Logo
Logo
×

খেলা

‘ফুটবলের বারোটা বেজেছে’

Icon

মোজাম্মেল হক চঞ্চল

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘ফুটবলের বারোটা বেজেছে’

‘কোমরে অস্ত্র, কমান্ডারের গোপন চিঠি। হাতে ফুটবল। ধরা পড়লাম পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। কী কর? উত্তরে বলেছিলাম, ফুটবলার। ফুটবল খেলি। পরিত্রাণ মিলল। আমাকে ছেড়ে দিল। ফুটবলের জন্যই ওইদিন প্রাণে বেঁচে গেছি’, স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন জাতীয় দলের সাবেক গোলকিপার ওয়াহিদুজ্জামান পিন্টু।

নিজে ফুটবল খেলেছেন। ছিলেন ফুটবল কর্মকর্তা। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজনীতিতেও জড়িয়েছিলেন। ডাকসু’র দু’বারের ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ফুটবল থেকে এখন অনেক দূরে।

দেশের ফুটবলের দৈন্যদশা ব্যথিত করে সাবেক এই গোলকিপারকে। হাশেম আলী খান ও সালেহা বেগমের আট ছেলেমেয়ের মধ্যে পিন্টু পঞ্চম। ডাক্তার বাবার কর্মস্থল বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে (সাবেক পাতারহাট) থাকতেন পিন্টু। মা ও অন্য ভাইবোনেরা ছিলেন বরিশালে। ফুটবলে হাতেখড়ি কোচ শফি ভাইয়ের কাছে।

বড় বাদলখ্যাত জাকির হোসেন বাদল ঢাকার মাঠে নিয়ে এসেছিলেন পিন্টুকে। বিআরটিসি, পিডব্লুডি, ওয়াপদা, ব্রাদার্স, মোহামেডান ও বিজেএমসির হয়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন এই গোলকিপার।

জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন নিজ যোগ্যতাগুণে। কিন্তু ইনজুরি তাকে বেশি দূর এগোতে দেয়নি। পায়ের ব্যথায় কাতর পিন্টুর খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি ঘটে ক্যারিয়ারের মাঝপথে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রনেতা পিন্টু দু’দুবার ডাকসু’র ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। এখন ব্যবসা ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত। পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে ফুটবলের খোঁজখবর রাখেন।

দেশের ফুটবলে ভাটার টান ব্যথিত করে তাকে। পিন্টু বলেন, ‘ছোটবেলা ফুটবলই ছিল আমার ধ্যান-জ্ঞান। স্কুল পালিয়ে ফুটবল খেলতে গিয়ে বাবা-মায়ের কত বকুনি খেয়েছি। বাবা-মা চাইতেন, তাদের ছেলে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু আমি চাইতাম ফুটবলার হব।’

তিনি বলেন, ‘তখন আমি নবম শ্রেণীতে পড়ি। একদিন ফুটবল খেলে অনেক রাতে বাড়ি ফিরি। কিন্তু বাড়ির দরজা আমার জন্য খোলা হয়নি। সারা রাত বাইরে ছিলাম।

সকালে বাবা আমার বইখাতা সব বৈঠকখানায় জড়ো করেন। আমাকে বাড়ি ছেড়ে দেয়ার নোটিশ দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত মায়ের জন্য ওই যাত্রায় বেঁচে যাই। পরে যখন আমার নাম-ডাক হয়, তখন বাবা-মা’র চোখে আনন্দাশ্র“ দেখেছি। ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমি বাবার সঙ্গে মেহেন্দীগঞ্জে থাকতাম। বয়স কম ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিই। আমার কাজ ছিল কমান্ডারের গোপন চিঠি, খবরাখবর ও অস্ত্র আনা-নেয়া করা। ফুটবলার হিসেবে তখন এলাকায় কিছুটা নাম-ডাক ছিল।

আমি বুদ্ধি করে জার্সি বুট পরে হাতে বল নিয়ে ঘুরতাম। পাছে কেউ সন্দেহ না করে। একদিন টহলরত পাক সেনাদের সামনে পড়লাম। এক রাজাকার বলল, ‘পিন্টু ফুটবল খেলে’।

আমি বেঁচে যাই। ধরা পড়লে জীবন তো যেতই। অনেক বড় ক্ষতি হতো মুক্তিযোদ্ধাদের। কেননা কমান্ডারের গোপন চিঠি ছিল আমার কাছে। ওটা হানাদারদের হাতে পড়লে বিপদ হতো।’

জাতীয় দলের এই সাবেক গোলকিপারের কথা, ‘মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ফুটবলও খেলেছি- তিনটিই আমার গর্বের বিষয়। কিন্তু ফুটবলটা আগের জায়গায় নেই।

কেন জানি ফুটবলটা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এটা কষ্ট দেয় আমাকে।’ তার কথা, ‘এখন ফুটবলের উন্নয়নের নামে যারা পদপদবিতে আসীন হন, তারা উন্নয়ন করেন। তবে ফুটবলের নয়, নিজেদের।

ফুটবল বেঁচে খাচ্ছেন এসব তথাকথিতরা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কথাই ধরুন, এখানে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো আঁকড়ে ধরে আছেন বছরের পর বছর ধরে, তাদের দিয়ে ফুটবলের কোন উন্নতিটা হয়েছে? শুধুই বারোটা বেজেছে।’

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম