শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি মওলানা ভাসানীকে
কামাল লোহানী
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘মওলানা ভাসানীর নাম
আমাদের মিলিত সংগ্রাম।’
একটি কবিতা লিখেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। সে পঞ্চাশের দশকের কথা। সত্তরে ঘূর্ণিদুর্গত বিধ্বস্ত দক্ষিণাঞ্চল ঘুরে এসে ভাসানী পল্টন ময়দানে বিশাল জনসভায় বক্তৃতা করলেন আবেগাপ্লুত হয়ে। তার বর্ণনা শুনে সভায় উপস্থিত কবি, সাংবাদিক শামসুর রাহমান লিখলেন ‘সফেদ পাঞ্জাবী’ কবিতাখানি। এ মওলানা ভাসানী সামরিক শাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ‘লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারে’র নির্বাচন বর্জন করেছিলেন; কিন্তু কেন বর্জন করলেন, তার কোনো সত্যনিষ্ঠ বক্তব্য কেউ বলেন না। তবে তার বিরুদ্ধে প্রচারের জন্য ‘ভোটের আগে ভাত চাই, নইলে এবার রক্ষা নেই’ স্লোগানের কথা বলেন অনেকেই এবং তার সমালোচনা করে তাকে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের বিরুদ্ধে দাঁড় করান।
এ স্লোগানে মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানের টোবা-টেক সিং এ বক্তৃতা করে বাংলার জনগণের প্রত্যাশা পূরণের কথা বলতে গিয়ে কবি আল্লামা ইকবালের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন; কিন্তু তিনি এর উল্লেখ করে যা বোঝাতে চাইলেন তার উল্টো ব্যাখ্যা করেছিলেন পূর্ববাংলার আওয়ামী রাজনীতিকরা। এখানে যে কপটতার আশ্রয় নেয়া হয়েছিল, তা কেবল সত্যকে গোপন করে মওলানা ভাসানীকে ‘জনগণবিরোধী’ প্রমাণের জন্যই যে করা হয়েছিল; তা কেউ কোনোভাবেই উচ্চারণ করেনি। সত্যটা হল, সামরিক শাসনের অবসান ঘটানোর বৃহত্তর স্বার্থে মওলানা ভাসানী চেয়েছিলেন ‘মুজিবর’ নির্বাচনে পূর্ণ বিজয় লাভ করুক। এটি বিরুদ্ধ প্রচারকারীরা স্বাভাবিক কারণেই চেপে যায়।
একটা কথা তো অস্বীকার করা যাবে না যে, মওলানা ভাসানীই পূর্ববঙ্গে মুসলিম লীগ রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রথম বিরোধিতা করে নতুন রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি করেছিলেন এবং তারই নাম পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। এ কৃতিত্বময় নেতৃত্ব মওলানা ভাসানীর, এ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। কেউ কেউ শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে এ কৃতিত্ব দিতে চান; কিন্তু সময় সাক্ষ্য দেয়, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী তখন করাচিতে ‘নেহরু হাউসে’ বাস করছিলেন এবং গঠন করেছিলেন ‘জিন্না মুসলিম লীগ’। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে বিরোধী দলের যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়, সেখানেই ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হয় এবং মওলানা আবদুল হামিদ খাঁ ভাসানী এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন।
১৯৫৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সন্তোষের জনসভায় মওলানা ভাসানী বক্তৃতা করতে গিয়ে পূর্ববাংলার দাবি না মিটলে ওয়ালেকুম আস্সালাম জানিয়েছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানিদের। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী। কিন্তু এক বছর পরই পাকিস্তানের প্রধান সেনাপতি মেজর জেনারেল আইয়ুব খান কয়েকজন জেনারেলের সহযোগিতায় রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা দখল করলেন। জারি হল সামরিক আইন দেশব্যাপী। রাজনৈতিক দল, পার্লামেন্ট নিষিদ্ধ হল। কিন্তু সামরিক জান্তা যখন ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে স্থায়ী হতে চাইল তখন আবার রাজনীতি চালু করে দিল। কারণ জেনারেল আইয়ুব মুসলিম লীগের দলীয় কোন্দলের সুযোগ নিয়ে নিজেই ‘কনভেনশন মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠা করে ক্ষমতাকে প্রহসনের নির্বাচনে স্থায়ী করে ফেলল। ১০ বছর ক্ষমতায় রাজত্ব করল। এ সময় চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হলে মওলানা ভাসানী ও তার দল ন্যাপ কিছুটা সহৃদয়তা দেখাচ্ছিল সামরিক জান্তার প্রতি। অবশ্যই বিরোধী আন্দোলনে থেকেই। এ কারণে মওলানা ভাসানীর বিরুদ্ধে আইয়ুব খানের পক্ষে নমনীয় মনোভাবের কথা উঠেছিল; কিন্তু যেভাবেই হোক মওলানা তো সামরিক শাসন মেনে নিতে পারেন না এবং জেনারেল আইয়ুবকে কেন ‘ডিসটার্ব’ না করার কথা বলবেন! তিনি আইয়ুবের সঙ্গে দেখা করে কতিপয় দাবি আদায় নিয়ে তাকে চাপ দেন। এ সুযোগে যারা ন্যাপ ও ভাসানীর রাজনীতি করতেন না, তারা ওই অপপ্রচার চালায় যে, মওলানা আইয়ুবকে বিব্রত না করার নীতি নিয়েছেন।
ষাটের দশকে রাজনীতি ফের চালু হলে ভাসানী ন্যাপ ১৪ দফা প্রণয়ন করে জনগণের মধ্যে ফেরার চেষ্টা করেন। এ সময় বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও গণচীনের মধ্যেও মতাদর্শিক যে বিরোধ দেখা দিয়েছিল, তাতে কমিউনিস্ট পার্টি চীন ও রুশপন্থী- দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে যায়। ফলে ন্যাপ জনগণের কাছে যেতে ব্যর্থ হয়। ন্যাপের বিভক্তি ভাসানী ও মোজাফ্ফর- দুই দলে ভাগ হয়ে গেলে সাংগঠনিক শক্তি হ্রাস পায় এবং জনগণের আস্থাও কমে যায়।
ফলে আওয়ামী লীগের ৬ দফার চেয়ে অনেক বেশি জনসম্পৃক্ত হয়েও গ্রহণযোগ্যতা পেল না। শেখ মুজিবুর রহমান তার ৬ দফা নিয়ে জনগণের মধ্যে দারুণ উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করলেন। কারণ মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল সাংগঠনিকভাবে। তাই শেখ মুজিবও এ দাবিনামা নিয়ে স্থানে স্থানে বক্তৃতা করতে করতে কখনও গ্রেফতার, আবার সাময়িক মুক্তি, আবার গ্রেফতার- এমনি পরিস্থিতিতে অপ্রতিরোধ্য নেতায় পরিণত হলেন।
দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক এবং শেখ মুজিবের আবেগতাড়িত বক্তৃতা ৬ দফাকে জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে গেল। প্রগতিশীল রাজনৈতিক মহল, বিশেষ করে চীনপন্থীরা এ ৬ দফাকে সিআইএ’র দলিল বলে বর্ণনা করে সমালোচনা করেছিলেন; কিন্তু এ প্রচার সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমান তার সাংগঠনিক দক্ষতা ও প্রচণ্ড রাজনৈতিক ঋদ্ধ বক্তব্যের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে ৬ দফাকে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন। সামরিক জান্তার শত নিপীড়ন সত্ত্বেও মানুষ কায়মনোবাক্যে পরিবর্তন চাইছিলেন। তাই আইয়ুব গিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া এসে যে নির্বাচন দিয়েছিল, তাতে পশ্চিমা গোষ্ঠীর কাছে শেখ মুজিব গ্রহণযোগ্য না হলেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাকেই সমর্থন জানালেন; নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হলেন। এ সামরিক জান্তার নির্বাচনে মওলানা ভাসানী ও তার দল গেল না; কিন্তু মওলানার চিন্তা ছিল শেখ মুজিব এককভাবে জয়ী হোক, তবেই সার্বভৌম ও স্বায়ত্তশাসিত পূর্ববাংলার দাবি প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই তিনি নির্বাচন বর্জন করেছিলেন।
বিজয়ী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসতে দিল না পশ্চিমা চক্র। কপটতার আশ্রয় নিয়ে ‘গোলটেবিল বৈঠক’ ডাকলেন জেনারেল ইয়াহিয়া। ব্যর্থ হল তা-ও। অর্থাৎ তাদের সৈন্য ও গোলাবারুদ আমদানির জন্য জাহাজ পৌঁছনো পর্যন্ত সংলাপ চলল। ব্যর্থ হলে এবং রি-ইনফোর্সমেন্ট সম্পন্ন হলে ওরা বাংলার তাবৎ মানুষের বিরুদ্ধে গণহত্যা শুরু করে দিল। এবার বাংলার আপামর শ্রমিক, ছাত্র-যুবক, কৃষক যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত হলেন। শুরু হল মুক্তিযুদ্ধ।
মওলানা আবদুল হামিদ খাঁ ভাসানী পূর্ববাংলার স্বায়ত্তশাসন দাবি করে ‘ওয়ালেকুম আসসালাম’ জানালেও গোলটেবিল ব্যর্থ হলে ২৩ মার্চ চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বললেন, শেখ মুজিব এবারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন এবং তার পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করলেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক দস্যুদলের হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে মওলানা ভাসানী টাঙ্গাইলের সন্তোষ থেকে নৌকা নিয়ে যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে সিরাজগঞ্জে পৌঁছে কৃষক সমিতির সাইফুল ইসলাম ও শ্রমিক নেতা মুরাদুজ্জামানকে নিয়ে রৌমারি সীমান্ত হয়ে কলকাতা পৌঁছে গেলেন। ভারত সরকার তাকে সব নিরাপত্তা দিয়ে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করল।
মুক্তিযুদ্ধ এগিয়ে চলেছে। আমরা বিজয় অর্জন করেই চলেছি। সীমান্ত থেকে খবর পেলাম, হুজুরের বক্তব্য প্রচারে অবরুদ্ধ বাংলার সব মানুষের মনে দৃঢ় প্রত্যয় যেন নতুন করে বাসা বাঁধছে। এমন সময় শুনতে পেলাম, জাতিসংঘের লবিতে নাকি আলোচনা হচ্ছে, মওলানা ভাসানী যে কোনো সময় লন্ডনে এসে হঠাৎ করেই হয়তো একটা ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠনের ঘোষণা দিয়ে দেবেন। তাই ভাসানীকে ‘গৃহবন্দি’ কিংবা নজরবন্দি করতে হবে। হলও তাই। কোহিনূর বিল্ডিং থেকে হুজুরকে নিয়ে যাওয়া হল দেরাদুনে স্বাস্থ্য নিবাসে রাখার জন্য। কী অদ্ভুত! যে মানুষটি মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে বিদেশের কাছে সব সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছেন, তাকেই অবশেষে কূটিল ভারতীয় রাজনীতির কূটিল চক্রান্তের বদৌলতে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মুহূর্ত পর্যন্ত বলতে গেলে গ্রেফতার হয়েই থাকতে হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীও বন্দিদশায় থেকে ২৩ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে ফিরেছিলেন; কিন্তু পরম পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশ সীমান্তে তাকে স্বাগত জানানোর জন্য কোনো সরকারি নেতাকর্মী কিংবা মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না।
মওলানা ভাসানী মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলায় ‘হক কথা’ নামে যে পত্রিকা প্রকাশ করে রক্ষীবাহিনী ও সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতেন, তাকে সহজভাবে নেয়নি বা এখনও নেয় না আওয়ামী লীগ। যে ‘মুজিবর’ তার সন্তানতুল্য ছিলেন, তিনি তাকে যত সমালোচনাই করুন না কেন; মুজিব মাঝে মধ্যেই হুজুরের জন্য জিপ বোঝাই নানা ফলমূল, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি ও টুপি কিনে পাঠাতে ভুলতেন না। শেখ মুজিব জানতেন, কখন কী মওলানা সাহেবের প্রয়োজন। এছাড়াও নানা সময় তার ‘মুজিবর’ খবর রাখতেন হুজুরের কোনো প্রয়োজন আছে কিনা। ‘মুজিবর’ মওলানাকে শুধালেন, ‘আপনার কী প্রয়োজন, কী দরকার তা তো বললেন না।’ হুজুর তখন সন্তোষে প্রতিষ্ঠিত মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ জাতীয়করণের অনুরোধ জানালেন। অবশেষে ১৯৭৫-এর ৮ মার্চ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টাঙ্গাইলে এলেন।
এ উপলক্ষে মওলানা সাহেব তার সন্তোষ দরবারখানার চত্বরে সবার খাবারের জন্য রান্না চড়ালেন। রান্না হচ্ছে ভাত, তরকারি, নৌকায় রাখা হচ্ছে। এলাকাটি নিরাপত্তা বলয়ে মোড়া। এর মধ্যে হুজুর পুলিশের আইজি ই. এ. চৌধুরীসহ খাবার এলাকা দেখতে গেলেন। খেয়াল করলেন, একটি উদ্ভ্রান্ত যুবক ঘোরাফেরা করছে। হুজুর ডিসিকে বললেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী আসছেন এখানে অথচ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো বালাই নেই। ওই যে ছেলেটি ঘুরছে, ও ভেতরে ঢুকল কী করে?’ ডিসি জবাব দিলেন, ‘ছেলেটি পাগল।’ এবারে মওলানা বললেন, ‘ওতো তালের পাগলও হতে পারে।’
তার ‘মুজিবর’ চখা পছন্দ করেন; তাই মওলানা যমুনার চরে দুজনকে ভোররাতে চখা মারতে পাঠিয়েছিলেন। ঘোষকে দই দিতে বলেছিলেন, তা-ও তার পছন্দ হল না। ধমকালেন ডিসিকে। সবশেষে ‘মুজিবর’ খেতে আসতে দেরি করছেন দেখে হুজুর নিজেই চলে এলেন। সভাস্থলে সবাই তটস্থ। ‘মুজিবর’ হুজুরের জন্য চেয়ার খালি করে দিলেন। পরে বঙ্গবন্ধু হুজুরকে বক্তৃতা করতে বললেন। সভাশেষে মওলানা ‘মুজিবর’ সহযোগে মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। সামনেই পড়ল মাজার। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জিয়ারত করতে বললেন। জিয়ারত করে বঙ্গবন্ধু ফিরেই মওলানার বুকে মুখ গুঁজলেন। সস্নেহে পিতাপুত্রের পবিত্র আলিঙ্গন দেখে উপস্থিত সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। তারপর চলে এলেন হুজুরের দরবারখানায়। বঙ্গবন্ধুকে বসালেন খেতে। সে কী অদ্ভুত দৃশ্য! আজও ভুলতে পারিনি। দুজনই বসেছেন। মওলানার হাতে পাখা। এক হাতে বাতাস করছেন, আরেক হাত দিয়ে পছন্দের খাবার তুলে দিচ্ছেন।
এই তো গুরু শিষ্যের অভূতপূর্ব স্নেহ; যা দেখল মানুষ চোখ মেলে। সবাই বুঝল- মওলানার ‘হক কথা’ যাই বলুক না কেন কিংবা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাই ভাবুন, রাজনৈতিক চিন্তায় পিতাপুত্রের সস্নেহ সম্পর্ক তো ঠিকই আছে। কিন্তু এ কী ঘটনা ঘটল! ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার নৃশংস অঘটনের খবর পেয়েও হুজুর কোনো প্রতিক্রিয়া জানালেন না কেন? এ প্রশ্ন কিন্তু জনমনে আজও দেদীপ্যমান।
তবু বলব, মওলানা আবদুল হামিদ খাঁ ভাসানী এবং বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পারস্পরিক সম্পর্কের হৃদ্যতা ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে আছে, থাকবে অনন্তকাল। আজ মজলুম জননেতার প্রয়াণ দিবসে দুজনের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।
কামাল লোহানী : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব