারা কষতে থাকে সামরিক জান্তারা।

২০ ডিসেম্বর জুলফিকার আলী ভুট্টো লাহোরে এক জনসভায় ঘোষণা দিলেন, ‘পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় আসনে বসতে রাজি নয়। চতুর সামরিক জান্তা ভুট্টোর এ ক্ষমতালিপ্সাকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার চক্রান্তে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

ভুট্টোর এ ঘোষণাকে ইয়াহিয়া খান দেশের জন্য এক বিরাট রাজনৈতিক সংকট হিসেবে গণ্য করেন এবং এ সংকটের সমাধান ও ক্ষমতা হস্তান্তরের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ১২ জানুয়ারি ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন।

নির্বাচনে একক সংখ্যাগোরিষ্ঠ দল হিসেবে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংবিধান রচনা করবে- এটিই স্বাভাবিক। সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ শেখ মুজিব ঘোষিত ৬ দফার আলোকেই যে সেই সংবিধান রচনা করবে- পাকিস্তানিরা বরাবরই সে আশঙ্কা করে আসছিল।

অপরদিকে ভুট্টো পিপিপি’কে সংবিধান প্রণয়নে অংশী হিসেবে রাখার জন্য গোঁ ধরলে বঙ্গবন্ধু দৃঢ়কণ্ঠে তাকে জানিয়ে দেন, সংবিধান প্রণয়নে আওয়ামী লীগের কোনো পার্টির কাছ থেকে সাহায্যের দরকার নেই।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানও মনে করতেন, বঙ্গবন্ধু ও তার দল পাকিস্তানের সংবিধান ৬ দফার আলোকেই প্রণয়ন করবেন। এ বিষয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ইয়াহিয়া-গঠিত তিন সদস্যের কমিটির অন্যতম সদস্য ড. জি ডব্লিউ চৌধুরী তার ‘দ্য লাস্ট ডেজ অব ইউনাইটেড পাকিস্তান’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘১২ জানুয়ারি ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনায় বসে আওয়ামী লীগ প্রণীত নতুন শাসনতন্ত্রের একটি খসড়া তাকে দেখাতে বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করেন।

বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক তার অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে একমাত্র তারই (বঙ্গবন্ধু) দায়িত্ব নতুন শাসনতন্ত্র রচনা করা, অন্য কারও নয়। তিনি আরও বলেন, দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইয়াহিয়ার এখন একমাত্র কাজ হল- অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকা।

বঙ্গবন্ধু তাকে হুশিয়ার করে বলেন, ইয়াহিয়া যদি তা করতে ব্যর্থ হন তাহলে ভবিষ্যৎ পরিণতির জন্য তাকে ভুগতে হবে। বঙ্গবন্ধুর কথায় ইয়াহিয়া কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও শিগগিরই জাতীয় পরিষদ অধিবেশনের তারিখ ঘোষণা করবেন বলে বঙ্গবন্ধুকে আশ্বাস দেন। বঙ্গবন্ধুর এ দৃঢ় অবস্থানকে ইয়াহিয়া কখনও ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেননি।

ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক শেষে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যান এবং বুনো হাঁস শিকারের নাম করে ভুট্টোর লারকানার বাড়িতে গিয়ে এক ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠকে যোগ দেন।

সে বৈঠকে ভুট্টো ছাড়াও পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ খান ও প্রেসিডেন্টের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদাও উপস্থিত ছিলেন। লারকানার সে গোপন বৈঠকেই চূড়ান্ত হয়ে যায় আওয়ামী লীগের কাছে সামরিক সরকার কখনও ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না।

১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাওয়ালপিন্ডির পাকিস্তান সেনাবাহিনী সদর দফতরে সামরিক জান্তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসে। বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান, জেনারেল পীরজাদাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জেনারেলরা উপস্থিত ছিলেন।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খাঁন ও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার উপপ্রধান এসএ রিজভিও সে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা হবে।

সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের পাশাপাশি ‘অপারেশন ব্লিৎজ’ নামে সামরিক আঘাত হানার একটি পরিকল্পনা করা হয়। ‘অপারেশন ব্লিৎজ’ মানে সব রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ করে সামরিক আইন জারি করা। প্রয়োজনে সশস্ত্রবাহিনী রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারবে।

তাতেও যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে সেনাবাহিনী চূড়ান্ত অ্যাকশনে যাবে, যা আমরা ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে বাস্তবায়ন হতে দেখেছি।

সিদ্ধান্ত হয়, পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এসএম আহসানকে অপসারণ করে ‘বেলুচিস্তানের কসাই’খ্যাত লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে উভয় পদে বসান হবে। সিদ্ধান্ত হয়, তাদের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরও দুই ডিভিশন সৈন্য পূর্ব পাকিস্তানে পাঠান হবে।

ফেব্রুয়ারির শেষদিকে জেনারেল ইয়াকুব ও গভর্নর আহসান রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। সাক্ষাৎ শেষে ফিরে এসে ২৬ ফেব্রুয়ারি জেনারেল ইয়াকুব পূর্ব পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ সব সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে বসেন।

বৈঠকে তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। অতএব খুব কম সময়ের নোটিশে ‘অপারেশন ব্লিৎজ’ শুরু করা যায়- সে জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি যেন গ্রহণ করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের বিভিন্ন মহাকুমা ও জেলা পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের প্রেরণ করা হয়।

কিন্তু ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণার পর ঘণ্টায় ঘণ্টায় এত দ্রুত পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছিল, সামরিক জান্তারা ‘অপারেশন ব্লিৎজ’ শুরু করার সাহস পেলেন না। বঙ্গবন্ধুর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এবং জনগণের ঢল জান্তাদের ভিতকে নাড়িয়ে দেয়।

এমতাবস্থায় ঢাকা থেকে রাওয়ালপিন্ডিকে জানিয়ে দেয়া হল- এ পরিস্থিতিতে অপারেশন ব্লিৎজ শুরু করাটা নিছক পাগলামি হবে। শুধু সামরিক ব্যবস্থা দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না। এ সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করা সমীচীন হবে।

ইয়াহিয়া শেষ পর্যন্ত সে পথেই হাঁটলেন, তবে রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান করার উদ্দেশ্যে নয়- বরং পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে সামরিক আঘাত হানার জন্য সময় ক্ষেপণের উদ্দেশ্যে।

ইয়াহিয়াসহ সামরিক জান্তারা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জনগণের উদ্দেশ্যে কী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ৬ মার্চ ইয়াহিয়া এক ঘোষণায় ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন বসার তারিখ পুনঃনির্ধারণ করেন এবং সেদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুকে টেলিফোন করে জনগণকে দেয়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিশ্রুতির পূর্ণ মর্যাদা রক্ষা করবেন বলে তিনি কথা দেন।

অপরদিকে জেনারেল খাদিম ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলে ঢাকাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। জেনারেল খাদিম তার ‘এ স্ট্রেনজার ইন মাই ওউন কান্ট্রি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘তার ভাষণের সময় আমি আগ্নেয়াস্ত্র ও ট্যাঙ্কবহরসহ আমার বাহিনী নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে প্রস্তুত থাকব।

শেখ মুজিব যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বসেন তাহলে আমি আমার অধীনস্থ সব শক্তিকে মার্চ করিয়ে দেব এবং যদি দরকার হয় ঢাকাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেব।’ তার এ পরিকল্পনা তিনি লোক মারফত বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছেও দেন।

এত হুমকি ও প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি যদি নাও থাকেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে শত্র“র মোকাবেলা করার নির্দেশও দেন। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সে ভাষণ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত আহ্বান।

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বঙ্গবন্ধুর হাতে চলে আসে। বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি হয়ে ওঠে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু।

এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সামরিক বাহিনী তখনও প্রস্তুত ছিল না। এরই মধ্যে জেনারেল টিক্কা খান, জেনারেল ইয়াকুব ও অ্যাডমিরাল আহসানের স্থলাভিষিক্ত হলেন। অর্থাৎ তিনি একাই ইস্টার্ন কমান্ড এবং গভর্নরের দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন।

রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নাম করে মার্চের ১৫ তারিখ ইয়াহিয়া ঢাকা আসেন। ঢাকায় পৌঁছে পরদিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা শুরুর আগেই তিনি সেদিন সন্ধ্যায় ক্যান্টনমেন্ট সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সামরিক অভিযান নিয়ে আলোচনার জন্য এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন।

সে বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানের কমান্ডার অব দি এয়ারফোর্স এয়ার কমোডর মাসুদ সমস্যার সমাধানে সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন। তাতে প্রেসিডেন্ট এতই অসন্তুষ্ট হন যে, বক্তব্যের মাঝখানে তিনি তাকে থামিয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে মিটিং শেষ করে দেন। এর জন্য অবশ্য কমোডর মাসুদকে পরে খেসারত দিতে হয়েছে। এ ঘটনার দিনকয়েকের মধ্যে তাকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

১৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনায় বসলেও দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে সামরিক অভিযানের পূর্ণ প্রস্তুতি চলতে থাকে। ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় টিক্কা খান ১৪ ডিভিশনের জিওসি জেনারেল খাদিম ও গভর্নরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমানকে একসঙ্গে ডেকে নিয়ে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে পরদিন তার সঙ্গে আলোচনা করতে বলেন।

১৮ মার্চ সকালে জেনারেল খাদিম ও রাও ফরমান অভিযানের লিখিত পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেন। ফরমান ঢাকা শহরের এবং খাদিম দেশের বাকি অংশের অভিযান পরিকল্পনা তৈরি করে পরদিন জমা দিলে বিনা বাক্যব্যয়ে তা গ্রহণ হয়ে যায়।

সামরিক অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট।’ পরিকল্পনা অনুমোদনের পর খাদিম ও রাও ফরমান দেশের বিভিন্ন গ্যারিসনে পরিকল্পনার লিখিত কপি যতদ্রুত সম্ভব পৌঁছে দেন।

ওদিকে ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রহসনের বৈঠক চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৬ মার্চের পর আলোচনায় তেমন অগ্রগতি না হলেও ২০ মার্চের বৈঠকে আওয়ামী লীগের দেয়া তিনটি মৌলিক বিষয় প্রেসিডেন্টের ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়- (১) সামরিক আইন প্রত্যাহার (২) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং (৩) পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ব্যাপকভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন।

ইত্যবসরে ২১ মার্চ জুলফিকার আলী ভুট্টো আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য ঢাকা এসে পৌঁছান। প্রস্তাব-পাল্টা প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে তখন সময়ক্ষেপণ হতে থাকে। ২৩ মার্চ ইয়াহিয়ার অর্থ উপদেষ্টা এমএম আহমেদ ২০ মার্চের গৃহীত প্রস্তাবনায় একের পর সংশোধনী এনে আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করেন।

ফলে সেদিন কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। পরবর্তী দুদিনও তারা নানা টালবাহানা করে সময় কাটিয়ে দেন। তবে প্রেসিডেন্টের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার জেনারেল পীরজাদা ২৫ মার্চ কোনো একসময় ড. কামাল হোসেনকে প্রেসিডেন্টের ঘোষণাসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের কথা টেলিফোনে জানিয়ে দেবেন বললেও সে টেলিফোন আর কোনোদিন আসেনি।

অথচ জেনারেল পীরজাদা টেলিফোনে ড. কামালকে জানিয়ে দিবেন বলে যখন কথা দেন তার কয়েকঘণ্টা আগেই ২৪ মার্চ বেলা ১১টায় মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করেন।

অতঃপর ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় জেনারেল ইয়াহিয়া কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপিসারে ঢাকা ত্যাগ করেন। পেছনে রেখে যান এক দঙ্গল হিংস নরপিশাচ, যারা তার পাকিস্তানের পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে, রাত এগারোটার পর ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম