উৎপাদন বাড়িয়ে সংকট মোকাবেলা করতে হবে
গোলাম রহমান
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গোলাম রহমান। ফাইল ছবি
গতকাল রাজধানীর একটি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখেছি। অথচ মাত্র দু-একদিন আগেই রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ২০০-২২০ টাকা। উচ্চমূল্যের কারণে স্বল্পআয়ের মানুষের পক্ষে এত দাম দিয়ে পেঁয়াজ কেনা সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনেকে খাবারে পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন।
এ পণ্যটির দাম হঠাৎ বেড়েছে, বিষয়টি এমন নয়। বেশ কিছুদিন ধরেই পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পর বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্যটি আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় ভোক্তারা আশা করেছিলেন সমস্যাটি আস্তে আস্তে কেটে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হল না।
বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্যটি আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হলেও কেন তা আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে, এটি এক প্রশ্ন। এতে এটাই স্পষ্ট যে, ব্যবসায়ীরা সরকারকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি।
বাজার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, পেঁয়াজের আমদানি পর্যাপ্ত নয়। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে এটাই স্পষ্ট- এ সময় বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকার কথা নয়। অথচ বাজারে সংকট বিরাজ করছে। কেন এমন হল তা খতিয়ে দেখতে হবে। আগামীতে যাতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, তার জন্য আগে থেকেই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিগত দিনগুলোয় নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যায়নি। সরকার দেশের বড় ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি করতে বলেছিল। তারা কী উদ্যোগ নিয়েছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। এতে এটাই স্পষ্ট- ব্যবসায়ীরা সরকারকে সহযোগিতা করছেন না। তবে সরকার যদি নিজ উদ্যোগে আমদানি করত, তাহলে আজ পেঁয়াজের বাজারে এমন অস্থিরতা হয়তো সৃষ্টি হতো না।
ন্যায্যমূল্যে কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা দরে পণ্যটি কিনতে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে অপেক্ষা করেও চাহিদামতো পেঁয়াজ পাচ্ছেন না ক্রেতারা। জানা গেছে, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কিছুদিনের মধ্যে দেশে এসে পৌঁছাবে।
এ ছাড়া আগামী কিছুদিনের মধ্যেই নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে এসে যাবে। আশা করা যায়, কিছুদিন পরই পণ্যটির বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ ছাড়া পেঁয়াজের ব্যবহারে কৃচ্ছ্র সাধন করলেও বাজারে এর প্রভাব পড়বে। বর্তমান যুগে বিকল্প বাজার থেকে পণ্যটি সংগ্রহ করা কঠিন কোনো সমস্যা নয়।
যেহেতু প্রতিবেশী দেশ থেকে স্বল্পসময় ও কম পরিবহন খরচে পেঁয়াজ আমদানি করা যায়, তাই পরবর্তী মৌসুমে ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে যাতে পণ্যটি সময়মতো এসে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করা দরকার। যেহেতু আমদানির ক্ষেত্রে নানা ঝুঁকি থেকেই যায় তাই দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে। কৃষকরা যাতে এর ন্যায্যমূল্য পান সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
গোলাম রহমান : প্রেসিডেন্ট, কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)