Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

কিছুমিছু: সোনার জুতা রূপার তাজ হচ্ছে দাদা দারুণ কাজ

Icon

মোকাম্মেল হোসেন

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কিছুমিছু: সোনার জুতা রূপার তাজ হচ্ছে দাদা দারুণ কাজ

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিষদের লোকজন বসে আছেন। উদ্দেশ্য- মাননীয় মন্ত্রীর সাক্ষাৎলাভ। কিন্তু চাইলেই কি সবকিছু ‘লাভ’ করা যায়। জানা গেল, মন্ত্রী বাহাদুর আজ দফতরে জুতার ধূলি দেবেন না। ছলিমদ্দি-কলিমদ্দি টাইপের লোকজন নিয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিষদ গঠন করা হয়নি। পরিষদের সবাই সচেতন ব্যক্তি; বিশিষ্ট নাগরিক। দলের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি গম্ভীর কণ্ঠে মন্ত্রীর পিএসের কাছে কৈফিয়ত চাইলেন-

: কেন আসবেন না তিনি? মন্ত্রণালয় কি মামার বাড়ি- যখন খুশি আইলাম, দুধভাত খাইলাম; হাত মুছতে মুছতে চইলা গেলাম!

মনের মধ্যে যাই থাক, ভিআইপিদের পিএস-এপিএসদের চোখ-মুখের ভাব-ভঙ্গিমায় বিনয় প্রকাশ করতে হয়। পিএস তাই করলেন। বিনয়ের সঙ্গে বললেন-

: স্যার, আমাদের স্যারের ক্ষেত্রে অন্তত এই ধরনের কথা খাটে না। তিনি অত্যন্ত কাম-পাগল মানুষ। নিজের দায়িত্ব ও কাজ-কামের ব্যাপারে তিনি খুবই সিরিয়াস। আজ হঠাৎ কইরা একটা সমস্যা হয়ে গেছে।

: কী সমস্যা?

: শিশুদের পাতলা পায়খানা; প্রতিকার ও প্রতিরোধবিষয়ক একটা সেমিনারে যোগ দিতে গিয়েছিলেন স্যার। সেমিনার চলাকালে দাঁতব্যথার শিকার হওয়ার পর স্যারকে অ্যাম্বুলেন্সে করে একজন ডেন্টিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্যার এখন ওখানেই আছেন; ট্রিটমেন্ট চলছে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিষদে কবি নজরুলের মতো ঝাঁকড়া চুলের অধিকারী একজন রয়েছেন। তিনি ভ্রূকুঞ্চিত করে বললেন-

: আপনের বস যে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সেই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শিশুদের পাতলা পায়খানার কী সম্পর্ক?

পিএস আরও বিনয়ী হলেন। দাঁত-লুকানো হাসি হেসে বললেন-

: স্যার, কিছু মনে করবেন না; আপনার কাজ এবং জীবনধারার সঙ্গেও তো বনের পশুপাখি বেমানান।

ঝাঁকড়া চুলে ঢেউ উঠল। পিএসের উদ্দেশে আর্তনাদের সুরে তিনি বললেন-

: আপনে এসব কী বলতেছেন? আপনে কী জানেন- বুদ্ধিজীবীরা হচ্ছেন আফলাতুন? আফলাতুন মানে জানেন তো? আফলাতুন মানে হচ্ছে জ্ঞানী। জ্ঞানী লোকদের চিন্তাধারা ও কাজকর্ম কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। সববিষয়েই তারা ‘সংযুক্ত’ হওয়ার ক্ষমতা রাখে। বুঝাইতে পারছি?

: জি স্যার; জি...

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিষদের সদস্যরা মন্ত্রণালয়ের বড়কর্তার সাক্ষাৎপ্রার্থী হলেন। বড়কর্তার নাম ইলতুৎমিশ ইয়াদিল। মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে ইলতুৎমিশ নামে একজন শাসক ছিলেন। নামের সঙ্গে নাম মিলে যাওয়ায় মরহুম ইলতুৎমিশের যোগ্য মানসপুত্র হিসেবে বড়কর্তা তার দফতর তথা ‘রাজ্য’ পরিচালনা করছেন। রাজদরবারে আসা প্রজাদের কথাবার্তা, অভাব-অভিযোগ রাজা-বাদশাদের গম্ভীর মুখে শুনতে হয়। এটা রেওয়াজ। রেওয়াজ অনুযায়ী ইলতুৎমিশ ইয়াদিল গম্ভীর মুখে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিষদের সদস্যদের কথা শুনছিলেন। পরিষদের আহ্বায়ক জালিনুশাত চৌধুরী ইলতুৎমিশ ইয়াদিলের হাতে একটা দাবিনামা তুলে দিতে দিতে বললেন-

: জনাব, আমরা জানি- মান্যবর মন্ত্রীদের গদি সামলাইতে হয়। দল সামলাইতে হয়। মাঝেমধ্যে গান-বাজনাও করতে হয়। প্রকৃতপক্ষে কাজ-কাম যা করার; তা আপনে ও আপনের অধস্তনরা করে। আপনের হাতে ক্ষমতা আছে; প্লিজ, দেশের বন্যপ্রাণী রক্ষায় একটা কিছু করেন।

নিজেকে রাজা-বাদশা গোত্রের একজন ভাবতে ভাবতে ইলতুৎমিশ ইয়াদিল রাজকীয় আচরণ রপ্ত করে ফেলেছেন। মোঘলে আজম ‘দরবারে আম’-এ উপস্থিত জনতার সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করতেন, তার অনুকরণে ইলতুৎমিশ ইয়াদিল বলে উঠলেন-

: গ্রেট! শ্রেষ্ঠ জীব হওয়া সত্ত্বেও আপনেরা, রাষ্ট্রের বিদগ্ধজনেরা হৃদয়ের গোপন কুঠুরিতে বন্যপ্রাণীর জন্য কী ভালোবাসাই না পুষে রেখেছেন! আমি অবশ্যই এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিষদের লোকজন চলে গেলেন; তবে ইলতুৎমিশ ইয়াদিলের মাথায় দারুণ একটা আইডিয়া দিয়ে গেলেন। নতুন আইডিয়া মানেই নতুন সম্ভাবনা। সম্ভাবনার ক্যানভাসে ছবি আঁকা শেষ করে ইলতুৎমিশ ইয়াদিল মন্ত্রণালয়ের মেজোকর্তাদের ডাকলেন। সবাই উপস্থিত হওয়ার পর তিনি বললেন-

: সবাই মন দিয়া শুনেন; নতুন একটা প্রকল্পের আইডিয়া পাইছি।

নতুন প্রকল্পের কথা শুনে মেজোকর্তাদের একজন, ইসতেনজার আলী ঢোক গিলে বললেন-

: স্যার! চলমান প্রকল্পগুলোই মরা ব্যাঙের মতো চিৎ হইয়া পইড়া রইছে, এর মধ্যে নতুন প্রকল্প হাতে নিলে...

ঠোটজোড়ায় রহস্যময় হাসি আমদানি করে ইলতুৎমিশ ইয়াদিল বললেন-

: অন্য কোনো প্রকল্পের সঙ্গে এই প্রকল্পের তুলনা করা ঠিক হবে না। আপনেরা জানেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে দুইটা পয়সা দেয় বইলা বিদেশিরা সুযোগ পাইলেই তার মধ্যে বামহাত ঠেইলা দেয়। এইটার ক্ষেত্রে সেইরকম কিছু ঘটবে না। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে শতভাগ দেশীয় অর্থায়নে। এইখানে আপনেরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন।

মেজোকর্তাদের মধ্যে সুখলাল ঠাকুর বলে একজন আছেন। স্বাধীনভাবে কাজ করা যাবে শুনে সুখলাল ঠাকুর অত্যধিক সুখ পেলেন। মনের ভেতর তৈরি হওয়া সুখের প্রবল উত্তেজনা অন্য কাউকে বুঝতে না দিয়ে ঠাকুর জানতে চাইলেন-

: প্রকল্পের সাবজেক্ট কী স্যার?

: বাঘ।

: বাঘ!

: ইয়েস, বাঘ; দ্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

প্রকল্পের সারসংক্ষেপের উপর চোখ বুলিয়ে মন্ত্রী মহোদয় অবাক হলেন। ইলতুৎমিশ ইয়াদিলের উদ্দেশে বললেন-

: যথা তথা বাঘ প্রকল্প? খাইছে আমারে! সুন্দরবনের বাঘ সারা দেশে ছড়াইয়া দেওয়ার মতলব করছেন নাকি?

ইলতুৎমিশ ইয়াদিল মুচকি হেসে বললেন-

: স্যার! আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই; এই প্রকল্পের দুইটা সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হইছে। একটা হইল জনপদীয় সংজ্ঞা। অন্যটা হইল আরণ্যক সংজ্ঞা।

: বুঝলাম না।

: স্যার! জনপদীয় সংজ্ঞার ফিগার হইল আমাদের ক্রিকেটাররা। টাইগার নামে পরিচিতি পাওয়া ক্রিকেট খেলোয়াড়দের বিচরণ শুধু খেলার মাঠেই সীমাবদ্ধ নয়। বহুজাতিক কোম্পানির খপ্পরে পইড়া তারা প্রসাধন সামগ্রী, ঠাণ্ডা পানীয়- এমন কী মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এনার্জি ড্রিংকের বিজ্ঞাপনেও মডেল হইয়া টেলিভিশনের পর্দা, বিলবোর্ড, খবরের কাগজ ইত্যাদি মাধ্যমে বিরামহীনভাবে নিজের চেহারা মোবারক দেখাইতেছে। স্যারের কাছে আমার সবিনয়ে জানার বিষয় হইল, এইটা কি যথা তথা বাঘ- এই বক্তব্যরে সমর্থন করে না?

: তা করে।

: স্যার! এইবার আসেন আরণ্যক সংজ্ঞায়। দুই-আড়াইশ’ বাঘ লইয়া সুন্দরবন ধুঁইকা-ধুঁইকা মরতেছে। আমাদের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হইলে সুন্দরবনের গাছের চিপায়, পাতার ফাঁকে শুধু বাঘ আর বাঘ দেখা যাবে।

ইলতুৎমিশ ইয়াদিলের কথা শুনে মন্ত্রী মহোদয়ের হেঁচকি উঠে গেল। আউক-আউক চলাকালে এক ফাঁকে তিনি কোনোমতে উচ্চারণ করলেন-

: এত বাঘ আপনে কোথায়, কীভাবে পাবেন? বাঘ তো উঁইপোকা না, সেকেন্ডে-সেকেন্ডে ডিম পাড়বে!

: স্যার! চিরায়ত প্রজনন কৌশল অবলম্বন কইরা এই প্রকল্পে সংখ্যা বৃদ্ধি তত্ত্ব উদ্ভাবন করা হয় নাই।

: তাইলে কি ক্লোন পদ্ধতি অবলম্বন করবেন?

: জি না স্যার।

: আরে! আপনে তো আমারে চরকির মধ্যে ফেলাইয়া দিলেন। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির কৌশল সম্পর্কে প্রকল্পের ধারণাপত্রে কী লেখছেন দেখি!

: স্যার! ধারণাপত্রে বিষয়টা গোপন রাখা হইছে।

: কেন!

: স্যার! আপনে তো আমাদের মিডিয়ার চরিত্র সম্পর্কে জানেন! এরা যদি কোনোমতে ভিতরের কথা একবার জানতে পারে, তাইলে বিষয়টা লইয়া এমনভাবে কচলাইতে থাকবে; এতে প্রকল্পের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

: তাইলে ‘অব দ্য রেকর্ড’ মুখে বলেন। নাকি তাও বলা যাবে না।

: মুখে বলা যাবে। আমাদের এই প্রকল্পের অভীষ্ট হইল, সুন্দরবনে কোনো জিন্দা বাঘ থাকবে না।

: জিন্দা বাঘ থাকবে না! কোথায় যাবে তারা?

