Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

বিআইডিএস’র পাবলিক লেকচার

রক্তপাত বন্ধে অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাগিদ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের নিষ্পত্তি সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমে হলে রক্তপাত হতো না। আজ হানাহানি ও রক্তারক্তি ঘটনার সমাধান চাইলে অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কেননা তখন বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে এবং ভিন্ন ভিন্ন মতের মধ্যে সহযোগিতামূলক মনোভাব ছিল। বহুত্ববাদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ ছিল। তাই ইতিহাস নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন। বুধবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) পাবলিক লেকচারে বক্তারা এ কথা বলেন। এতে ‘আমরা কে? ধর্মীয় বহুত্ববাদ ও বাংলার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য’ বিষয়ে লেকচার দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবদুল মমিন চৌধুরী। রাজধানীর আগারগাঁও-এ বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে লেকচারের আয়োজন করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুস সাত্তার মণ্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ, বিআইডিএস’র ড. কাজী ইকবাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

তারা বলেন, ইতিহাসের বহুমাত্রিকতা নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। তাই এ বিষয়ে আরও বেশি বেশি গবেষণা প্রয়োজন। ইতিহাসের অনুসন্ধান করতে গিয়ে মধ্যযুগের কবর অনেক খোঁজা হয়েছে। কিন্তু যেসব কবর পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো বাঁধাই করা বা কষ্টিপাথরে খোদাই করা। এগুলো উচ্চবর্ণের, কিন্তু সাধারণ মানুষের কবর কোথাও নেই। কাজেই কবর গবেষণা করে ওই সময়ের ইতিহাস বের করাটা কঠিন। ঐতিহাসিক ভাবে দেখা যায়, সংঘাত মুক্ত মনোভাব ছিল। এখন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তাই নতুন করে আত্মপরিচয়ের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ঐতিহাসিকভাবে এ অঞ্চলে সহযোগিতা ও সহাবস্থান ছিল। কিন্তু ঔপনিবেশিক আমলই মূলত হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিল। এখন আমরা সেই অভ্যাস বয়ে বেড়াচ্ছি।

আবদুল মমিন চৌধুরী বলেন, বাঙালি দীর্ঘ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতায় বিভিন্ন ধর্মের সংস্পর্শে এমন এক সামাজিক আচার-আচরণের ঐতিহ্য গড়ে তুলেছিল যাকে আধুনিক জ্ঞান কাঠামোর ধর্মীয় বহুত্ববাদ বলা চলে। এই অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম বিস্তারে সুফি আলেমরা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিল। ফলে বাংলায় ধর্মান্তরকরণ কয়েক শতাব্দী ধরে চলেছিল। আদি হিন্দু, বৈদ্ধ ও জৈন জনগোষ্ঠী ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন এক দীর্ঘ সময়ের সামাজিক প্রক্রিয়ায়। এর কোনো একটি কারণ নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব। তবে ওই সময়ে সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণতা বেশ ছিল।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, নিজেকে চিনতে হলে ইতিহাসের কাছে যেতে হবে। বহুত্ববাদ আমাদের ঐতিহ্যের বৈশিষ্ট্য। বহুত্ববাদের পেছনে বাস্তব কারণও ছিল। এটা বিশ্বাস নয়, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া বা বদলানোকে বোঝায়। আমরা কে? এটা খুঁজতে গেলে ঐতিহাসিকদের মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন। বর্তমানে ইতিহাস চর্চা কমে গেছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, বিভিন্নতার মধ্যে সহায়তা ও সহযোগিতা আমাদের ঐতিহ্যের মূল সুর। শুধু নিজেদের ধর্মের মধ্যেই নয়, অন্য ধর্মের মধ্যেও সহাবস্থানের চরিত্রের ঐতিহ্য ছিল। তখন অনেক লড়াই সমাধান হয়েছে সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমে বা সামাজিক পুঁজিকে ঘিরে। কিন্তু আজ বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের নিষ্পত্তি সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে হচ্ছে না। এটি করা গেলে অনেক সমস্যার সহজ সমাধান সম্ভব ছিল। রক্তারক্তির ঘটনাও এত হতো না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম