Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

শতফুল ফুটতে দাও

বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের অনুভূতি

Icon

ড. মাহবুব উল্লাহ্

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের অনুভূতি

এবারের ১৬ ডিসেম্বর ছিল ৪৯তম বিজয় দিবস। অর্থাৎ ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের দিন থেকে আমরা ৪৮ বছর পার হয়ে এসেছি। ১২ বছরে যদি এক যুগ হয় তাহলে স্বাধীনতার চার যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে।

চার যুগ পর এসে আমাদের কী অর্জন, কী বিসর্জন, কী সাফল্য, কী ব্যর্থতা, কী উন্নতি, কী অবনতি এসবের একটি হিসাব-কিতাব করা খুবই প্রাসঙ্গিক। যে জাতির মধ্যে এসব জিজ্ঞাসা নেই সে জাতি পদে পদে হোঁচট খায়। পথ চলতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে যায়। পথ ভুলে যায়। যে পথিক পথ ভুলে যায় তার পক্ষে গন্তব্যে পৌঁছানো খুবই কঠিন। সে বৃত্তের মতো একই পথে ঘুরপাক খেতে থাকে।

বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছিল অনেক রক্ত, অনেক ত্যাগ এবং অনেক অশ্রু ঝরানোর মধ্য দিয়ে। কবি বলেছিলেন, ‘বীরের এই রক্ত স্রোত, মায়ের এই অশ্রুধারা/ধরার ধুলায় হবে কি হারা?’ আজ বাংলাদেশের দিকে তাকালে অনেক পরিবর্তনই চোখে পড়ে।

এ পরিবর্তন দেখা ও বোঝার মতো বয়স আমার হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ যখন হয়েছিল তখন আমার বয়স ছিল ২৫ বছর। যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ আমার হয়নি।

আমি ছিলাম কারাগারে। ১৯৭০-এর ২১ মার্চ থেকে আমি কারারুদ্ধ। কারণ রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে আমি দণ্ডিত। আমার রাষ্ট্রদ্রোহিতা ব্যক্ত হয়েছিল প্রকাশ্যে পল্টনের জনসভায় স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার দাবি উত্থাপনের মাধ্যমে। আমরা জেনে বুঝেই এ দাবি উত্থাপন করেছিলাম।

এর পাশাপাশি আমাদের স্বপ্নের স্বাধীন দেশটি জনগণের জন্য কী উপহার দেবে সেসব কথাও আমরা খুব তীক্ষ্ণ ও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলাম। হাসান হাফিজুর রহমান সংকলিত মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রের দ্বিতীয় খণ্ডে আমাদের স্বপ্নের দেশের রূপকল্পটি মুদ্রিত আছে।

এ দেশের অনেক বৈষয়িক পরিবর্তন হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ অনেক শহরেই সুউচ্চ ভবন, ইমারত নির্মিত হয়েছে, নির্মিত হয়েছে অনেক সড়ক সেতু। শহরগুলোয় দামি প্রাইভেট কারের অবিশ্রান্ত স্রোত জীবন প্রবাহকে থামিয়ে দেয়ার উপক্রম করছে।

বৈষয়িক উন্নতির আরও অনেক দৃষ্টান্ত দেয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর মুখের বচন ধার করে বলা যায়, ফুটানি করার জন্য এখন অনেকে দেদার অর্থ ব্যয় করে। পার্টি, রিসেপশন, বিয়ে-শাদি, জন্মদিন ইত্যাদি উৎসবের জন্য এ দেশের একশ্রেণির মানুষ কোনো ব্যয়কেই ব্যয় বলে মনে করে না।

কিন্তু এই একই শ্রেণির মানুষকে যদি বলা হয়, আসুন আমরা একটি লাইব্রেরি গড়ি, তাহলে এর জন্য অর্থ ব্যয়ে অপারগতা প্রকাশ করতে গিয়ে তাদের অজুহাতের অন্ত থাকে না। এই শ্রেণির মানুষরা আমাদের দেশে বিত্তের অভাবে ভোগে না- এ কথা যেমন সত্য, একইভাবে সত্য এরা চিত্তের সম্পদে খুবই দরিদ্র। বিত্তশালী বা সম্পদশালী হওয়া খারাপ কিছু নয়, তবে চিত্তের দারিদ্র্য বিত্তের ঝলসানিকে নিষ্প্রভ করে দেয়।

বাংলাদেশ আজ এমনই নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের এ দৃশ্য আমাদের মতো অনেক তরুণ যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিল তাদের জন্য খুবই কষ্টের, খুবই বেদনার, মর্মে শরবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার শামিল।

বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি দৈনিক যে বিজয় দিবস সংখ্যা প্রকাশ করেছে তার মধ্যে বিশেষ আকর্ষণ ছিল ‘পরবর্তী প্রজন্মের চোখে একগুচ্ছ অনুভূতি’। ‘মুক্তিযুদ্ধের রক্ত ও অশ্রু যারা দেখেননি, তারা কেমন করে অনুভব করেন মুক্তিযুদ্ধকে? এ দেশ নিয়ে কী তাদের ভাবনা?’ -বিভিন্ন অঙ্গন থেকে জানিয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের কয়েকজন।

পরবর্তী প্রজন্মের চোখে বাংলাদেশকে বোঝা ও জানা খুবই জরুরি। কারণ সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশ কেমন হবে এটা তাদের ওপরই নির্ভরশীল। প্রজন্মের পরিবর্তন হয়। সময়েরও পরিবর্তন হয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশে যারা বেড়ে উঠেছে তারা ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, ’৬৯-এর দেশ কাঁপানো গণঅভ্যুত্থান দেখেনি, দেখেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারপন্থী ছাত্র সংগঠন এনএসএফের তাণ্ডব, দেখেনি মৌলিক গণতন্ত্রের দাপটে সত্যিকার গণতন্ত্রের শ্বাসরুদ্ধ হওয়া, দেখেনি বছরের পর বছর বিনা বিচারে রাজবন্দিদের কারাগারে আটক থাকা, দেখেনি পাকিস্তানি সামরিক শাসনের চণ্ডনীতি, অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিশাল বৈষম্য, দেখেনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অজানা শঙ্কার অনিশ্চয়তা, শোনেনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মেজর জেনারেল ইস্কান্দর মির্জার মওলানা ভাসানীকে গুলিতে হত্যার হুমকি, দেখেনি পাকিস্তানের জন্য একটি গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র রচনায় নানা রকম টালবাহানা ও কূটচাল, দেখেনি পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার হরণের উলঙ্গ কসরত, দেখেনি মাতৃভাষার জন্য সালাম, বরকতদের আত্মাহুতি এবং পাকিস্তানের জাতির পিতার মুখে শোনেনি উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা- এমন অন্যায় উচ্চারণ এবং পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মুসলমানদের পাকিস্তান সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ অবদান থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রতি অবহেলা ও অবজ্ঞা।

মানুষ যা দেখেনি তা নিয়ে কল্পনা করা সম্ভব, ভাবা সম্ভব, কিন্তু মনে-প্রাণে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। একটি জাতি গড়ে ওঠে স্মৃতির জগতে। পূর্বপুরুষদের স্মৃতি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত হয় এবং এ ধারা অব্যাহত থাকে প্রজন্মের পর প্রজন্মান্তরে।

এ সঞ্চারণ ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্মৃতিগুলো ঝাপসা হয়ে যায় বটে, কিন্তু হারিয়ে যায় না। সিরাজউদ্দৌলার স্মৃতি কি হারিয়ে গেছে? তার সব কাহিনী, সব ইতিহাস এ দেশবাসীর অনেকেরই জানা নেই।

তবে এ কথা নিশ্চিত জানে, তিনি বাংলার স্বাধীনতা রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন। একটি জাতি এভাবেই স্মৃতির মধ্য দিয়ে জাতি হিসেবে বেঁচে থাকে। এমন স্মৃতির মৃত্যু ঘটলে জাতিরও মৃত্যু ঘটে। হেগেলের ভাষায় এ রকম জাতি পরিণত হয় Nonhistoric Nation-এ।

একটি দৈনিকের বিজয় দিবস সংখ্যায় পরবর্তী প্রজন্মের চোখে বাংলাদেশ কেমন সে সম্পর্কিত অনুভূতির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলাম। আমি এখন তাদের বর্ণিত অনুভূতিগুলো থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেব। সঙ্গীতশিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে রক্তস্নাত বিজয়ের পর ৪৮ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে। ... বড় শহরগুলোয় আকাশমুখী অপরিকল্পিত আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন উঠল। একদল মানুষ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হল।

দেশের টাকা পাচার হয়ে বিদেশে গেল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হল। শিক্ষিত বেকারের সূচক ঊর্ধ্বগামী হয়ে থাকল। বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবাদ খুন হতে থাকল। কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, ভোগবাদ, স্বার্থপরতার বাইরে যেন আর কোনো স্বর ও ধ্বনি নেই। একটা ধর্ষকামী মনস্তত্বের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম্মান ও নিরাপত্তাহীনতা এখন গা-সওয়া ও স্বাভাবিক।

শোষণ ও দুঃশাসন দূর হওয়া দূরে থাক, রাজনৈতিক ও সামাজিক জবরদস্তির থাবায় ছিন্নভিন্ন সব মানবিক বোধ ও উচ্চারণ।’ তিনি আরও বলেছেন, এসবের অবসানের জন্যই তো সেদিন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। এবং আমরা বিজয়ী হয়েছি। মাহমুদুজ্জামান বাবু তার অনুভূতির ইতি টেনেছেন এ কথা বলে যে, ৪৮ বছরে স্বদেশ এখন শ্বাপদের অভয়ারণ্য হয়েছে। এমন তো কথা ছিল না বোধ হয়।

কত অপার বেদনা বুকে নিয়ে সঙ্গীতশিল্পী বাবু তার শেষ বাক্যটি উচ্চারণ করেছেন। প্রচণ্ড ইঙ্গিতময় ও নষ্ট বাস্তবতার প্রতি চরম ক্ষোভের অভিব্যক্তি এমনই হয়। বাবু তার লেখার একপর্যায়ে শ্রেণিস্বার্থের কথা বলেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কোন শ্রেণি আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং কীভাবে করেছিল, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে এ বিষয়টি কতটুকু ঠাঁই পেয়েছে?

জীবনধর্মী গানের গায়িকা সায়ান তার অনুভূতি তুলে ধরেছেন, ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে’ লেখাটিতে। তিনি লিখেছেন, ‘আক্ষেপের বিষয়, এই প্রক্রিয়ায় গল্প-বলিয়েছেন অন্ধ পক্ষপাতপূর্ণ রাজনৈতিক সাযুজ্যের ঐতিহ্যের স্রোতে, তারা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমনভাবে হারিয়েছেন যে তাদের সম্পূর্ণ বয়ানে প্রজন্মগতভাবেই আমরা অনাগ্রহী ও উদাসীন হয়ে পড়েছি।

কোন ইতিহাসবিদ কী বলছেন, সেটি গৌণ হয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছে তিনি কাদের হয়ে কথা বলছেন সে পরিচয়টি। ইতিহাসবিদের যে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য রাখার একটি দায়িত্ব আছে, নিজের পক্ষপাত স্পষ্ট রেখেও যা করা সম্ভব বলে মনে করি; বেদনার বিষয় আমরা অনেকেই তেমনটা দেখতে পেয়েছি খুব কম। ...অন্ধ, গোঁড়া, পক্ষপাতদুষ্ট উত্তরদাতাদের উত্তরের চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের প্রশ্ন জড়ানো অনুসন্ধিৎসাকে আমরা বেশি গুরুত্বের জায়গায় রাখতে চাই।’

আমার কাছে সায়ানের পরিচয় একজন জীবনধর্মী গায়িকা হিসেবে। তিনি সমাজের সব অসঙ্গতি অবলীলাক্রমে স্বরচিত গানের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারঙ্গম। গানের সুরও তিনি নিজেই করেন। আমাদের রেডিও-টেলিভিশন তার গানের অনুষ্ঠান করতে খুব আগ্রহবোধ করে বলে মনে হয় না।

সম্ভবত বিদ্যমান সমাজ সম্পর্ক নিয়ে তিনি যে তীক্ষ্ণ বাক্যবাণ গানের সুরের মধ্য দিয়ে নিক্ষেপ করেন তা হয়তো অনেকের কাছে ভালো লাগে না। সায়ান সমাজ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে সার্থকতা অর্জন করেছেন।

একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের দলদুষ্ট ও পক্ষপাতময় ইতিহাস নিয়ে তার প্রশ্ন আছে, আছে বেদনা। এ বেদনা খুবই সঙ্গত। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্নদের এ কারণেই হয়তো তাকে ভালো লাগবে না। তবুও আগামীর বাংলাদেশকে সায়ানরাই ধারণ করবে।

লেখক মাহা মির্জা লিখেছেন, ‘এত দুর্নীতি, এত অসততা, এত বৈষম্য, এত জুলুম। তারপরও এই দেশকে আহলাদ করে সোনার বাংলা ডাকতে হবে? হ্যালো বাংলাদেশ, হ্যালো? পারভিনের ছ্যাঁকা খাওয়া বুক, রোকসানার ভাঙা হাত-পা, সালমা বেগমের ধর্ষিত শরীর আর ১৩ বছরে দেশে ফিরে আসা ৩৩ হাজার তরুণ-তরুণীর কফিনের ওপর খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তোমার উন্নয়ন। রানা প্লাজা আর তাজরিনের কঙ্কালগুলোরও আঙুল ছিল।

১২-১৪ ঘণ্টা পৃথিবীর সর্বনিু মজুরিতে সেলাই করে বিদেশি ডলার কামাই করে এনেছিলেন তারা। দিনের পর দিন কুঁজো হয়ে বসে ওভারটাইম করা এসব মেয়ের মেরুদণ্ডের তীব্র ব্যথার ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে তোমার ৮ শতাংশ জিডিপি। কোথায় বিবেক আমাদের? কোথায় লজ্জা? কিসের এত অহংকার? কিসের উন্নয়ন? আমার তো মনে হয় অর্থনীতিবিদদের পক্ষে বাংলাদেশের ফাঁপা উন্নয়ন এত চমৎকার ভাষায় তুলে ধরা সম্ভব হতো না।

এরপরও কি আমরা আমাদের উন্নয়নের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলব না? প্রশ্ন তুললে কারোর কারোর গাত্রদাহের কারণ হতে পারে। তার চেয়ে বোধ হয় নিশ্চুপ থাকাই শ্রেয়। কারণ অনেক সময় নীরবতা-নিশ্চুপতা হাজার কথার চেয়েও অনেক বাক্সময়। বর্তমান বাংলাদেশ নিশ্চুপ নিথর থেকে তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে।’

আরেক লেখক সুমন রহমান শৈশবের এক অভিজ্ঞতার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকে খুঁজে পেয়েছেন। খুঁজে পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের নাম না জানা এক সৈনিককে। এ ধরনের আখ্যানই মুক্তিযুদ্ধের মহা-আখ্যান সৃষ্টি করতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ এলে কিছু বড় বড় নাম হাজার ভাষায় হাজারবার উচ্চারিত হয়। কিন্তু উচ্চারিত হয় না অনেকের মনে গেঁথে থাকা ইতিহাসের অতি ক্ষুদ্র নায়কদের কাহিনী। আমরা ইতিহাস বিকৃতির কথা বলি।

কিন্তু বিকৃতি নিয়ে যে বাক ও কলমযুদ্ধ চলছে অবিরত, সেখানে ক্ষুদ্র মানুষগুলো কোথায়? History from below বলে একটি কথা আছে। আধুনিককালে ওপরতলার ইতিহাস নয় বরং নিচতলার কাছাকাছি মাটির মানুষদের কর্মকাণ্ড, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, ক্ষোভ, ঘৃণা, অশ্রু নিয়ে যে ইতিহাসের সৃষ্টি হয় সেভাবেই ইতিহাস রচনার উদ্যোগ আয়োজন চলছে।

যেদিন বাংলাদেশে এ রকম আয়োজন সুসম্পন্ন হবে সেদিন ইতিহাস নিয়ে রাজনীতি করার অপরাজনীতিরও অবসান হবে। অবসান হবে ইতিহাস বিকৃতির নানামুখী কু-তর্ক। যাই হোক, পরবর্তী প্রজন্মের বাংলাদেশ ভাবনা যদি পূর্ববর্তী প্রজন্মের চিন্তাভাবনায় সামান্যতম পরিবর্তন আনতে পারে তাহলেও হয়তো বাংলাদেশের অনেক মঙ্গল হবে।

ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম