Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

বাংলাদেশে স্বাধীন বুদ্ধিজীবীর স্থান কোথায়!

Icon

ড. মাহবুব উল্লাহ্

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে স্বাধীন বুদ্ধিজীবীর স্থান কোথায়!

বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী শ্রেণি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাকে বুদ্ধিজীবী বলে চিহ্নিত করার কথা, তাকে সেভাবে চিহ্নিত করা হয় না। অর্থাৎ খাঁটি বুদ্ধিজীবী বলতে যা বোঝায় তা আমাদের সমাজে একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এখনও বুদ্ধিজীবী আছে বটে, তবে তারা কেউ দলান্ধ বুদ্ধিজীবী অথবা মতলববাজ বুদ্ধিজীবী অথবা তোষামোদকারী বুদ্ধিজীবী অথবা সরকারপন্থী বুদ্ধিজীবী অথবা সরকারবিরোধী বুদ্ধিজীবী অথবা আদর্শহীন বুদ্ধিজীবী অথবা আদর্শবাদী বুদ্ধিজীবী। সর্বশেষ যে ধরনের বুদ্ধিজীবীর কথা বলা হয়েছে সে ধরনের বুদ্ধিজীবী এখন খুঁজে পাওয়া কঠিন।

পাকিস্তান আমলে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নমস্য, পূজনীয় এবং শ্রদ্ধার পাত্র। পাকিস্তানের ২৩ বছরে বুদ্ধিজীবীরা ফন্দিফিকির অথবা মোসাহেবিতে লিপ্ত ছিল না এমন নয়। তাদের অনেকে পাঠ্যপুস্তক লিখতেন। সেসব পাঠ্যপুস্তক স্কুল-কলেজের পাঠ্য তালিকায় অনুমোদন করিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে ঘুরঘুর করতেন।

প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বুদ্ধিজীবীদের রাষ্ট্রীয় মতাদর্শের সেবায় ব্যবহারের জন্য ব্যুরো অব ন্যাশনাল রিকন্সট্রাকশন (বিএনআর) এবং পাকিস্তান কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন এবং রাইটার্স গিল্ড গঠন করেছিলেন। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কেবল দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবীরা জড়িত ছিলেন এমন নয়। বাংলাদেশোত্তরকালে যারা প্রগতিবাদী হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন, তাদের অনেকেই যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।

এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হলে সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করার জন্য আর্থিক সহায়তা পাওয়া যেত। বুদ্ধিজীবীদের একটি স্বাভাবিক দুর্বলতা হল গবেষণা করার আকাঙ্ক্ষা এবং সেই গবেষণাপত্র প্রকাশনারও আকাঙ্ক্ষা। এর জন্য অর্থের প্রয়োজন।

বুদ্ধিজীবীদের নিজস্ব অর্থ থাকে না বলে তাদের গবেষণা ও প্রকাশনার জন্য অন্যের কৃপা প্রার্থনা করতে হতো। প্রচুর মেধা থাকা সত্ত্বেও কোনো বুদ্ধিজীবী যদি অর্থাভাবের ফলে গবেষণা করতে না পারেন, কিংবা কষ্টেসৃষ্টে গবেষণাটি শেষ করলেও অর্থাভাবে পাবলিশ করতে না পারেন, তাহলে তার দুঃখবোধের অন্ত থাকে না।

পাকিস্তান আমলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চতর গবেষণার জন্য, বিশেষ করে পিএইচডি গবেষণার জন্য সরকারি বৃত্তি প্রদান করা হতো। প্রায়ই দেখা যেত গবেষণার বিষয়টির সঙ্গে মুসলিম শব্দটি জুড়ে দেয়া হয়েছে। গবেষণায় মুসলমানদের কোনো গৌরবের দিক উদ্ঘাটিত হোক বা না হোক, মুসলিম শব্দটি জড়িত থাকলে সহজেই বৃত্তি মঞ্জুর হয়ে যেত। কারণ পাকিস্তানি ভাবাদর্শের সঙ্গে মুসলিম শব্দটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার কিছু কিছু ছাত্রকে পিএইচডি করার জন্য ব্রিটেনে বৃত্তি দিয়ে পাঠাত। আমি এমন একজনকে জানি যিনি ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে মুক্তিযুদ্ধের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে প্রচণ্ড আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন এমন ভাব করেন। এই ‘মহান’ ব্যক্তিটি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে লন্ডনের একটি ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য কাজ করছিলেন। ’৭১-এর সেই উত্তাল সময়ে প্রবাসী ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশের মুক্তি-সংগ্রামের সমর্থনে বিদেশের রাজপথে নামেননি এমন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।

তবে পাকিস্তান সরকারের বৃত্তিপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তিটিকে তার বন্ধু-বান্ধবরা শত চেষ্টা করেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং পাকিস্তানি গণহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে রাজপথে মিছিলে নামাতে পারেননি। যখনই বন্ধু-বান্ধবরা মিছিলে যাওয়ার জন্য তাকে চাপ দিতেন তখনই তিনি বলতেন, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা জেনে যাবে এবং আমার বৃত্তিটি বাতিল হয়ে যাবে। একদিনের জন্যও এ ‘মহাপুরুষটি’ ব্রিটেনের মাটিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দাঁড়াননি। হ্যাঁ, আরেক শ্রেণির মানুষ ছিল যারা নীতিগতভাবে ও আদর্শগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। তাদের কথা আলাদা।

লেখার আবিষ্কারেরও একটি ইতিহাস আছে। লেখার আবিষ্কারের আগে সমাজে কি কোনো বুদ্ধিজীবী ছিল? উত্তর হল, কদাচিৎ। সবসময় সমাজে শামান, যাজক, মেজাই, পুরোহিতসহ বিভিন্ন ধরনের সেবক শ্রেণির একটি ভূমিকা ছিল। আজকাল আমরা যাদের আর্টিস্ট বা শিল্পী বলি তাদেরও একটি ভূমিকা ছিল। কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়ায়, লেখার আবিষ্কার কিংবা সংখ্যার আবিষ্কারের আগে কীভাবে বুদ্ধিজীবীর অস্তিত্ব থাকতে পারে।

লেখা ও সংখ্যাকে ব্যবহার করে কোনো রকম স্বার্থগোষ্ঠীর সেবা করার সুযোগ না থাকলে বুদ্ধিজীবীর অস্তিত্ব কীভাবে থাকতে পারে। শুধু বিশেষ স্বার্থের সেবা করা নয়, লিখিত বস্তুর মধ্যে কী আছে তা বুঝতে পারা, ব্যাখ্যা করা, শেখা এবং তাকে সংরক্ষণ করা- সবই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ। আধুনিক যুগে যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশাল উন্নতি হয়েছে। কম্পিউটারের সাহায্যে অকল্পনীয় হিসাব-নিকাশ করা সম্ভব।

কম্পিউটার শুধু হিসাব-নিকাশই করে না, অনেক কিছু তার মেমোরিতে ধারণ করে রাখে। এসব আবিষ্কারের আগে এ ধরনের সক্ষমতা যাদের ছিল তারা সংখ্যায় ছিল খুবই নগণ্য। মেসোপটেমিয়াতে সর্বপ্রথম যখন কৃষিকর্মের সূচনা হয়, তখন তার পাশাপাশি কিছু লিখিয়েরও উদ্ভব হয়। এরা সে সময় যাজকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল এবং তারা শাসনকার্যও পরিচালনা করত। কিন্তু তাদের শাসনকর্ম ধর্মগুরুর কর্ম বলে গণ্য করা হতো।

ঊনবিংশ বা বিংশ শতাব্দীতে লেখাপড়া যখন ব্যাপকসংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল, তখন থেকে মুষ্টিমেয় লেখাপড়া জানা মানুষের একচেটিয়া ক্ষমতাও বিলুপ্ত হতে শুরু করল। একটা সময় ছিল যখন লিখতে জানা মানুষের প্রচণ্ড কদর ছিল। সাধারণ মানুষ তাদের মান্য করত। শত বছর আগের কথা বলব না, আমার ছোটবেলায় দেখেছি আমার পিতার অধীনে যেসব চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিল, তারা লিখতে-পড়তে জানত না। মাসের শেষে বেতনের রেজিস্ট্রি খাতায় তারা খুব কষ্ট করে নাম সই করত। দুয়েকজন সেই কাজটিও পারত না।

তারা টিপসই দিত। এ কর্মচারীরা মাঝে মাঝে আমার প্রাইমারি পড়া বিদ্যার ব্যবহার করেছে। তাদের কোনো আপনজন চিঠি লিখলে তা তাদের পড়ে শোনাতে হতো। আবার তারা আপনজনকে যখন চিঠি পাঠাতে চাইত, তখন আমার শরণাপন্ন হতো চিঠি লিখে দেয়ার জন্য। এ থেকে কি আমরা বুঝতে পারি না, যে বা যারা লিখতে পারে, পড়তে পারে তাদের ক্ষমতা ও শক্তি যারা লিখতে-পড়তে জানে না তাদের চেয়ে কতগুণ বেশি?

আমরা অনেকেই শৈশব থেকে একটি আপ্তবাক্যের সঙ্গে পরিচিত। বাক্যটি হল, অসির চেয়ে মসি অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু ইতিহাসবিদদের অনেকেই এ মতের সঙ্গে একমত পোষণ করেন না। যোদ্ধারা লেখকদের জয় করে নিয়েছেন এমন বহু দৃষ্টান্ত ইতিহাসে আছে। কিন্তু এ লিখিয়েদের ছাড়া রাজনীতি হয় না, বৃহত্তর অর্থনীতিও হয় না। একটু কমিয়ে বলতে গেলে, বৃহৎ ঐতিহাসিক সাম্রাজ্যও হয় না।

শিক্ষিত ব্যক্তিরা সাম্রাজ্যকে সংহত রাখার জন্য মতাদর্শের জোগান দিয়েছেন এবং প্রশাসনের জন্য ক্যাডারের সরবরাহ করেছেন। চীনে এ ধরনের ব্যক্তিরাই মোঙ্গল বিজয়ীদের রাজবংশ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে। অপরদিকে তৈমুর লং ও চেঙ্গিস খানের সাম্রাজ্য লেখাপড়া জানা মানুষের সহায়তা না পাওয়ার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে।

শিক্ষার ক্ষেত্রে যারা একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছেন, তারাই হলেন সব ধরনের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অর্গানিক বুদ্ধিজীবী। অর্গানিক বুদ্ধিজীবী বা Organic Intellectual-এর ধারণাটি দিয়েছেন অ্যান্টোনিও গ্রামসি। এসব অতীতের কথা। মধ্যযুগে আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষিত, সাধারণ শিক্ষিত শ্রেণির উদ্ভব তাদের সামাজিক ভূমিকার সঙ্গে কম ঘনিষ্ঠ ছিল।

তাদের আবেদন ছিল সাহিত্যসহ অন্যান্য যোগাযোগের বিষয়ে উৎপাদনকারী ও ভোক্তার ভূমিকা পালন করা। তবে এসব সাহিত্য-শিল্প সাধারণ মানুষের ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচার পেত। আধুনিক ভূ-খণ্ডগত রাষ্ট্রের উদ্ভবের পর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ক্রমবর্ধমান কর্মকর্তার চাহিদা সৃষ্টি হল। এরাই হল আধুনিক রাষ্ট্রের অর্গানিক বুদ্ধিজীবী।

এরা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করে। এরা যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে, সেগুলোর শিক্ষকরাও আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা। অপরদিকে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার বিশাল প্রসার ঘটেছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর। এই একই সময়ে মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষারও প্রসার ঘটেছে।

ফলে লেখাপড়া জানা এবং বুদ্ধিবৃত্তির জ্ঞানে শিক্ষিত লোকের একটি বিশাল বাহিনী তৈরি হয়েছে, যা অতীতে এমনটি ছিল না। সর্বোপরি বিংশ শতাব্দীতে নতুন গণমাধ্যম শিল্প গড়ে ওঠার ফলে সরাসরি সরকারি কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত না হয়েও বুদ্ধিজীবীদের অর্থনৈতিক রুজি-রোজগারের বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত পাশ্চাত্যে এ দলটি ছিল খুব ক্ষুদ্র। ১৯৪৮ সালের বিপ্লবগুলোয় যে ছাত্ররা প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, প্রুশিয়ায় তাদের সংখ্যা ছিল মাত্র চার হাজার। তাদের মধ্যে কোনো ছাত্রী ছিল না। সমগ্র হ্যাপ্সবার্গ সাম্রাজ্যে এ রকম ছাত্রের সংখ্যা ছিল মাত্র সাত হাজার। এদের বলা হতো স্বাধীন বুদ্ধিজীবী।

এদের গোষ্ঠীটি শুধু তাদের মধ্যেই সীমিত ছিল না, যারা শাসক শ্রেণির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জ্ঞানের অংশীদার ছিল। তাদের মধ্যে এমন এক ধরনের সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা দেখা দিতে শুরু করেছিল, যাকে জার্মানরা বলত বিল ডুং। এই জার্মান শব্দটির অর্থ হল, এ প্রবণতার বড় অংশীদার ছিল ব্যবসায়ী শ্রেণি। তারা ফ্রিল্যান্স বুদ্ধিজীবী হিসেবে অনেক ভালো রোজগার করার সুযোগ পেত।

নতুন প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক শিল্প, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাডভার্টাইজিং শিল্প, মঞ্চ ও বিনোদন শিল্প- এর সবকিছু হয়ে দাঁড়াল স্বাধীন রুজি-রোজগারের মাধ্যম। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী উদ্যোক্তারা এত বিশাল সম্পদের মালিক হল যে, ব্যবসায়ী মধ্যশ্রেণির সন্তান ও অন্য নির্ভরশীলরা সম্পূর্ণভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আত্মনিয়োগ করতে পারত। মান, উইটজেনস্টাইন ও ওয়ারবুর্গ এ ধরনের পরিবারের দৃষ্টান্ত।

যদি ‘বোহেমদের’ মতো ছোট্ট গ্রুপগুলোর কথা ভাবা যায়, তাহলে দেখা যাবে স্বাধীন বুদ্ধিজীবীদের পরিচয় দেয়ার মতো সামাজিক পরিচিতি নেই। তাদেরকে শিক্ষিত বুর্জোয়া গোষ্ঠীর সদস্য বলা যায়। প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জেএম কেইন্স বলতেন, আমার শ্রেণি হল বুর্জোয়া শিক্ষিত শ্রেণি। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ তৃতীয়াংশে তাদের বুদ্ধিজীবী অথবা ইন্টেলিজেন্সিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

এদের দেখা গেছে ১৮৬০-পরবর্তী টালমাটাল জারের রাশিয়ায় এবং ড্রেফুস ঘটনায় কম্পমান ফ্রান্সে। তাদেরকে সুচিহ্নিত একটি গ্রুপ মনে করা হতো। তারা মানসিক কর্মকাণ্ডের চর্চা করত এবং রাজনীতিতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করত। আজকের দিনেও, আজকের ভাষাতেও তাদের বুদ্ধিজীবী ও বিরোধী পক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নে যখন ‘সমাজতন্ত্র’ ছিল তখন এ শ্রেণিটিকে অনির্ভরযোগ্য মনে করা হতো। যদিও সবসময় ব্যাপারটি সে রকম ছিল না। এদের প্রভাব তখনই বৃদ্ধি পায় যখন একটি দেশে বিশাল পাঠক শ্রেণি তৈরি হয়।

বাংলাদেশে এখন স্বাধীন বুদ্ধিজীবীর কোনো অস্তিত্ব আছে বলে অনুভব করা যায় না। বিরোধী মতের প্রবক্তার সংখ্যা খুবই মুষ্টিমেয়, ইংরেজি ভাষায় যাকে বলা হয় Microscopic. সত্যিই এ ধরনের লোক সমাজে খুঁজে বের করতে হলে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হবে। পাকিস্তান আমলে বাঙালির আত্মপরিচয়ের সন্ধানকালে আমরা বেশ কিছুসংখ্যক স্বাধীন বুদ্ধিজীবী পেয়েছিলাম। যদিও তাদের মধ্যেও শুদ্ধাচারের অভাব ছিল। বর্তমান বাংলাদেশে স্বাধীন বুদ্ধিজীবী হতে গেলে না খেয়ে মরতে হবে। উপোস করে কাটাতে হবে।

অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এ দেশে হয়েছে, হয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গণমাধ্যম শিল্প ব্যাপকভাবে স্ফীত হয়েছে। কিন্তু আপনি যদি স্বাধীন চিন্তাভাবনায় দাঁড়িয়ে থাকতে চান, তাহলে কোথাও প্রবেশের সুযোগ আপনি পাবেন না। এ রকম স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের দুর্দশার মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তেমন কেউ যদি একটি মহৎ গ্রন্থ রচনা করেন তার জন্য গণমাধ্যমে কোনো রকমের প্রচার হবে না, হবে না প্রকাশনা উৎসব। এ দেশ তাহলে কী করে বড় হবে, অর্জন করবে শ্রেষ্ঠত্ব?

ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম