ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে রাষ্ট্রীয় সমর্থন জরুরি
অমিত রায় চৌধুরী
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মানব উন্নয়নের বিভিন্ন মাপকাঠিতে বাংলাদেশের এগিয়ে চলার গল্প এখন পুরনো হতে চলেছে। চীন বা ভারতের মতো অর্থনৈতিক পরাশক্তিকে কোনো কোনো সূচকে পেছনে ফেলে আমাদের দেশ অনেককে অবাক করেছে।
বিশ্বে দ্রুতবেগে বিকাশমান অগ্রবর্তী ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশের বিপুল তরুণ কর্মশক্তি, উৎপাদনের বৃত্তে নারীর অন্তর্ভুক্তি, প্রবাসী শ্রমের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ, কৃষিক্ষেত্রে প্রকৃতিগত মেধা আর উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সার্থক সংশ্লেষ এবং সর্বোপরি সরকারের স্থিতিশীলতা নাগরিকের জীবনমানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
তবে ব্যবস্থাপনায় কিছু কাঠামোগত দুর্বলতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অস্থিরতা এবং সমাজের গভীরে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি রাষ্ট্রের সুশাসনের অঙ্গীকারকে বাধাগ্রস্ত করছে।
যেসব খাত সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে, তার মধ্যে আর্থিক খাত অন্যতম। শেয়ার কেলেঙ্কারি, অর্থ পাচার, রিজার্ভ হ্যাকিং, লকার চুরি, খেলাপি ঋণের মতো নানা অনিয়ম সরকারকে ক্রমাগত অস্বস্তির মধ্যে রেখেছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কিছু নীতিগত ও কাঠামোগত সংস্কারের জন্য সরকারকে নিরন্তর পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রিকে নিরুৎসাহিত করা এবং ব্যাংক ঋণে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা উল্লেখযোগ্য।
বিগত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রিকে সীমিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্রিয়তা দেশের সার্বিক অর্থ ব্যবস্থা, বিশেষ করে সাধারণ গ্রাহকদের ওপরে কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে- তা বাস্তবতার নিরিখে আলোচনা করা জরুরি বলে মনে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে সঞ্চয়পত্র কেনা অনেকেই কমিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকে আগের মতো কিনতেও পারছেন না। সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর ৫ থেকে ১০ শতাংশে বাড়ানো, হিসাব খোলার জন্য টিআইএন, এনআইডি, এমআইসিআর চেক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে উপজেলা তফসিলি ব্যাংকগুলোর ফলপ্রসূ কারিগরি সংযোগ না থাকার কারণে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে।
গত বছর সব মিলিয়ে প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। সুদ-আসল পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে তিনগুণ।
সরকারের উদ্দেশ্য ছিল, এ কড়াকড়ি আরোপের ফলে অবৈধ অর্থের নিরাপদ লগ্নি বন্ধ হবে। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা বেনামে ঊর্ধ্বসীমার বাইরে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে না। বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। দেশের অর্থনীতির চাকা দ্রুতগামী হবে।
এখন দেখার বিষয়- সরকার এ পদক্ষেপ থেকে কী সুবিধা ঘরে তুলতে পেরেছে; আর দেশের নাগরিক, বিশেষ করে এ ব্যবস্থার সুবিধাভোগী নিু ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী এর ফলে কতটা বিপাকে পড়েছে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্যই হওয়া উচিত- দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বাচ্ছন্দ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নাগরিক সেবার পরিধিকে ক্রমাগত বিস্তৃত করা।
একথা সত্য, দেশের বিপুলসংখ্যক নারী, প্রবীণ, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী ও নিুমধ্যবিত্ত অসহায় জনগোষ্ঠী সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে লাভবান হয়ে আসছিল। নিরাপদ বিনিয়োগ হওয়ার কারণে মাসের শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়ের এ স্কিম দেশের এ জনগোষ্ঠীর জন্য অনেকটাই অপরিহার্য ছিল।
কাণ্ডজ্ঞান বলে, বৃহত্তর এ নাগরিক পরিসর সচ্ছল ও স্বনির্ভর থাকলে দেশীয় অর্থনীতির ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। এও অনস্বীকার্য যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট টাকা সরবরাহের এক চতুর্থাংশ এসেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে।
অন্যদিকে রাষ্ট্র এ খাতে, বিশেষ করে নিট বিক্রি থেকে বিরাট আয়ের সুযোগ পেয়েছে; বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে তা ব্যবহৃত হয়েছে। বাজেট ঘাটতি পূরণে প্রতিবছরই দুইভাবে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। একটি বৈদেশিক সহায়তা, অন্যটি অভ্যন্তরীণ উৎস।
রাজস্ব, ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রই হল অভ্যন্তরীণ আয়ের প্রধান উৎস। চলতি বছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ ধার্য আছে, যার মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ২৭ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রি নিরুৎসাহিত হলে এ খাতে লগ্নিযোগ্য বিপুল অঙ্কের টাকা কোথায় ব্যবহৃত হবে- তার কোনো ধারণা, নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি কাঠামো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই বলে মনে হয়।
ফলে এ টাকা মহাজনি ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারে, অলসভাবে মানুষের কাছে থেকে যেতে পারে বা অবৈধ কোনো ব্যবসায়, চোরাইপথে বা অনুৎপাদনশীল কোনো খাতে ব্যয় হতে পারে; যা কখনই রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না।
দেশের মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক সুদের হার যদি সমান হয়ে যায়, তাহলে বাজারে আমানতের স্বল্পতা দেখা দেবে। সরকারের রাজস্ব আদায় কাক্সিক্ষত নয়। সরকারের টাকা দরকার। আর এ টাকা সরকার নেয় সরকারি ব্যাংক থেকেই।
অথচ আমানত ও ঋণের সিংহভাগ বেসরকারি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে। সরকারের ঋণের প্রধান উৎসই ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রিলব্ধ তহবিল, যা জনগণের অর্থেই গঠিত। সরকার যে অজুহাত দেখিয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রিকে সীমিত করতে চায়, তা যথেষ্ট যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয় না। একটি ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, গতিশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর করার অনেক সুযোগ আছে।
অনলাইন ডেটাবেজ, টিন নম্বর, এনআইডি, এমআইসিআর ইত্যাদির মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ইতিমধ্যে সীমিত করা হয়েছে। বিভিন্ন বেনামি হিসাবে যাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে এখন আধুনিক প্রযুক্তির পর্যাপ্ত সুরক্ষা কাঠামো আছে।
এছাড়া একজন মানুষ তার কষ্টার্জিত অর্থ বিভিন্ন মানুষের কাছে রেখে নিশ্চিন্ত থাকে বা থাকতে পারে- এমন ধারণা বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় খুব বুদ্ধিসিদ্ধ নয়। এও যদি ধরে নেয়া হয় যে, এত নিরাপত্তা বেষ্টনীর ফাঁকফোকর দিয়ে এখনও এমন অন্যায় করার সুযোগ আছে; তাহলে অবশ্যই প্রশ্ন আসবে- দেশের তদারকি ব্যবস্থা কি এতটাই দুর্বল, যা এ ধরনের বিচ্যুতিকে রোধ করতে অক্ষম?
