Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

সরকারি হাসপাতালে শুরু বৈকালিক চিকিৎসাসেবা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস বা বৈকালিক চিকিৎসাসেবা শুরু হচ্ছে। আজ বিকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এটি উদ্বোধন করবেন। প্রাথমিকভাবে সারা দেশের ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ১২টি জেলা সদর হাসপাতালে পাইলটিংভাবে এ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এই তালিকায় কেরানীগঞ্জ ও সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়া রাজধানীর কোনো হাসপাতাল নেই।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বৈকালিক চিকিৎসাসেবায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালটেন্টরাও রোগী দেখবেন। এজন্য ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ‘সরকারি হাসপাতালে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’ শুরুর জন্য বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৫১টি হাসপাতালের একটি তালিকার প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

তবে সব ধরনের পূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে খোদ চিকিৎসকদের মধ্যেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা যুগান্তরকে বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়নে কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই ঘোষণা দেওয়া হঠকারিতা। মূলত সবাই যার যার স্থান থেকে নিজের অবস্থান ধরে রেখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভালো সাজার চেষ্টাটা করে যাচ্ছেন। বাস্তবতার নিরিখে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে না। পাইলট প্রজেক্ট হলেও যেভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা অপরিপক্বতা। তাছাড়া একটা ভালো উদ্যোগ যদি শুধু পরিকল্পনার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে, ভবিষ্যতের জন্য নেওয়া নতুন প্রকল্পগুলোতে সেটার প্রভাব পড়তে পারে।

মন্ত্রণালয়ের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া বৈকালিক চেম্বারে সেবা শুরুর বিষয়ে বেশ কয়েকজন আপত্তি জানায়। সময়সূচি নিয়েও কয়েকটি প্রস্তাব আসে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সেবা বাড়ানো যায় কিনা তা নিয়েও আলোচনা হয়। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালে টাকার বিনিময়ে সেবা নেওয়াটা কতটুকু সঠিক হবে এমন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেডিকেল কলেজের দুজন অধ্যাপক চিকিৎসক যুগান্তরকে বলেন, সরকার নির্দেশ দিলে ২৪ ঘণ্টাও দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটাই সরকারি চাকরির নিয়ম। কিন্তু যে সময়সীমার কথা বলা হচ্ছে সেখানে একজন চিকিৎসক তিন ঘণ্টা রোগী দেখলে এক হাজার ২০০ টাকার মতো পাবেন। যদিও টাকা বিবেচ্য বিষয় না। কিন্তু এই সময়ে রোগীদের আসলে কী কী সেবা দেওয়া যাবে, তা এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি।

সরকারি হাসপাতালে বৈকালরিক চেম্বার ঘোষণা নিয়ে তরুণ চিকিৎসকদের মাঝেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই প্রক্রিয়ার বিষয়ে আগে না জানায় দোটানায় আছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসক বলেন, বেসরকারিতে একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকের সেবা নিতে রোগীকে দিতে হয় এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। কিন্তু সরকারিভাবে এই টাকা না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা সরকারি হাসপাতালে কেন সময় দেবেন সেটিও ভাবনায় রাখতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বলে প্রকল্পটি চালু হচ্ছে। বিষয়টা কতুটকু নৈতিক, বাস্তবসম্মত এবং জনগণ ও চিকিৎসকরা কীভাবে গ্রহণ করবে এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এত তাড়াহুড়া করে বাস্তবায়নে না গিয়ে সময় নিতে পারতেন। আরও আলোচনা করতে পারতেন। চিকিৎসক, নাগরিক সমাজ ও রোগীর অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করলে ভালো হতো। যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়া এটা করা কতটুকু ঠিক হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে আমি বৈঠকেও জানিয়েছি। সরকারি প্রতিষ্ঠানেই টাকার বিনিময়ে রোগীদের সেবা পাওয়ার বিষয়টি সমাজের বাকিরা কীভাবে দেখবে সেটা বিবেচনা করার বিষয়। এমন সিদ্ধান্ত রোগী ও চিকিৎসকদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারের ভাবনা খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার অবকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। রাজধানীর বাইরে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানের পদ খালি আছে। অনেক হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিও পর্যাপ্ত নয়। সেখানে প্রচুর রোগী আছে। তাই অবকাঠামো ঠিক না করে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে পুরো চিকিৎসাসেবা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। যার দায়ভার চিকিৎসকদের ওপর আসতে পারে। এটার সুবিধা পেতে হলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করতে হবে।

যেসব জেলা ও উপজেলায় এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে সেগুলো হলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১০টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো হলো মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতাল। এই বিভাগের উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে-ঢাকার সাভার ও কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, টাঙ্গাইলের মধুপুর, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, ফরিদপুরের বোয়ালমারি, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১০টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ফেনী, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া নোয়াখালীর সেনবাগ, চট্টগ্রামের পটিয়া, কুমিল্লার দাউদকান্দি, কক্সবজারের পেকুয়া, ফেনীর ছাগলনাইয়া, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে।

ময়মনসিংহ বিভাগের ৫টি চিকিৎসাকেন্দ্রের মধ্যে জামালপুর জেলা সদর হাসপাতাল রয়েছে। এই বিভাগের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তালিকায় জামালপুরের সরিষাবাড়ি, শেরপুরের নকলা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও ও নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম আছে।

খুলনা বিভাগের মধ্যে ঝিনাইদহ জেলা সদর হাসপাতাল রয়েছে। পাশাপাশি যশোরের মনিরামপুর ও কেশবপুর, মাগুরার শ্রীপুর ও কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম রয়েছে।

রাজশাহী বিভাগে ৫টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালসহ এই জেলার সাপাহার, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম এবং রাজশাহীর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে।

রংপুর বিভাগে ঠাকুরগাঁও ও কুড়িগ্রাম জেলা সদর হাসপাতালসহ মোট ৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, রংপুরের বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া ও নীলফামরীর ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম রয়েছে।

বরিশাল বিভাগের মধ্যে ভোলা জেলা সদর হাসপাতাল রয়েছে। একইভাবে বরিশালের অগৈলঝাড়া, বড়গুনার আমতলী ও ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। সিলেট বিভাগের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের নাম রয়েছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিশ্বনাথ এবং হবিগঞ্জের মাধবপুর ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম প্রস্তাবনায় রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম