দুই দেশের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হবে তো?
এ কে এম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সংবাদমাধ্যমে চারদিনের ব্যবধানে দুটো আশাপ্রদ খবর বেরিয়েছে। খবর দুটোর একটি হল, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের একাধিক অমীমাংসিত বিষয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য।
অপরটি, হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারতের নাগরিকপঞ্জি বিষয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে খবর।
১১ সেপ্টেম্বর একাদশ সংসদের বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে অনিষ্পন্ন ইস্যু শিগগিরই সমাধান হবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। ফলে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং উন্নয়নের নতুন নতুন দুয়ার উন্মোচিত হচ্ছে। উভয় দেশের মধ্যে অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলো সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী। আশা করি আমার ভারত সফরের আগেই ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে।’
২০১৭-১৮ সালে ভারত সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা সমাধানে তার অঙ্গীকারের কথা যে পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা উল্লেখ করেন। ভারত সফরকালে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এ বিষয়ে আবারও আলোচনা করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। এখন দেখার বিষয় ভারত তাদের প্রতিশ্রুতি কতটুকু রক্ষা করে।
বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে দাবিদার ভারত আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সব প্রত্যাশা পূরণ করবে বলে আমরাও আশাবাদী হতে চাই।
নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর আসামে নাগরিকপঞ্জি নিয়ে যা কিছু ঘটছে বাংলাদেশের জন্য তা অস্বস্তিকর বৈকি। বিশেষ করে বিজেপির উচ্চপর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে নিুপর্যায়ের কর্মীর মুখে নাগরিকপঞ্জিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশবিরোধী যে বক্তব্য শোনা যায় তা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু বিজেপি কেন, আমাদের দেশেও কিছু সংগঠন আছে যাদের বাংলাদেশবিরোধী আচরণও গ্রহণযোগ্য নয়। পাশাপাশি নাগরিকপঞ্জি নিয়ে আমাদের দেশের কিছু মুখচেনা ব্যক্তির দেয়া বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বক্তব্য সত্যিই দুঃখজনক। মাঝে-মধ্যে মনে প্রশ্নের উদয় হয়, এ দেশের খেয়ে-পরে, এ দেশের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এরা কাদের পক্ষে কাজ করছেন?
হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, আসামের জাতীয় নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া বাঙালিদের নিয়ে ঢাকার উদ্বেগ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
তারা মনে করেন, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় শেখ হাসিনা আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষের ফেরত পাঠানোসংক্রান্ত বাংলাদেশের উদ্বেগ তুলে ধরবেন। এরকম মনে করার কারণও তারা উল্লেখ করেছেন।
আসামের রাজনীতিবিদদের কিছু বালখিল্য বক্তব্যের কারণেই নাগরিক তালিকা নিয়ে বাংলাদেশের এ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে পত্রিকাটি মনে করে। বিশেষ করে আসাম রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ‘আসামে অবৈধভাবে বসবাসরত নাগরিকদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশকে বোঝাবে ভারত,’ বক্তব্যটি উদাহরণ হিসেবে তারা খবরে উল্লেখ করেছে।
ভারতের পত্রিকাটি বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা যেমন গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে, সে তুলনায় বাংলাদেশ সরকার কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন বলে মনে হল না।
কারণ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর শেষে আসামের নাগরিক তালিকা থেকে ১৯ লাখ মানুষের বাদ পড়ার বিষয়টি ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলার পর আমাদের সংশ্লিষ্টদেরও একই সুরে কথা বলতে শুনেছি। সবকিছু মিলে মনে হয়েছে যত উদ্বেগ, যত দুশ্চিন্তা কেবল এ দেশের সাধারণ মানুষেরই।
আওয়ামী লীগের একটানা তৃতীয় মেয়াদ এবং বিজেপির দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার কথা উল্লেখ করে হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, মোদি ও হাসিনার নেতৃত্বে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক দিন দিন আরও জোরদার হয়েছে।
যৌথভাবে দুই নেতা বেশকিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। দুই দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে নানা প্রকল্প চালু হয়েছে এ দুই সরকারের মেয়াদে। ধারণা করা যায়, এবারের সফরে আগের মতো তিস্তাচুক্তিসহ অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনা হবে দুই নেতার মধ্যে।
আমরাও চাই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সব বিষয় নিয়েই ফলপ্রসূ আলোচনা হোক এবং ভারতের দেয়া প্রতিশ্রুতি শুধু মুখে নয়, বাস্তবেও তার প্রতিফলন ঘটুক। তবে এটা ঠিক, প্রতিবার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে অনেক আশার কথা আমরা শুনতে পাই; কিন্তু তা বাস্তবায়ন হতে দেখি না। ভারত বরাবরের মতোই মুখে মুখে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেয় না।
এসব কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখন আর ভারতের কোনো প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করতে চায় না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ থেকে ভারত নানাবিধ সুবিধা যে হারে নিয়েছে, বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রাপ্য খুব অল্পই তারা দিয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে এ সংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণীয় বক্তব্যটি ছিল, ‘ভারত না চাইতেই বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু পেয়ে গেছে।’
একথা সত্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। অস্বীকার করলে বরং ইতিহাসকে অস্বীকার করা হবে। কিন্তু এ কথাও সত্য, ভারত তার নিজ স্বার্থ ছাড়া ওই সময়ে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। যদি একথা মানতে হয়, ভারত নিঃস্বার্থভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে, তাহলে প্রকৃত ইতিহাসের অপলাপ করা হবে।
ভারত বাংলাদেশকে বন্ধুরাষ্ট্র বিবেচনা করলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সবসময় বন্ধুসুলভ আচরণ করেনি। আন্তর্জাতিক সব আইনকানুন ও নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে উজান থেকে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে।
ফারাক্কা ও তিস্তাসহ আরও অন্যান্য নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কলকাতা বন্দরের নাব্য বৃদ্ধির নাম করে ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র ৪১ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধের সব ফিডার ক্যানেল খুলবে বলে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারকে জানিয়েছিল ভারত।
পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু করা ভারতের এ পদক্ষেপটি ছিল সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক। কারণ ভারত সেই যে বাঁধ চালু করেছিল তা আজও অবধি চলমান। কেবল ৩০ বছরের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল মাত্র। ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রাপ্য পানির অংশ পাওয়া তো দূরে থাক, ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ কখনও তার হিস্যার পানি পায়নি।
ভারত দু’মুখো নীতি মেনে চলে। তার সাম্প্রতিক প্রমাণ হল ব্রহ্মপুত্রের উজানে তিব্বতে চীন যে ‘জাংমু ড্যাম’ নামক বাঁধ নির্মাণ করেছে সে ব্যাপারে ভারতের অবস্থান। উজানের দেশ হিসেবে ভাটির দেশ ভারতকে না জানিয়ে, সম্মতি বা চুক্তি না করে এ প্রকল্প নির্মাণ করে চীন আন্তর্জাতিক প্রথা ও বিধির লঙ্ঘন করেছে বলে ভারত অভিযোগ করেছে। শুধু তাই নয়, চীনের সঙ্গে ভারতের এ পানিবণ্টনের মামলায় ভারত বাংলাদেশকে পাশে চাইছে।
বাংলাদেশ যদি ভারতের পাশে দাঁড়ায় তাহলে পানির এ মামলাটি আন্তর্জাতিক মহলে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং চীনের বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে ভারতের হাত আরও শক্ত হবে। অথচ ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ভারত শুধু বঞ্চিতই করেনি, বাংলাদেশ পানিবণ্টন চুক্তি করতে চাইলে ভারত তা অগ্রাহ্য করেছে। তিস্তার পানি নিয়ে চুক্তি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও এযাবৎ ভারত শুধু টালবাহানাই করে যাচ্ছে।
অবাক হতে হয় আসামের নাগরিক সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশে গজিয়ে ওঠা কিছু সংগঠন ও ভারত তোষণকারী কিছু চিহ্নিত ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া দেখে। নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর আগ বাড়িয়ে তালিকায় বাদ পড়া বাঙালিদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান করে এসব লোক তাদের আসল চেহারা উন্মোচন করে দিয়েছে।
এদের চরিত্রটি এমন যে, দিল্লিতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় বসে তারা ছাতা খুলে তুলে ধরেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে যেখানে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, যাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় ওঠেনি, তাদের ‘স্টেটলেস’ বা রাষ্ট্রহীন বলা যাবে না। আইনত ‘বিদেশি’ও বলা যাবে না।
যে যে সুবিধা তারা ভোগ করে আসছে, তাতে কোনো রকম হেরফের ঘটানো হবে না। তালিকায় নাম না থাকা মানুষজনকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেয়া হবে। অথচ সেখানে বাংলাদেশের একটি সংগঠন দাবি করেছে, নাগরিকপঞ্জি থেকে যেসব হিন্দু বাঙালির নাম বাদ পড়েছে, তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক। তাদের যুক্তি, এর ফলে বাংলাদেশে হিন্দুর সংখ্যা বাড়বে।
আসাম থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক যুগশঙ্খে’ নামক পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এক সংগঠনের মহাসচিব এ দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, ‘বাদ পড়া বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
এখানে বলে রাখা ভালো, বিজেপি যে উদ্দেশে নাগরিকপঞ্জি করেছে তা যে পুরোপুরি সফল হয়নি এ তালিকা বের হওয়ার পরপরই তা বোঝা গেছে। কারণ ১৯ লাখের মধ্যে ১১ লাখ হিন্দু বাঙালি তালিকা থেকে বাদ পড়ার পর থেকেই আসাম বিজেপির নেতাদের সুর এখন কিছুটা নরম শোনা যাচ্ছে।
৩১ আগস্ট নাগরিকপঞ্জির যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা চূড়ান্ত তালিকা হিসেবে গ্রহণ করতে নারাজ বিজেপিশাসিত আসাম রাজ্য সরকার। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র কমিশনার বলেছেন, নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের দায়িত্ব ‘রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার’ (আরজিআই)।
আরজিআই যতক্ষণ না চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করছে ততক্ষণ এ তালিকার কোনো আইনি গ্রহণযোগ্যতা নেই। এছাড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া নাগরিকদের নাম অন্তর্ভুক্তির যে সুযোগ রাখা হয়েছে সে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কারা বাদ পড়ছেন তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
সে বিচারে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে আগ বাড়িয়ে বর্তমান তালিকায় বাদ পড়া হিন্দু বাঙালিদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার যে আহ্বান জানানো হয়েছে তার পেছনে কোনো অভিসন্ধি আছে কিনা তা খোঁজ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে হয়।
বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেড়েছে সন্দেহ নেই। এর রাজনৈতিক কারণ যাই থাকুক, এ দেশের সাধারণ মানুষ যে এটিকে ভালো চোখে দেখছে না তা অনুমান করা যায়।
বাংলাদেশ থেকে ভারতের একতরফা সুবিধা আদায় এবং এর বিপরীতে ভারতের ধারাবাহিক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষের মনে ভারত সম্পর্কে সংশয় আরও প্রবল হয়েছে। তবে ভারত বাংলাদেশের মানুষের মনোভাবকে কতটুকু মূল্য দেয় তা বিবেচ্য বিষয়। ভারতের এহেন আচরণ দেখে মনে হয় জনগণের চেয়ে সরকারি পর্যায়ের সুসম্পর্ককেই ভারত বেশি গুরুত্ব দেয়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কাশ্মীরসংক্রান্ত ৩৭০ ধারা অবলুপ্তিতে বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতিতে ভারত সন্তুষ্ট। বাংলাদেশের জনগণের মনোভাব যাই থাকুক না কেন সরকার এটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেছে। ভারত এতেই খুশি।
বাংলাদেশের এ সমর্থনটুকু ভারতের প্রয়োজন ছিল। অন্তত পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার জন্য হলেও। বাংলাদেশ সরকারের এ বিবৃতিই প্রমাণ করে, কূটনৈতিকভাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারি বা প্রশাসনিক স্তরে কতটুকু মধুর সম্পর্ক। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশের মানুষ মনে করে প্রধানমন্ত্রীর অক্টোবরের সফরে ভারতের সঙ্গে আমাদের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর একটি ব্যবস্থা হবে।
এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরাও বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক বিজয় দেখতে চাই; কিন্তু যদি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির আশু ব্যবস্থা এবং আসামের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে ভারতের স্পস্ট বক্তব্য না পাওয়া যায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর বাংলাদেশের জন্য কতটুকু সুফল বয়ে নিয়ে আসবে সে সংশয় কিন্তু মানুষের ভেতর থেকেই যাবে।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা