Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

ইউএইচসি ফোরাম-ব্র্যাক সংলাপে বক্তারা

ডেঙ্গু এখন বছরব্যাপী মহামারি

সমন্বিত পদক্ষেপের বিকল্প নেই

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মৌসুমি রোগ হিসাবে বিবেচিত ডেঙ্গু এখন বছরব্যাপী মহামারিতে পরিণত হয়েছে। যে কারণে ডেঙ্গু রোগের ইতিহাসে বাংলাদেশ ২০২৩ সালে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের সম্মুখীন হয়েছিল। চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসেই ২১শর বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হন। গত বছর ৩ লাখ ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি এবং ১ হাজার ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপের বিকল্প নেই। মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে ইউএইচসি ফোরাম ও ব্র্যাক আয়োজিত বহু-অংশীজন সংলাপে বক্তারা একথা বলেন। ইউএইচসি ফোরামের আহ্বায়ক এবং ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সভাপতিত্বে সংলাপে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম। প্যানেল আলোচক ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর ডা. শেখ দাউদ আদনান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল কীটতত্ত্ব (এনটোমলজি) বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, বিআরআইসিএম-এর মহাপরিচালক ড. মালা খান, ব্র্যাকের হেলথ অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর মো. আকরামুল ইসলাম এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনস্বাস্থ্য পরামর্শক ডা. শাবানা রোজ চৌধুরী (ভিডিওর মাধ্যমে)।

ইউএইচসি ফোরাম এবং ব্র্যাকের সহ-আয়োজকদের পক্ষ থেকে ডা. আমিনুল হাসান ও ডা. ইমরান আহমেদ চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার ডেঙ্গু ছড়ানো মশার আচরণ ও প্রজনন ধারায় পরিবর্তন সম্পর্কিত নতুন গবেষণালব্ধ ফলাফল তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন এডিস মশা শুধু পরিষ্কার পানিতেই নয়, দূষিত নর্দমার পানিতেও বেঁচে থাকতে সক্ষম। রাতের বেলায়ও মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায়। এটি শুধু শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। মহিলাদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি। তাই আরও কার্যকরী প্রতিরোধের জন্য বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

ডা. মালা খান, দেশীয়ভাবে ডেঙ্গু টেস্টের কিট উন্নয়নে তার অভিনব উদ্ভাবনের তথ্য তুলে ধরেন। যা ঘরোয়া ও সাশ্রয়ী সমাধান হিসাবে বড় ধরনের সম্ভাবনা বহন করে। ডা. শেখ দাউদ আদনান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের নির্দেশিকা ও কৌশলের ওপর আলোকপাত করেন। মো. আকরামুল ইসলাম ব্র্যাকের কম্যুনিটি অ্যাংগেজমেন্ট কৌশলের কথা বলেন। যা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ এবং তৃণমূল গোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে। ডা. শাবানা রোজ চৌধুরী ভারতের কলকাতা শহরে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় তাদের অভিজ্ঞতা একটি অনলাইন প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বর্ণনা করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ডেঙ্গু মোকাবিলায় সামাজিক অংশগ্রহণের আবশ্যিকতা তুলে ধরে বলেন, প্রতিরোধ সব সময় প্রতিকারের চেয়ে উত্তম। অবশ্যই ডেঙ্গুকে পরবর্তী মহামারি হয়ে উঠার আগেই মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আমি মাকে হারিয়েছি। এটা নিয়ে আমার চিন্তা আছে। আমি কাজ করব। যাতে আর কারও মা মারা না যান। আমি ইতোমধ্যে ডেঙ্গু নির্দেশনা দিয়েছি, যাতে ডেঙ্গু বৃদ্ধির সময়ে স্যালাইন সংকট দেখা না দেয় এবং স্যালাইনের দামও না বাড়ে।’

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়লে হাসপাতালগুলো খালি রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছি। যাতে যাদের প্রয়োজন তাদের ভর্তি করানো যায়। আর যাদের কম প্রয়োজন তাদেরও যেন হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে চিকিৎসা দেওয়া যায়। এছাড়া আমাদের ফগিং বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা আছে। এ বিষয়ে আলোচনা করব। সিটি করপোরেশনের সঙ্গেও ওপেনলি আলোচনা করব।’

অনুষ্ঠানে ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ডেঙ্গু ভেক্টরের আচরণগত পরিবর্তন এসেছে বলে জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদরা। আমরা জেনেছি ডেঙ্গু মশা রাতেও কামড়াচ্ছে এবং শুধু পরিষ্কার পানিতে না জন্মে ময়লা পানিতেও জন্মাচ্ছে। এমনকি গাছের কোঠরেও ডেঙ্গুর লার্ভা জন্মাচ্ছে। গাছের কোঠরে যদি মশা জন্মানো শুরু করে, গ্রাম এলাকার জন্য এটি একটি আশনি সংকেত।

সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ এক্সপার্ট ড. হালিদা হানুম আখতার, ব্রিটিশ দূতাবাস প্রতিনিধি ড. রশিদ, নিপসমের অধ্যাপক এএফএম সারোয়ার, ইউএসএআইডি প্রতিনিধি সুকুমার সরকার, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিনিধি মনজুর কাদির আহমেদ, ইউপিএইচসিএইচডিপি ড. হাকিম মজুমদার প্রমুখ মতামত দেন।

তারা বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০২৪-৩০ সালের জন্য একটি জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রণয়ন করেছে। কিন্তু কৌশলটি বাস্তবায়নে মনিটরিং ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

সভাপতির বক্তব্যে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময় তিনি জেলা, বিভাগীয় ও শহর পর্যায়ে ডেঙ্গু হটস্পটগুলোতে বৃহত্তর স্টেকহোল্ডার সংলাপের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। সংকট কমাতে এবং ভবিষ্যতের প্রাদুর্ভাব রোধে সমগ্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম