বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সানেম
অর্থ পাচার নিয়ে যত কথা বাজেট নিয়ে তত নয়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট মূলত বৃহৎ ব্যবসাবান্ধব। করপোরেট করছাড় সুবিধা কেবল বড় বড় ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু গত দুই বছরে করোনাভাইরাসে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ এসব খাতের জন্য করপোরেট করছাড় প্রযোজ্য নয়। মূল কথা হলো-ছোটরা সবদিক থেকেই উপেক্ষিত। সোমবার বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)’ এমন মন্তব্য করেছে। অনুষ্ঠানে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, এ বছরের বাজেট-পরবর্তী সময়ে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে, বাজেটের মূল কাঠামো নিয়ে তত আলোচনা হচ্ছে না।
রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টার ইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান আরও বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ সবদিক থেকেই অনৈতিক। এ নীতি সানেম সমর্থন করে না। তিনি বলেন, টাকা ফেরত আনার উদ্যোগের বদলে কীভাবে টাকা পাচার হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। তিনি বলেন, এ বাজেট উচ্চবিত্তমুখী। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বাজেটে তেমন কিছু নেই। বিশেষ করে ব্যক্তিপর্যায়ের যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসা রয়েছে, তাদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার দরকার ছিল, সেটি হয়নি। এছাড়া কর্মমুখী মানুষের জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, করমুক্ত আয়সীমা অন্তত সাড়ে তিন লাখ টাকা করা উচিত ছিল। এটি করার সুযোগ এখনো রয়েছে। এছাড়া রেমিট্যান্সে প্রণোদনা প্রত্যাহার করা দরকার। এক্ষেত্রে প্রথম বছরে পুরোপুরি প্রত্যাহার না করে ১ শতাংশে নামিয়ে আনা যেতে পারে। তিনি বলেন, সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি যে নীতি রয়েছে, এ বাজেট সেই নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি আরও বলেন, রাজস্ব খাতের সংস্কার আনা দরকার। এক্ষেত্রে আইনগত এবং খাত নির্ধারণ উভয় ক্ষেত্রে ত্রুটি রয়েছে।
গার্মেন্ট খাতে ভর্তুকির বিষয়ে ড. সেলিম বলেন, এটি সংস্কারের প্রয়োজন আছে। কারণ, আর কতকাল এ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে। স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। মূল্যস্ফীতি তথা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের যে ছোট ছোট পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ ছিল, সেটি নেওয়া হয়নি। ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোসহ কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ বিষয়টিতে দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি বলেন, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগ কাজে লাগানোর এখনই সময়। এ সুযোগ খুব বেশি দিন থাকবে না। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়।
ঘাটতি বাজেটের ব্যাংকনির্ভরতার সমালোচনা করে ড. সেলিম রায়হান বলেন, অতিমাত্রায় ব্যাংকনির্ভর না হয়ে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি ঋণ আনার বিষয়ে জোর দিতে হবে। পঞ্চবার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাজেটের ভূমিকা রয়েছে। ধাপে ধাপে সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে ধরনের বাজেট প্রণয়ন করা দরকার, প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন হয়নি। তিনি আরও বলেন, খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় খাদ্য মজুত করা জরুরি। কিন্তু বাজেটে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
অনুষ্ঠানে বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরে সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়েমা হক বলেন, দেশে এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। এ বাস্তবতায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার ছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রকৃত বরাদ্দ বাড়ানোর পরিবর্তে কমেছে। এটি সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বৈষম্য প্রসঙ্গে সায়েমা হক বলেন, ২০১৬ সালের পর সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের মোট সম্পদের ৩৮ শতাংশ দেশের ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনীর হাতে পুঞ্জীভূত। কোভিডকালে এ বৈষম্য আরও বেড়েছে। বৈষম্য কমাতে তিনি কর কাঠামো সংস্কারের পরামর্শ দেন। অর্থাৎ যার যত বেশি সম্পদ, তার ওপর তত বেশি হারে করারোপের প্রস্তাব করেন তিনি। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে কয়েকটি সুপারিশ করেছে সানেম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা, বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য রোডম্যাপ তৈরি, সামাজিক অবকাঠামোতে বরাদ্দ বাড়ানো, আধুনিক করকাঠামো গঠন, দীর্ঘমেয়াদি ও উচ্চ বরাদ্দের প্রকল্প গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বন করা।