আর যদি রাষ্ট্রব্যবস্থা তা নিশ্চিত করতে না পারে, তবে তার দায় কি সাধারণ নাগরিককে নিতে হবে? সঞ্চয়কে নিরুৎসাহিত করে রাষ্ট্রের কী লাভ হয়েছে, তা ভেবে দেখা দরকার; অন্তত খালি চোখে এর কোনো সুফল এখনও দেখা যাচ্ছে না।
পক্ষান্তরে খেলাপি ঋণগ্রহীতা বা কর ফাঁকি দেয়া ব্যবসায়ীরা ভিন্ন কৌশলে তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করেই চলেছে। এরা কোনো খেলাপি টাকা ব্যাংকে ফেরত দিয়েছে বা রাজস্ব আয় বেড়েছে অথবা কর জালের পরিধি বিস্তৃত হয়েছে- এমন কোনো তথ্য জানা নেই। সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সবল ও অসাধু খেলাপিদের রক্ষার ব্যবস্থা বরং পাকাপোক্ত হয়েছে।
সরকার যদি মনে করে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বার্থে প্রয়োজনীয় নয় বা ক্ষতিকর, তাহলে তা বন্ধ করে দিলেই মানুষ অহেতুক হয়রানি থেকে রেহাই পেয়ে যাবে। প্রথমত, সাধারণ অশিক্ষিত মহিলা বা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই টিন নম্বরের নাগালে নেই। এরা এ সুবিধার বাইরে।
উপরন্তু সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর ধার্য করে সুদের হার কৌশলে কমিয়ে নেয়া হয়েছে। এরপর রয়েছে আরও হয়রানি। একজন মফস্বলের গ্রাহক টিন নম্বর, এনআইডি বা এমআইসিআর- সবকিছু জোগাড় করেও প্রতারিত হচ্ছেন।
কারণ তাদের বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, উপজেলা সদরের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে এখনও ব্যাংক অটোমেটেড ক্লিয়ারিং এজেন্সি অর্থাৎ অনলাইন চেক অপারেশনের অনুমতি দেয়া হয়নি। তাহলে বিষয় দাঁড়াচ্ছে, এতসব ফর্মালিটি সম্পন্ন করার পরও মফস্বলের সাধারণ গ্রাহকরা সহজে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন না। এ অবস্থায় একজন সাধারণ গ্রাহক শুধু হয়রানির মুখে পড়ছেন তা নয়, তিনি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকও এ বিষয়ে গ্রাহককে কোনো সদুত্তর দিতে পারছে না। প্রশ্ন ওঠে- সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার তাহলে কী বা কে? সাধারণ নাগরিক, মুষ্টিমেয় ঋণখেলাপি না স্বার্থান্বেষী মহল? জনমনে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে- তাহলে কি সরষের ভেতর ভূতের অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে?
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ থেকে এমনই ইঙ্গিত ক্রমশ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। কারণ এসব অব্যবস্থা ও কারিগরি অদক্ষতার দায় সরকারের ওপর বর্তায়; আর সরকারও গুরুতর ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে যায়।
জনমনে এমন ধারণা সৃষ্টি হওয়া অসঙ্গত হবে না যে, কোনো সৎ ও আইন মান্যকারী নাগরিকের জন্য স্বাভাবিক জীবনযাপনের পরিসর ক্রমেই সঙ্কীর্ণ হয়ে আসছে এবং তা উপর থেকে নিচতলা পর্যন্ত। রাষ্ট্রীয় সেবা, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি- সর্বত্রই নীতিহীনতার দাপট। অবৈধ সুবিধা বা লেনদেন নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া এ সমাজে খুব কঠিন।
দুর্নীতি, অপচয় ও অদক্ষতা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রমাগত অকার্যকর করে তুলেছে। আবার যথেষ্ট প্রস্তুতি না নিয়ে অথবা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বাহবা কুড়াবার লিপ্সাও নানা সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে। আর দুর্নীতি বা অপচয় কোনো বাধাই মানছে না।
শাস্তি না থাকলে কোনো নীতিবাক্য কাজ করে না। আইন, আদর্শ কিংবা ধর্মের বাণী কোথাও কোনো দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে বলে জানা নেই। অপরাধের উপযুক্ত শাস্তিই আইনের শাসনকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
একথা অস্বীকার করা যায় না, সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে; কার্যত আয়কর প্রদানকেও উৎসাহ দেয়। আমানত বা ডিপোজিটের সঙ্গে এখানেই পার্থক্য। কোনো নাগরিক তার আয়ের ২৫ শতাংশ সঞ্চয় করতে পারেন এবং তা করলে অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র কিনতে ১০-১৫ শতাংশ রেয়াত পায়। শেয়ারে এখন মানুষের আস্থা নেই।
কারণ শেয়ারবাজারে যে লুটপাট মানুষ দেখেছে, সঞ্চয়পত্রে সে সুযোগ খুবই কম। সঞ্চয়পত্রে টাকা লগ্নি হলে ব্যাংকের ওপর চাপ বাড়ে বলে একটা ধারণা আছে। কিন্তু একথা কেউ ভেবে দেখে না যে, সঞ্চয়পত্র স্কিম একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।
এর তারল্য কম। সহজে ভাঙানো যায় না, যত ইচ্ছা তত কেনাও যায় না। কারণ এর ঊর্ধ্বসীমা আছে, বিভিন্নতা আছে। কোনটা নারীর জন্য, কোনটা বয়স্কের জন্য; আবার কোনটা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর জন্য। উল্লেখ্য, সঞ্চয়পত্রের সুদব্যয় বেশি বলে আরও একটা কথা বাজারে চালু আছে।
অথচ সরকারি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের বিপরীতে যে সুদ দেয়া হয়; তা সঞ্চয়পত্রের সুদের চেয়ে অনেক বেশি। পৃথিবীর অনেক দেশে বয়স্কদের জন্য পেনশন স্কিম চালু আছে। বর্তমান সরকারের রূপকল্পেও এমন অঙ্গীকার আছে।
আর্থিক ব্যবস্থাপনা দক্ষতার সঙ্গে নিষ্পন্ন করা গেলে রাজস্ব বা অন্যান্য উৎস থেকে আয় বাড়বে; আর তখন সঞ্চয়পত্রের সুদব্যয় সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর কোনো চাপ তৈরি করবে না বলে অনুমান করা যায়।
সামাজিক সূচকে উন্নতি হওয়ার কারণে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর আকার আমাদের দেশে বর্ধনশীল এবং এটাই স্বাভাবিক। নারীর ক্ষমতায়নও যে কোনো মানদণ্ডে বিশ্বজনীন। উৎপাদনের বৃত্তে নারী এখন পুরুষের পাশে সমান তালে।
তবুও সুযোগের বৈষম্য তাদের পিছু টানে। এ অবস্থায় নিুআয়ের জনগোষ্ঠীর স্বাবলম্বী থাকার পথটিকে অবরুদ্ধ করার যুক্তি কতটা, তা বোধগম্য নয়। নারী, বয়স্ক বা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এ সমাজ বাস্তবতায় কর্মক্ষম বা উৎপাদনশীল রাখার সামাজিক কাঠামো এখনও উন্নত দেশগুলোর মতো তৈরি নেই।
রাষ্ট্র এখনও নাগরিকদের মানবিক ও জরুরি পরিসেবা প্রদান করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত নয়। ক্ষুদ্র সঞ্চয় নিরুসাৎহিত হলে স্বল্প আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
দেশ মানব উন্নয়নের সূচকে অনেক এগিয়ে গেলেও যে বিষয়ে এখনও অনেক ঘাটতি থেকে গেছে- তা হল, সম্পদের সুষম বণ্টন; নাগরিক সুযোগের বৈষম্য। দ্রব্যমূল্য বাড়লে তার অভিঘাত পড়ে স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর। রাষ্ট্রীয় সেবার বৃত্তেও সাধারণ মানুষের প্রবেশগম্যতা অনায়াস নয়।
সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে এটি নিঃসন্দেহে এটি বড় বাধা। সঞ্চয়পত্রের সুবিধা পায় নারী, বয়স্ক নাগরিক, অসহায় নিু ও নিুমধ্যবিত্ত চাকরিজীবী। আর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের দায়; বিশেষ করে দুর্বলতর শ্রেণির জন্য সামাজিক সুরক্ষা সুশাসনের প্রতিফলক।
জনস্বার্থ বিপন্ন হয়, এমন পদক্ষেপগুলো সতর্কতার সঙ্গে পুনর্মূল্যায়ন জরুরি। টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের স্বার্থে ক্ষুদ্র সঞ্চয় রাষ্ট্রীয় মদদ পাবে। দ্রুতগতিতে বিকাশমান একটি আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের মানবিক চরিত্র একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে দেশকে এগিয়ে নেবে, এমনই প্রত্যাশা সবার।
অমিত রায় চৌধুরী : সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ
principalffmmc@gmail.com