: চিড়িয়াখানায়।

: চিড়িয়াখানায়! সেইখানে স্থানান্তর করলে বাঘগুলা তো ছয়মাসও টিকবে না। চিড়িয়াখানায় খাবার, ওষুধপত্র ও রক্ষণাবেক্ষণ লইয়া নানা রকমের ঘাপলা হয়।

: চিড়িয়াখানায় হিজরত করার পর ব্যাঘ্রকুল বাঁচল, না মরল- ভাবছেন সেই ব্যাপারে আমরা উদাসীন থাকব! অবশ্যই না। নদীর ওপর বড় বড় সেতু তৈরির পর যেমন নদী শাসনের একটা ব্যাপার থাকে; ঠিক তেমনি এই প্রকল্পের আওতায় বাঘ শাসন করা হবে। চিড়িয়াখানার একপাশে একটা অভয়ারণ্য সৃষ্টি কইরা সেইখানে তাদের অবমুক্ত করা হবে। রেডিও কলারসহ অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তাদের বিটলামি নজদারির পাশপাশি তারা মানবসৃষ্ট কোনো অবহেলার শিকার হইতেছে কিনা, সেইটা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

: তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু সুন্দরবনে বাঘ থাকবে না, এইটা কী কইরা হয়?

: বাঘ থাকবে না কে বলল স্যার! বাঘ অবশ্যই থাকবে। তবে তাদের দেহে আত্মা থাকবে না। এই বাঘ তৈরি হবে পাথর দ্বারা। পাথরের তৈরি বাঘগুলারে আমরা বনের মধ্যে কয়েক ফুট দূরে দূরে স্থাপন করব।

: বলেন কী! অরিজিনাল বাঘ থাকার পরেও সুন্দরবনের ওপর যে পরিমাণ অত্যাচার চলে, নকল বাঘের সমাবেশ ঘটাইলে তো লুটেরারা অল্পদিনেই সুন্দরবন সাফা কইরা মরুভূমি বানাইয়া ফেলবে।

: স্যার! বনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার কথা বলা হইছে। এই লক্ষ্যে সেইখানে কয়েক হাজার পুলিশ নিয়োগ করা হবে।

: পুলিশ? এই দেশে পুলিশ দিয়া কোনোকিছুর সুরক্ষা হয়? কুমির তো শুধু খাওয়ার সময় মুখ হা করে; আর আমাদের পুলিশ সারাক্ষণই মুখ হা কইরা রাখে। উহু! পুলিশে রক্ষা হবে না।

: স্যার! নিষ্প্রাণ বাঘের কথা তো গোপন থাকবে। এইসব কথাবার্তা আমি আপনেরে ‘অব দ্য রেকর্ড’ বললাম। এই কথা আমি, আপনে ও প্রকল্প পরিচালকসহ গুটিকতক লোক ছাড়া আর কেউ টের পাবে না। ওহো স্যার! মিসটেক করলাম; আর টের পাবে হরিণ। হরিণের পাল যখন দেখবে- দেখনদারিতে বাঘ হইলেও অ্যাকশনে তারা বাঘ না; তখন বুঝতে পারবে- ওইগুলার মধ্যে ‘জান’ নাই। স্যার! এই হরিণই হইল এই প্রকল্পের ম্যাজিক বল।

: কী রকম!

: স্যার, ইন্ডিয়া আমাদের দেশে গরু পাঠানো নিষেধ কইরা দিছে। অবস্থা এই সিস্টেমে চলতে থাকলে গরুর গোশত দিয়া ভাত-বিরানি খাওয়া দুরূহ হইয়া পড়বে। কিন্তু আমাদের যথা তথা বাঘ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকায় দেশের মানুষ ইন্ডিয়ারে দেখাইয়া দেখাইয়া তিনবেলা হরিণের গোশত খাইতে পারবে।

দেশবাসীকে সারা বছর হরিণের গোশত খাওয়ানোর আনন্দে ভাসতে ভাসতে মন্ত্রী মহোদয় যথা তথা বাঘ প্রকল্পের সারসংক্ষেপ অনুমোদন করলেন। কিছুদিন পরে মন্ত্রণালয়ের মেজোকর্তাদের সঙ্গে ইলতুৎমিশ ইয়াদিল মিটিংয়ে বসলেন। বললেন-

: যথা তথা বাঘ প্রকল্প সামনে রাইখা ৬০ সদস্যের একটা প্রতিনিধি দল ইউরোপ-আমেরিকা-মিসরসহ আফ্রিকার কয়েকটা দেশ সফর করবে। তারা সেখানে বাঘদের চলাফেলা ও বসাভঙ্গি-খাওয়াভঙ্গির ছবি তোলার পাশাপাশি ওইসব দেশের বিখ্যাত ভাস্কর্যশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলবে। প্রতিনিধি দলে নারী কোটায় আমার মিসেস, মিসেসের ছোট বোন, ভাগ্নি ও কয়েকজন বান্ধবীর নাম ঢুকাইয়া দিছি। মন্ত্রী মহোদয় নিজে এইবার বিদেশ সফরে যাবেন না, তবে তিনিও একটা লিস্ট দিছেন। তার পিএস, এপিএসও একটা কইরা লিস্ট ধরাইয়া দিছে। আপনেরা এইগুলা যাচাই-বাছাই শেষে তালিকাটা ফাইনাল কইরা ফেলেন।

প্রতিনিধি দল বিদেশ সফর শেষ করে আসার কিছুদিনের মধ্যে যথা তথা বাঘ পাই প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করার কাজ হাতে নেয়া হল। টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার আগে সুখলাল ঠাকুর ইলতুৎমিশ ইয়াদিলকে বললেন-

: স্যার! গ্রানাইট পাথর দিয়া বাঘ বানাইলে পুরো টাকা প্রকল্পের পেছনে খরচ হয়ে যাবে। আমাদের ভাগে কিছুই থাকবে না।

ঠাকুরের কথায় ইলতুৎমিশ ইয়াদিল অবাক হয়ে বললেন-

: গ্রানাইট পাথর দিয়া বাঘ বানাইতে কে বলছে আপনেরে?

: লেখা আছে স্যার।

: লেখালেখির গুল্লি মারেন। ঠিকাদারের সঙ্গে থার্টি-সেভেনটি রেটে সবকিছু ফাইনাল কইরা বলেন- তোমার ভাগের থার্টি পার্সেন্টের মধ্যে মন্ত্রী মহোদয়সহ আমরা যারা এই প্রকল্পের যুক্ত, তাদের একজোড়া কইরা সোনার তৈরি জুতা আর আর রূপার তৈরি মুকুট উপহার দিয়া যে টাকা বাঁচবে; তার বড় অংশ বিদেশে পাচার কইরা বাদবাকি টাকায় মাটির তৈরি বাঘ সাপ্লাই দিবা। ওই যে, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বিদেশী বন্ধুদের উপহার দেয়া স্বর্ণের সম্মাননা ক্রেস্ট তৈরির সময় যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হইছে, এই প্রকল্পেও সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

সুখলাল ঠাকুর বলল-

: স্যার! এতে একটা সমস্যা আছে। মাটির বাঘ তো অল্পদিনেই ভাইঙ্গাচুইড়া নষ্ট হইয়া যাবে।

নষ্ট হওয়ার কথা শুনে ইলতুৎমিশ ইয়াদিল মুচকি হেসে বললেন-

: আরে পাগল! নষ্ট না হইলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অটুট থাকবে কী কইরা? প্রকল্প বাস্তবায়নের কিছুদিনের মধ্যে সেইটা নষ্ট হইয়া যাবে। এরপর আবার নতুন কইরা প্রকল্প প্রণয়ন করা হবে। আবার নতুন উদ্যমে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এরপর আবার নষ্ট হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে এই সিস্টেমেই সবকিছু চলতে থাকবে।

মোকাম্মেল হোসেন : সাংবাদিক

mokamia@hotmail.com

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম