পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
চেক ডিজঅনারে জেলে পাঠানো সংবিধান পরিপন্থি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি বলে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রায় প্রদানকারী বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সইয়ের পর সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে ৫৪ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত ২৮ আগস্ট চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি বলে পর্যবেক্ষণ দেন হাইকোর্ট।
রায়ে আদালত বলেন, কোনো ব্যক্তিকে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান পরিপন্থি। নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণের নামান্তর। চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালত নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের ১৩৮ ধারা সংশোধন করে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান বাতিল করার জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দেন। এছাড়া এ ধারা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত চেক ডিজঅনারের মামলা নিষ্পত্তির জন্য তিনি একটি গাইডলাইন করে দিয়েছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো, কারাগারে রাখা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি এবং ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের অনুচ্ছেদ ১১-এর পরিপন্থি। বাংলাদেশ-এর স্বাক্ষরকারী দেশ হিসাবে চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠাতে পারে না। উন্নত বিশ্বের উদাহরণ টেনে আদালত বলেন, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান নেই। এসব দেশে চেক ডিজঅনারের মামলাগুলোকে দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনে ১৯৯৪ সালে প্যানেল কোড সংযোজনের মাধ্যমে আধা-ফৌজদারি হিসাবে পরিণত করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, কনট্রাকচ্যুয়াল অব নেগোসিয়েশন বা চুক্তিগত দায়-দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থতার জন্য কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা যাবে না। চুক্তিগত দায়-দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থতার জন্য যদি কারাগারে পাঠানো হয় তাহলে শিগগিরই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কারাগারে চলে যাবে। এটা কারো কাম্য নয়।