Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

আজও মেলেনি ভয়াল ১২ নভেম্বর দুর্যোগের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

Icon

এম আমীরুল হক পারভেজ চৌধুরী

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আজও মেলেনি ভয়াল ১২ নভেম্বর দুর্যোগের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

ভয়াল ১২ নভেম্বর। ছবি: সংগৃহীত

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে হানা দেয় কোনো না কোনো দুর্যোগ। দুর্যোগের প্রতিনিয়ত আঘাতে উপকূলের কোটি কোটি মানুষের জীবন, সম্পদ, অধিকার, মর্যাদা তথা বেঁচে থাকার মানবিক অধিকারটুকু বিপন্ন হয়ে পড়ে।

১৭৯৭ থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের নভেম্বরের ‘বুলবুল’ পর্যন্ত সময়ের শুমার-পর্যালোচনায় মোট ৪৮২ বার মাঝারি ও মোটা দাগের জলোচ্ছ্বাস, গোর্কি, হারিকেন, সিডর, নার্গিস ইত্যাদি দুর্যোগ দেশের উপকূলকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ১৭৩ বছরে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে ৩২৯ বার।

এসেছে গড়ে ৫-১০ বছর পরপর। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের বিগত ৪৮ বছরে ১৫৩টি ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস ঘটেছে ঘনঘন। সিডর, আইলা, রিজভি, লাইলা, মোরা, তিতলি, ফণী, নার্গিস, বুলবুলের আঘাতে সুন্দরবন পর্যুদস্ত হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ দেশের উপকূলীয় অঞ্চল প্রকৃতির বিরূপ আচরণের প্রথম ও প্রত্যক্ষ শিকার সবসময়।

২০০১ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৯টি উপকূলীয় জেলা। দেশের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের বেশি মানুষ বসবাস করে এ ১৯টি জেলার ১৪৭টি উপজেলায়। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা।

এর মধ্যে সুন্দরবন ১২৫ কিলোমিটার, নদীর মোহনা ও ছোট-বড় দ্বীপমালা ২৭৫ কিলোমিটার, সমতল ও সমুদ্রসৈকত ৩১০ কিলোমিটার। টেকনাফের নাফ নদের মোহনা থেকে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত নদী রায়মঙ্গল-কালিন্দী পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে বিস্তৃত বাংলাদেশের উপকূলেই দেশের প্রধান তিনটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দর (কাজ চলমান)।

দেশের ২৫ শতাংশ জনগণ যেমন এ উপকূল অঞ্চলে বসবাস করে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতে জিডিপির কম-বেশি প্রায় ২৫ শতাংশ অবদানও এ অঞ্চলের। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের এক-দশমাংশ এলাকা উপকূল।

এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে গড়ে ৭৪৩ জন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০ বছরে অন্তত ৬৪ বার হৃদয়ে দাগকাটার মতো বড় ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছে।

১৯৭০ সালের এই দিনে গোর্কি বা ভোলা সাইক্লোনের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮৫ কিলোমিটারে পৌঁছে এবং তা দেশের উপকূল অঞ্চলে আঘাত হানে। ১৫ থেকে ২৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের ফলে দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপগুলো প্লাবিত হয়।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, এ দুর্যোগই সর্বাধিক প্রাণঘাতী ও ক্ষতিবহুল। সেদিনের মায়ের কোল থেকে শিশু সন্তানকে কেড়ে নেয়ার দৃশ্য আজও অনেক বাবা-মা ভুলতে পারেনি। বেঁচে থাকার প্রবল চেষ্টা করেও শেষরক্ষা হয়নি লাখ লাখ মানুষের।

সন্তানহারা পিতা-মাতা, পিতা-মাতাহারা সন্তান, স্বামীহারা স্ত্রী, স্ত্রীহারা স্বামী, স্বজন হারানোর বেদনার স্মৃতিতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিল অনেকে। মনপুরা দ্বীপের ৩২ হাজার মানুষের মধ্যে ২০ হাজার মানুষ সেই ভয়াল রাতে প্রাণ হারিয়েছে। তজুমুদ্দিন উপজেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের মধ্যে বেঁচে ছিল মাত্র ৭৭ হাজার।

বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ সাইক্লোনে ১০ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। ওই সময়ে মানুষ আবহাওয়ার পূর্বাভাসও সঠিকভাবে পায়নি। কারণ আজকের মতো এত শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা সেদিন ছিল না। ঝড় শেষে নতুন করে বেঁচে থাকার লড়াই। খাদ্য নেই, চাল নেই, লবণ নেই; এমনকি রান্নার সরঞ্জামও নেই।

দেরিতে হলেও দেশি-বিদেশি অনেক বন্ধুই ত্রাণ নিয়ে হাজির হন। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রিলিফ নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে আসেন। মনপুরার বশারত উল্লাহ চৌধুরী শাহজাদাকে দেখে বঙ্গবন্ধু কেঁদে ফেলেছিলেন; তার গায়ের মুজিব কোটটি শাহাজাদা চৌধুরীকে দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু মনপুরার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি মনপুরায় চিন্তানিবাসের কাজ শুরু করেছিলেন। মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরপরই চিন্তানিবাসের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

স্বাধীনতা লাভের পাঁচ দশকের মাথায় এসে দেশের সমাজ ও অর্থনীতিতে যত পরিবর্তন তথা সাফল্যজনিত সূচক শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, তার মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন অন্যতম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি।

সে সময় চাষাবাদযোগ্য ২৫৫ লাখ একর জমিতে ১০০ লাখ টন ধান উৎপাদিত হতো। এখন জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি; প্রায় ১৮ কোটি। কিন্তু উৎপাদিত ফসল তিনগুণ। বর্ধিত খাদ্যশস্য উৎপাদন নিঃসন্দেহে খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি বা সাফল্য। এ প্রবৃদ্ধি একটি নীরব বিপ্লবের সাক্ষ্য বহন করে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিতে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষির অবদান তুলনামূলক নিুমুখী। এ অঞ্চলের কৃষি খাত প্রধানত শস্য ও অশস্য (নন ক্রপ) দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমত, বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত হওয়ার কারণে খাদ্যশস্য উৎপাদন তুলনামূলক এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায়নি।

উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়া ও পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও চাষাবাদ পদ্ধতি-প্রক্রিয়ায় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে কাক্সিক্ষত ফল ততটা আসেনি, যতটা অশস্য অর্থকরী খাতে অর্থাৎ মৎস্য চাষসহ প্রাণিসম্পদ ও বিকল্প পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এসেছে।

অশস্য খাতে আপাত ব্যাপক সাফল্যের ফলে কৃষি থেকে গড়পড়তায় জিডিপিতে এখনও সমানুপাতিক হারে অবদান (২৫ থেকে ২৩ শতাংশ) রেখে চলেছে এ অঞ্চল।

অশস্য খাতের এ সাফল্যকে টেকসই করা যেমন প্রয়োজন; একইসঙ্গে শস্য উৎপাদন, জমির সঠিক ব্যবহার, উপায়-উপাদান সরবরাহ, চাষ পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তির সমাবেশ, এমনকি ভূমি প্রশাসনেও সংস্কার আবশ্যক। মোদ্দাকথা, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে, তার গতি-প্রকৃতি বিচার-বিশ্লেষণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উষ্ণায়নের প্রভাবক ক্ষয়ক্ষতিকে যথানিয়ন্ত্রণ ও মোকাবেলা করা সম্ভব না হলে সমূহ সম্ভাবনাময় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের অবদান থেকে অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় অর্থনীতি শুধু বঞ্চিতই হবে না; সময়ের অবসরে জলবায়ুর পরিবর্তন প্রভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এটি গোটা দেশ ও অর্থনীতির জন্য দুর্ভাবনা-দুর্গতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

দেশের তিনটি সামুদ্রিক বন্দর, প্রাকৃতিক সম্পদের স্বর্গ সুন্দরবন, পর্যটন সম্ভাবনাসমৃদ্ধ কক্সবাজার ও কুয়াকাটাকে কার্যকর অবস্থায় পাওয়া জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন অভিযাত্রার জন্য যে কত জরুরি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সিডর ও আইলায় সুন্দরবন ও সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার মানুষ ও অন্যান্য প্রাণিসম্পদের ওপর যে দুর্বিষহ ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়, তাতে উপকূলীয় কৃষি অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।

উপকূলের লড়াকু মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবেলা করেই সাহসের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছে। উপকূলের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে প্রকৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তা সত্ত্বেও এ অঞ্চলের বিদ্যমান সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অফুরন্ত।

ছেঁড়াদ্বীপ, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পতেঙ্গা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ, চর কুকরি-মুকরি, ঢালচর, মনপুরা, চর নিজাম, কুয়াকাটা, হিরণ পয়েন্ট, সুন্দরবনসহ উপকূলীয় বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলকে পরিকল্পিত উপায়ে পর্যটন শিল্পের আওতায় বিকাশ করা সম্ভব।

এ ছাড়াও স্থানীয় খনিজ ও অন্যান্য সম্পদ তেল, গ্যাস, গন্ধক, লবণ, মাছ, শুঁটকি, পান, ধান, সুপারি তো রয়েছেই। উপকূলের ইলিশ মাছের কথা সর্বজনবিদিত। দেশের প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে মৎস্য খাতে জড়িত এবং ১১ শতাংশের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এর ওপর নির্ভরশীল।

দেশের মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে। জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। একক প্রজাতি হিসেবে এখানে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানে এ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৬ শতাংশের বেশি। উৎপাদনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে এককভাবে আমাদের ইলিশ উৎপাদন ৮০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হবে।

২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু হটস্পট, জীবনমানের ওপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।

এ সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ২০ কোটি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ১৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ১৪৭টি উপজেলার উন্নয়নে উপকূল ভাবনায় টেকসই উপকূল বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনজনতি কারণে জরুরি।

উপকূল অঞ্চলের একজন গবেষক হিসেবে ঘনঘন ভূমিকম্প, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের প্রবণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ওঠা, জোয়ারের দীর্ঘস্থায়িত্ব, নদীভাঙন, মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা, সুন্দরী গাছের মড়ক চোখে পড়ে।

বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ নাগরিক যেমন উপকূলে বসবাস করে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতে জিডিপির কমবেশি ২৫ শতাংশ অবদান উপকূলের। জীবন-জীবিকার সঙ্গে প্রকৃতির মেলবন্ধন উপকূলকে আরও ভাবিয়ে তোলে। উপকূলে এমন কিছু বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল রয়েছে, যেখানে বিদ্যুৎ বা সৌর বিদ্যুৎ নেই।

এরকম প্রান্তিক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বা চরগুলোর মানুষের কল্যাণে বিদ্যুতের ব্যবস্থা জরুরি। নদ-নদীর ভাঙন উপকূলীয় জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। নদ-নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ শাসন প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক রাখতে পারলে উপকূল অঞ্চল জাতীয় অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হতো।

উপকূলীয় নদ-নদীর ভাঙনপ্রবণ অঞ্চল চিহ্নিত করে বাঁধ নির্মাণ এবং পুরনো বাঁধ সংস্কার জরুরি। ক্ষেত্রবিশেষে ৬ থেকে সর্বোচ্চ ১০ মিটার পর্যন্ত বাঁধ উঁচু করতে হবে।

উপকূলীয় বাঁধগুলো টেকসই এবং নির্মাণকাজে যথাযথ তদারকি করলে আগামী ১০০ বছরেও এ বাঁধের কোনো ক্ষতি হবে না। টেকসই বাঁধ নির্মাণে উপকূল ও উপকূলের চরাঞ্চলের জীবন ও জীবিকার গতিপথ ত্বরান্বিত হবে।

পাঁচ দশক অতিক্রান্ত হলেও ভয়াল ১২ নভেম্বরের দুর্যোগের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আজও মেলেনি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, ৭০-এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের পাঁচ দশকে সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। ১২ নভেম্বরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘উপকূল দিবস’ হিসেবে পালন করার দাবি বাস্তবায়ন করবে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা পরিমাপ করা হলেও এখন জলবায়ু পরির্বতনের প্রেক্ষাপটে নদীর গতি-প্রকৃতি, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রকৃতিও পরিবর্তিত হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে এখন উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কথা ভাবতে হবে। তাহলে মানুষের জীবনমান উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে।

সমৃদ্ধ উপকূলে ফুটে উঠুক মানুষের মুক্তির হাসি- এ লক্ষ্যে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, ১. নদীভাঙন রোধে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ, নদী শাসন, জিওব্যাগ, ক্রস ডেম বাঁধ, ব্লক ও ড্রেজিং ব্যবস্থা জোরদারসহ তদারকি ২. মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা বিধান, সরকারি উদ্যোগে এগ্রো-বেজড শিল্প-কারখানা স্থাপন; মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের আওতায় আনা ৩. দুর্যোগে নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসনে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, বেড়িবাঁধ

উন্মুক্ত রাখতে সেখানে বসবাসকারীদের নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা ৪. পরিবর্তনশীল জলবায়ু মোকাবেলায় দায়ী দেশগুলোর ওপর প্রবল চাপ প্রয়োগ ও ক্ষতিপূরণ আদায় ৫. বিশ্ববিদ্যালয়ে উপকূল স্টাডিজ নামে নতুন বিভাগ সৃষ্টি, উপকূলে শিক্ষার হার শতভাগ নিশ্চিতসহ উপকূলীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিকাশে পদক্ষেপ গ্রহণ ৬. বর্তমানে অতিমাত্রায় সংঘটিত বজ পাত মোকাবেলায় পরিকল্পিতভাবে তালগাছ রোপণে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ ৭. উপকূল উন্নয়ন বোর্ড বা দ্বীপ উন্নয়ন বোর্ড গঠন ৮. রাষ্ট্রীয়ভাবে ১২ নভেম্বরকে ‘উপকূল দিবস’ হিসেবে ঘোষণা।

আশা করি, অনতিবিলম্বে উপকূলবাসীর কল্যাণে সরকার এ ৮ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।

এম আমীরুল হক পারভেজ চৌধুরী : পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ahcparveydu@gmail.com

 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম