Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

ডাকসু কি শুধুই অতীত?

Icon

ড. এম এ মাননান

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সময় তখন এমন, যখন এদেশের রাজনীতির ঈশানকোণে জমতে শুরু করেছে ভয়ঙ্কর কৃষ্ণমেঘ। একইসঙ্গে চলছে আইয়ুব খানের উন্নয়ন দশকের ডামাঢোল। পাকিস্তানি পত্রিকায় সাড়ম্বরে প্রচারিত হচ্ছে উন্নয়নের জোয়ারে (?) কীভাবে পাকিস্তান নামক দেশটি সয়লাব হচ্ছে তার সচিত্র বিবরণ। এ রকম একটি সময়ে ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই ক্লাস শুরু আমার প্রথম বর্ষ অনার্সের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্য বিভাগে। পরিচিতি অনুষ্ঠানে জানতে পারলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ যা ডাকসু নামে সমধিক পরিচিত। এর সহ-সভাপতি (ভিপি) তখন তোফায়েল আহমেদ নামে একজন তুখোড় ছাত্রনেতা, যার নেতৃত্বে প্রণীত হয়েছে ছাত্রদের এগার দফা আর শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের ছয় দফার আন্দোলন। এ অনুষ্ঠানেই জানলাম, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মাথায় ১৯২৪ সালে ডাকসুর প্রথম কার্যক্রম শুরু। বাংলাদেশের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত প্রায় নিয়মিতই ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। এরপর থেকেই শুরু হয় নির্বাচন না হওয়ার সংস্কৃতি। সাতাশ বছর ধরে এ সংস্কৃতি বহমান।

বর্তমান প্রজন্মের কাছে ডাকসু নির্বাসিত এক নাম। একই অবস্থা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও। ছাত্র সংসদের অবর্তমানে সারা দেশেই ছাত্র রাজনীতি হয়ে পড়েছে প্রাণহীন, নির্জীব হয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যকার নেতৃত্ব বিকাশের সব লক্ষণ। অপ্রস্ফুটিত থেকে যাচ্ছে তাদের গণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনার কুঁড়িগুলো। হারিয়ে ফেলছে তারা সৃষ্টিশীল মতামত দেয়ার মানসিকতা। আর রাজনীতিবিমুখ প্রজন্ম তৈরি হওয়ার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে জাতীয় নেতৃত্বে শূন্যতা। এমন পরিবেশে সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে নিয়ে যাচ্ছে, যার প্রতিফলন আমরা দেখেছি বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে। অথচ সবাই জানেন, রাজনীতি যদি রাজনীতিকদের হাতে না থাকে, তাহলে একটা দেশে কখনও পরিশীলিত রাজনীতির বিকাশ ঘটে না এবং সূত্রপাত হয় রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার। নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে পেশিশক্তি আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চলে যেতে পারে বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর কব্জায়। ফলে নির্ঘাত এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শিক্ষা পরিবেশের ওপর। ইতিমধ্যে পড়া শুরুও হয়েছে। কেন এমনটি হচ্ছে? ইতিহাস সাক্ষী, ডাকসুর বদৌলতে জন্ম হয়েছে অনেক বাঘা বাঘা জাতীয় নেতার। ডাকসুতে যারা বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা জাতীয় সংকটের সময়ে অনেক অবদান রেখেছেন। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তারা তাদের অনবদ্য অবদানের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

আমি নিজে ডাকসুর নেতৃত্বে সংঘটিত একটি স্মরণীয় দিনের অবিস্মরণীয় নেতৃত্বমূলক ঘটনার সাক্ষী। ঘটনার দিন ২ মার্চ, ১৯৭১। ডাকসু ভিপি আসম আবদুর রব ডাকসুর সব সদস্যকে নিয়ে কলা ভবনের সামনের ঐতিহাসিক বটতলায় অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে সবুজের বুকে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করলেন। এ পতাকাই পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এ সেই ডাকসু, যার নেতারা মুক্তিযুদ্ধে অচিন্তনীয় ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সারির রাজনীতিবিদদের বড় অংশই ডাকসুসহ তৎকালীন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের তৈরি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে, গণতন্ত্রের চর্চা উৎসাহিতকরণে, গুণগত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জাতির প্রয়োজনে নেতৃত্বের হাল ধরার জন্য নিজস্ব ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিতে ডাকসু সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে, যে কারণে ডাকসুকে বলা হতো দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট/মিনি পার্লামেন্ট। এত মহৎ উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও কেন হারিয়ে যাচ্ছে সেই ডাকসু?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের ১৯৬২-এর কালাকানুন বাতিল করে ১৯৭৩ সালে একটি অনবদ্য আইনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সত্যিকারের স্বায়ত্তশাসিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে দিয়েছেন। ডাকসু সেই গণতান্ত্রিক কাঠামোরই একটি অপরিহার্য অংশ। ডাকসু ছাড়া সিনেট অপূর্ণাঙ্গ। সাতাশ বছর ধরে অপূর্ণাঙ্গ সিনেট দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় চলছে। কারও তেমন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। কেউ কেউ বলেন, গ্রিন সিগন্যাল নেই তাই নির্বাচন হয় না। আবার কেউ কেউ বলেন, নির্বাচন দিলেই লাশ পড়বে, সুতরাং দরকার কী ঝামেলায় যাওয়ার। অন্যরা প্রশাসনের অনীহার কথা বলেন। বোঝাতে চান, ভিসি নির্বাচন দিলেই তো পারেন, দেন না কেন? কথার ধরন দেখে মনে হয়, ভিসি নির্বাচন দিলেই খুব সুন্দরভাবে নির্বাচন হয়ে যাবে, সবাই সুশান্ত হয়ে ভোট দেবে, সব ছাত্রছাত্রীর মুখে হাসি উপচে পড়বে আর দেশের জনগণ হাততালি দিয়ে বাহবা দেবে। এত সরল সমীকরণ একেবারেই হাস্যকর।

বিষয়টি আরও বোধগম্য করার জন্য একটু পেছনে ফিরে তাকাই। ১৯৯১ সালের ১২ জুন তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা ডাকসু তফসিল ঘোষণা করেছিলেন। ওই সময় কিছু ছাত্র (?) কর্তৃক তাদের ছাত্রত্ব বজায় রাখতে বিশেষ ভর্তির দাবি তোলা নিয়ে উদ্ভূত সহিংসতায় নির্বাচন ভণ্ডুল হয়ে যায়। ১৯৯৪ সালে ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেও ছাত্রলীগ কর্তৃক নির্বাচনের পরিবেশ না থাকার অভিযোগ আনার কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়। ১৯৯৫ সালে তফসিল ঘোষণা হলেও নির্বাচন হয়নি। ভিসি অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী ১৯৯৮-এর ২৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের তারিখ নির্দিষ্ট করে দেয়ার পরও নানা মহলের চাপ ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বাধায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচন আর হয়নি। ২০০৫-এর ডিসেম্বরে ভিসি অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেও ছাত্রলীগের বিরোধিতায় তা আর সম্ভব হয়নি। এরপর আর কোনো ভিসি সক্রিয় উদ্যোগ নেননি বা নিতে পারেননি। এ-ই যদি হয় ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার ইতিহাস, তাহলে বর্তমান সময়ে নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য করণীয় কী? বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির হালচাল, নেতানেত্রীদের দৃশ্যমান মনমানসিকতা, যে কোনো সরকার ভালো কিছু করলেও বিরোধিতার খাতিরে তার ঘোর বিরোধিতা করার মনোবৃত্তি, ছাত্র নেতৃত্বের দৈন্যদশা, ছাত্র রাজনীতিতে অছাত্রদের দাপুটেপনা, স্বাধীনতাবিরোধীদের ছদ্মাবরণে বিভিন্ন দলে অনুপ্রবেশ ও জঙ্গিপনায় উসকানিদান ইত্যাদি সমসাময়িক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এখানে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরছি।

নির্বাচনের আগে : ১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডার, ১৯৭৩ অনুযায়ী ডাকসু নির্বাচন নির্ভর করে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বিধায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিংবা অন্য কোনো সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের কিছুই করার নেই। সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হলে নির্বাচন হতে বাধ্য। তাই প্রথম পদক্ষেপ আসতে হবে সিন্ডিকেট থেকে। ২. নির্বাচনের পূর্বে ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীদের সহঅবস্থান নিশ্চিত করা জরুরি। তবে এটি সহজ বিষয় নয়। অন্তরে বিষ নিয়ে মুখে মধুর ভাষায় কথা বললে ছাত্রনেতারা কখনও সহঅবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবেন না। ক্ষমতাসীন দল ব্যতীত অন্য দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা যেখানে ক্যাম্পাসে ঢোকারই সাহস পায় না, সেখানে হলের অভ্যন্তরে সহঅবস্থান কীভাবে সম্ভব? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে এমনটি হওয়ার তো কথা নয়। বিশেষভাবে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের পজিটিভ ভূমিকা রাখা অপরিহার্য। আসলে মন থেকে কোনো রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হলে, নিজ দলকে সত্যিকারের ভালোবাসলে, দেশের প্রতি মমতা থাকলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করলে, গণতন্ত্রের চর্চা করলে, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকলে ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ ধরনের কাজ কখনও করতে পারেন না। ৩. শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নিবন্ধিত ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। ৪. সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের জিহ্বা সংযতকরণ অপরিহার্য। একের প্রতি অপরের খিস্তিখেউরি আর অশোভন শব্দ ব্যবহার একদিকে যেমন শিক্ষার্থীসুলভ নয়, তেমনি অন্যদিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করারও উৎস। এ ব্যাপারে সব দলের নেতারা ভিসির সামনে গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন। ৫. ক্যাম্পাসের পরিবেশ ছাত্র রাজনীতি চর্চার উপযোগী করার লক্ষ্যে প্রশাসনের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। সংগঠনগুলো ক্লাসকক্ষ থেকে দূরের কোনো উš§ুক্ত স্থানে সভা করবে। কাউকে জোর করে কোনো সভায় বা মিছিলে নেয়ার গণতন্ত্রবিরোধী বদচর্চাটি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। ৬. ছাত্র সংগঠনগুলো থেকে অছাত্র বিতাড়ন ও ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, এ কাজটি করবে কারা? করবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলো যদি সত্যিকার অর্থেই চায়, এ দেশের তরুণ সম্প্রদায় সুশিক্ষিত মানুষ হয়ে উঠুক, তাহলে তারা এ কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে করবে। ৭. ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতৈক্য থাকতে হবে। নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক, সবাইকে গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে ফল মেনে নেয়ার প্রতিশ্র“তি দিতে হবে। ৮. নির্বাচনের বেশ আগে থেকেই প্রতিটি আবাসিক হলে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। ৯. ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে নির্বাচনের আগে-পরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য সবাইকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের স্ট্র্যাটেজিক নেতৃত্বের প্রয়োজন হবে। ১০. ক্যাম্পাসে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন নিষিদ্ধ থাকবে; উন্মুক্ত মাঠে ‘জনসভা’ করে প্রার্থী পরিচিতির কাজ সারতে হবে। ১১. সর্বক্ষণ ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ১২. সর্বোপরি নির্বাচনের প্রাক্কালে শিক্ষক রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত থাকবে; কোনো শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে বা দলবদ্ধভাবে কোনো ছাত্র সংগঠনকে প্রভাবিত করবে না মর্মে নিশ্চয়তা দিতে হবে।

নির্বাচনের দিন : ১. ঢকিা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন সংলগ্ন এলাকায় বেশিরভাগ ছাত্রহল কেন্দ্রীভূত এবং এ কারণে এলাকাটি স্পর্শকাতরও বটে। তাই ক্যাম্পাসের এ এলাকায় প্রবেশপথ সীমিত রাখা আবশ্যক। নির্বাচনের দিন নির্দিষ্ট কয়েকটি গেট খোলা রাখতে হবে, যেগুলোতে সার্বক্ষণিক মানব পাহারার সঙ্গে ডিজিটাল পাহারাও থাকবে। ২. নেতা নয়, দলের ভদ্র কর্মীদের ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। ৩. ব্যালটবাক্স টিএসসিতে একত্র করে ভোটগণনা করতে হবে কড়া পাহারায়। নিয়োজিত এজেন্ট আর নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য কেউ ভোটগণনার স্থানে থাকতে পারবেন না। এজেন্টদের মোবাইল ফোন বহন নিষিদ্ধ হতে হবে। ৪. ভোটের ফল প্রকাশ করতে হবে দিনেরবেলায়। এদিন কয়েক স্তরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৫. ফল প্রকাশের পর সব ধরনের মিছিল নিষিদ্ধ থাকবে।

নির্বাচনের পরে : অছাত্র বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে আগমন বা অবস্থান কমপক্ষে দশ দিনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। দেখা যায়, সবসময় অছাত্র আর বহিরাগতরাই ঘরের বিভীষণদের সঙ্গে মিলেমিশে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটায়। এছাড়াও, আনন্দ মিছিল বা প্রতিবাদ মিছিল বের করার অনুমতি দেয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।

পরিশেষে বলতে চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছাড়া অন্যান্য সব নির্বাচনই হচ্ছে। তাহলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে পারবে না কেন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সবসময় আন্দোলন গড়ে উঠেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে- পাকিস্তানি শোষক-শাসক, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসক, স্বৈরাচারী শাসক এবং সর্বশেষে লুণ্ঠনকারী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে। সবসময় ইতিবাচক ভূমিকা রাখা ঐতিহ্যবাহী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন কেন থাকবে শুধু অতীত ঘটনা হিসেবে? আজ না হোক, কাল হোক, হতে তো হবেই। এ ঐতিহ্য নষ্ট করা যাবে না। ডাকসু ছাত্র নেতৃত্ব বিকাশের সফল কারখানা, সংস্কৃতি চর্চার বাতিঘর, স্বাধীন বাংলার জাতীয় পতাকার রূপকার, ফলপ্রসূ ইতিবাচক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু আর স্মৃতিবিজড়িত অনেক গৌরবময় ঘটনার সাক্ষী। ধ্বংসের হাত থেকে একে রক্ষা করতেই হবে।

ড.এম এ মাননান : ব্যবস্থাপনাবিদ ও গবেষক; উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম