দুদকের কাঠগড়ায় সালাউদ্দিন ফুটবলের জন্য লজ্জার
‘বাংলাদেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে এমন চিঠি আমাদের জন্য বিব্রতকর’
স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফুটবলমহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। দুদকের কাঠগড়ায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ফেঁসে যাচ্ছেন বাফুফে সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরন ও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবু হোসেন। বাফুফেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চিঠির বিষয়টি নাড়া দিয়েছে ফুটবল সংশ্লিষ্টদের।
জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও সাবেক বাফুফে সদস্য হাসানুজ্জামান খান বাবলু বলেন, ‘সাবেক ফুটবলার হিসেবে এটা আমাদের জন্য লজ্জার। বাংলাদেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে এমন চিঠি আমাদের জন্য বিব্রতকর।’
বাফুফের হিসাব-নিকাশ বরাবরই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। ২০০৮-১২ মেয়াদের নির্বাহী সদস্য বাবলু পরে বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ছিলেন। বাফুফের হিসাব সংক্রান্ত বিষয়ে তার মন্তব্য, ‘সাধারণ সদস্যরা হিসাব-নিকাশ নিয়ে কোনো তথ্য জানতে পারত না। নির্বাহী সদস্যরা যেখানে জানতে পারত না, সেখানে কাউন্সিলরদের জানাটা দুরূহ। গত ১০ বছরে মাত্র দুটি এজিএম ও দুটি ইজিএম হয়েছে। যেটা গণতান্ত্রিক ধারার বিরুদ্ধে।’
সাবেক কৃতী ক্রীড়াবিদ, মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুন নাহার ডানা বলেন, ‘ফুটবল ফেডারেশন ও তাদের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেকদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল। দুর্নীতি দমন কমিশন চিঠি দেয়ায় গুঞ্জন সত্যি হল। দেশের ফুটবলের স্বার্থে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’
বাফুফের সাবেক সদস্য আবদুল গাফফার এমন ঘটনায় ব্যথিত, ‘একজন সাবেক ফুটবলার হিসেবে আমি খুবই মর্মাহত। সামগ্রিকভাবে ফুটবলের জন্য বিষয়টি নেতিবাচক। ফুটবলে পৃষ্ঠপোষকতা এমনিতেই হয় না। এ ঘটনায় পৃষ্ঠপোষকরা আগ্রহী হবেন না। সংকট আরও বাড়বে।’
২০১৬ সালে ১৮ ডিসেম্বর যুগান্তরে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। বাফুফের ব্যাপক দুর্নীতি, নেতৃত্বের ব্যর্থতা এবং ফুটবলকে আবার টেনে তোলার ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল সংস্থাটি। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমেদের স্বাক্ষরিত চিঠি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগ থামিয়ে দেয়া হয়।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, একসময় ফুটবল ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। আজ বাংলাদেশের ফুটবলের অবস্থা শোচনীয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ফুটবলের রুগ্ন অবস্থার জন্য বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন দায়ী। বর্তমানে ক্রিকেটসহ অন্যান্য ক্রীড়া আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। অথচ ফুটবল বাংলাদেশের জন্য অপমান বয়ে নিয়ে আসছে। যার কোনো কারণ থাকা উচিত নয়।
প্রতিবেদনে ফুটবলের বর্তমান শোচনীয় অবস্থার জন্য একাধিক কারণ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে বাফুফে সভাপতির চারিত্রিক দুর্বলতা, ফুটবল ফেডারেশনের ঋণ করা টাকায় জুয়ার আসর বসানো, সভাপতির অদূরদর্শিতায় বাংলাদেশের জরিমানা, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ সরাসরি সম্প্রচারে টেলিকাস্টিংয়ের যন্ত্রপাতি ভাড়া করার নামে দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নাম ভাঙিয়ে ইউরো ফুটবল টুর্নামেন্টের টিকিট-দুর্নীতি, বাফুফে সভাপতি ও মাহফুজা আক্তার কিরনের যৌথ দুর্নীতি, সভার কার্যবিবরণী নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি, বাফুফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা ও উত্তোলনে অনিয়ম, সিলেট বিকেএসপি ক্যাম্পাসে ফুটবল একাডেমির নামে দুর্নীতি, ফিফার প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর সংক্রান্ত আর্থিক দুর্নীতি, রাজনৈতিক আস্ফালন উল্লেখযোগ্য।
এসব দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার জেরে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে শিগগিরই প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে সরকারের ভাবমূর্তি ও ফুটবলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়। সেই সঙ্গে একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন করে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজদের অর্জিত সম্পদের সঠিক হিসাব নির্ণয় করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছিল।