
প্রিন্ট: ০১ মে ২০২৫, ০২:০১ পিএম
যে কারণে ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল উহান

শুলি রেন
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
চীনের সবচেয়ে সুখী শহর বর্তমানে তেমন একটা সুখে নেই। নিজেকে ফিনিক্স পাখির চীনা সংস্করণ হিসেবে পরিচিতি করে তোলা উহান শহর বর্তমানে সার্সের মতো একটি ভাইরাসের কেন্দ্রবিন্দু, যে ভাইরাস হাজারও মানুষকে অসুস্থ করে ফেলেছে।
এমন প্রশ্ন তোলা যথেষ্ট যৌক্তিক যে, বেইজিং ও সাংহাইয়ের মতো মেগাসিটিগুলোর বদলে কেন এ অসুখটির প্রাদুর্ভাব সমতল ভূখণ্ডের প্রযুক্তির এমন একটি বড় কেন্দ্র থেকে হল- যেটি নতুনভাবে গড়ে উঠছে এবং তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান কর্মস্থল হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে।
উহান হচ্ছে অভিবাসীদের একটি শহর। এটি হচ্ছে চীনের সবচেয়ে মর্যাদাবান প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি- হুয়াঝং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শহর। শহরটির জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, যা বেইজিং ও সাংহাই থেকে ৩ শতাংশ বেশি।
২০১৮ সালে শহরটিতে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস করেছে, যা উহানকে নিউইয়র্ক থেকে ২৫ শতাংশ বড় বানিয়েছে; কিন্তু এ জনসংখ্যার মাত্র ৮ লাখ ৮০ হাজার মানুষ হলেন স্থায়ী বাসিন্দা।
এ কারণে উহানে বাস করা লাখো মানুষ শনিবার শুরু হওয়া নতুন চন্দ্রবর্ষ উপলক্ষে ভ্রমণ করছেন বিভিন্ন স্থানে। গত বছরের উৎসবের সময় শহরটির প্রধান রেলস্টেশন- যেটি করোনাভাইরাসের আবির্ভাবস্থল সামুদ্রিক খাদ্য বাজার থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত- ৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে আতিথেয়তা দিয়েছে।
চীন যখন বৃহস্পতিবার উহান থেকে সব ধরনের ট্রেন ও বিমানের ফ্লাইট বাতিল করে, তার আগেই সম্ভবত বেশিরভাগ মানুষ সেখান থেকে ভ্রমণের কাজটি সেরে ফেলেছেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শীতকালীন ছুটি ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে।
নিুমানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা : উহান সতর্কভাবে নিজেকে ‘শেনঝেনের বিকল্প’ হিসেবে খ্যাতিমান করে তুলে ধরছে। শহরটির সর্বশেষ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১০ লাখ কলেজ গ্রাজুয়েট ধরে রাখার টার্গেট রাখা হয়েছে এর হুকোউ পদ্ধতি শিথিল করার মাধ্যমে।
যে পদ্ধতিটি গ্রিনকার্ডের সমতুল্য এবং এটি যাদের রয়েছে তাদের সরকারি স্কুলের শিক্ষাপ্রাপ্তির মতো সামাজিক সেবাগুলো পাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। ২০১৬ সালে ২ কোটি ১০ লাখ ভ্রমণকারী উহান শহরের বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে এবং নতুন একটি টার্মিনাল তৈরি করা হচ্ছে যাতে ৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে সেবা দেয়া যায়। ২০০৩ সালে সার্স মহামারীর রূপ নেয়ার পর থেকে চীনা সমাজ অনেক বেশি চলমান হয়েছে।
তবে এজন্য অতিমাত্রায় শ্রমিক অভিবাসনকে দোষ দেয়া যায় না। একটি নগরী আকারে অনেক বিস্তৃত হতে পারে; কিন্তু তাতে মৌলিক জনসেবাগুলোও তো অবশ্যই রাখতে হবে। উহানের বার্ষিক ব্যয়ের দিকে একটু নজর দিন। যেখানে প্রযুক্তি গবেষণার মতো নগদ লাভের ক্ষেত্রগুলোতে অর্থের বরাদ্দ ও খরচ উপচে পড়ছে, সেখানে জনস্বাস্থ্যের মতো বিষয়ে খরচের বিষয়টি স্থবির হয়ে আছে। যেমন- গত বছরের জুন মাসে উহানের বাসিন্দারা সামুদ্রিক খাবারের বাজারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মান সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলেন; কিন্তু নগর কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি।
যেখানে বেইজিং ও সাংহাইও বহুসংখ্যক অভিবাসীকে স্থান দিচ্ছে, আতিথেয়তা দিচ্ছে, সেখানে একইসঙ্গে ওই দুই শহর স্বাস্থ্য খাতে অনেক বেশি ব্যয়ও করছে। শ্রমিক প্রবাহে অনেক বেশি বিধিনিষেধ ও কড়াকড়ি আরোপের কারণে জনসংখ্যাও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।
বিদেশি পশুর মাংসের স্বাদগ্রহণ : এটি সত্য, অর্থনীতি কিছুটা মন্দার মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থের বরাদ্দ নিয়ে একটু টানাটানি চলছে, বিশেষত গত বছরের ৩০০ বিলিয়ন ডলার কর ছাড়ের কারণে। ফলে আমলাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে জনস্বাস্থ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রের অর্থ মঞ্জুরি করার সময়। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাবেক ‘মেইড ইন চায়না ২০২৫’ প্রকল্প অন্যগুলোর বাড়বাড়ন্ত দৃশ্যকে সংকুচিত করে দিয়েছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রলোভনের বিষয় হল, স্থানীয় কর্মকর্তারা চীনের শিল্পসংক্রান্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আঁকড়ে ধরেছেন। ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে এটি অনেক বেশি সহজ অতীতের একটি বিষয় সমাধান করার চেয়ে। সর্বোপরি, শতাব্দীর পর শতাব্দী চীনাদের মধ্যে বিদেশি পশুর মাংসের স্বাদগ্রহণের অভ্যাস রয়েছে; কেন আমাদের এখন কাঁচাবাজারের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হতে হবে? যতক্ষণ এ মানসিকতা নির্মূল করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কেবল আরও বেশি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রত্যাশাই করতে পারি।
ব্লুমবার্গ থেকে ভাষান্তর : সাইফুল ইসলাম
শুলি রেন : এশিয়ার বাজারবিষয়ক ব্লুমবার্গের কলামিস্ট