বাংলাদেশের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক
‘আকবর দ্য গ্রেট’ হওয়ার গল্প
মাহবুব রহমান, রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয়ে খুশিতে আত্মহারা অধিনায়ক আকবর আলীর বাবা-মা। দেশের জন্য প্রথম বিশ্ব জয়ের সাফল্যে তারা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আনন্দ উৎসর্গ করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের। আকবরের জন্য আনন্দে ভাসছে রংপুরবাসী। নগরীর বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল বের করা হয় রোববার রাতে। ক্রিকেটভক্তরা ভিড় জামান আকবরের নগরীর পশ্চিম জুম্মাপাড়া হনুমানতলার বাড়িতে। সন্ধ্যায় রংপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে আকবরের বাড়িতে ফুল পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান এমপি টেলিফোনে আকবর আলীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি এ বিজয় অর্জনের জন্য আকবরের পরিবারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
আকবর আলীর পরিচয়
রংপুর মহানগরীর পশ্চিম জুম্মাপাড়া হনুমানতলা গ্রামের ফার্নিচার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোস্তফা ও সাহিদা বেগম দম্পতির চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট আকবর আলী। মাত্র ছয় বছর বয়সে পাড়ার গলিতে টেপ টেনিস বল আর ভাঙা ব্যাটে খেলা শুরু। খেলতে খেলতে বড় ভাইয়ের পরামর্শে একাডেমিতে অনুশীলন শুরু। বর্তমানে তিনি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক।
ক্রিকেটযোদ্ধা হয়ে ওঠার গল্প
ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত ‘আকবর দ্য গ্রেট’। ক্রিকেটে ছেলের আসক্তি দেখে বাবা তাকে রংপুর জেলা স্কুল মাঠে অসীম মেমোরিয়াল ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করে দেন। একাডেমির কোচ অঞ্জন সরকারের হাত ধরে ক্রিকেটে তার সত্যিকারের হাতেখড়ি। সেখানে তিনি তিন বছরের বেশি প্রশিক্ষণ নেন। ২০১২ সালে দেশের সেরা ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ভর্তি হন আকবর। তারপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া। বিকেএসপির বয়সভিত্তিক দলে খেলে সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে সমানতালে। শুধু ক্রিকেট নিয়েই পড়ে থাকেননি আকবর। পড়াশোনাটাও দারুণভাবে করেছেন তিনি।
যেখানে আকবর আলীর পড়ালেখা
রংপুর বেগম রোকেয়া উচ্চবিদ্যালয়ের শিশু নিকেতনে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হন লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় বিকেএসপিতে সুযোগ পান। সেখানে লেখাপড়া ও খেলাধুলা একসঙ্গেই চলছিল। ২০১৬ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পান। ২০১৮ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৪.৪২ পান।
একমাত্র বোনের মৃত্যুশোক শক্তিতে পরিণত
আকবর আলী ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে মাঠে গেলেই জায়নামাজে বসে থাকতেন একমাত্র বড় বোন খাদিজা খাতুন রানী। জায়নামাজে বসে ছোট ভাইয়ের জন্য দোয়া করতেন তিনি। যেন ভাই ভালো খেলে সুস্থ শরীর আর জয় নিয়ে ফিরতে পারে। আকবর আলী যুব বিশ্বকাপ জয় করেছেন। কিন্তু তা দেখে যেতে পারলেন না বোন খাদিজা খাতুন রানী। ২৪ জানুয়ারি যমজ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তিনি মারা যান। একমাত্র বোনের মৃত্যুর শোককে শক্তিতে পরিণত করেছিলেন আকবর। এদিকে রোববার দক্ষিণ আফ্রিকায় ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়ের পর আকবরের মা সাহিদা আক্তার বলেন, ‘আকবর দেশের জন্য খেলেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো বিশ্বকাপ জয়ের শিরোপা তার হাত ধরেই এলো। এটা আমাদের জন্য গর্বের। রংপুরবাসীর জন্যও।’ আকবরের বাবা মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আমার ছেলে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। সে এখন বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। যে কোনো পর্যায়ে বাংলাদেশকে বিশ্বজয়ের সাফল্য এনে দেয়ার কারিগর।’
ছোটবেলার ক্রিকেট কোচ অঞ্জন
আকবর আলীর ছোটবেলার ক্রিকেট কোচ অঞ্জন সরকার বলেন, ‘রংপুর জেলা স্কুল মাঠে অসীম মেমোরিয়াল ক্রিকেট একাডেমিতে সে তিন বছরের বেশি ক্রিকেট খেলেছে। আমি শুরুতে ব্যাটিং স্টাইল ও তার মেধায় বুঝে যাই সে একদিন বড় ক্রিকেটার হবে। আকবর আলী ব্যাটিং অলরাউন্ডার ছিল। তাকে আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন ক্রিকেট শিখিয়েছি। আমার কাছে তার ক্রিকেটে হাতেখড়ি। সে মেধাবী ও ভদ্র ছেলে। আকবর আলী ভালো নেতৃত্ব দিতে পারে। শুরু থেকে সে হয় সহ-অধিনায়ক অথবা অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। তার এমন সাফল্যে আমিসহ রংপুরবাসী খুবই খুশি।’ রংপুরের ক্রিকেট খেলোয়াড় তারিক আনাম রুবেন বলেন, ‘জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের বন্ধ থাকা খেলাগুলো চালু করলে আরও ভালো খেলোয়াড় তৈরি হবে।’ রংপুরের অপর ক্রিকেট খেলোয়াড় মন্টি ও শিমুল সরকার জানান, আমরা অনেক খুশি আকবরের ব্যাটিং-নৈপুণ্যে। যুব ক্রিকেটারদের আরও প্রশিক্ষিত করলে তারাও জাতীয় পর্যায়ে তাদের সেরা খেলা প্রদর্শন করবে।
আনন্দ মিছিল ক্রিকেটভক্তদের
সবকিছুতে ভালো করার ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশ যুবদলের নেতৃত্বের ভার তার কাঁধে। দক্ষিণ আফ্রিকার আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেতৃত্বের ভার সামলে চমক দেখালেন রংপুরের সন্তান আকবর আলী। এদিকে বিশ্বকাপ জয়ে দেশের অন্যান্য জেলার মতো বিভাগীয় নগরী রংপুরেও আনন্দে ভাসছে ক্রিকেট অনুরাগীরা। রোববার রাতে নগরীর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, লালবাগ, সিটি বাজার, কাচারীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল হয়েছে।
