সরকারি প্রণোদনা দাবি
প্রকাশনা শিল্পে ক্ষতি সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় দুই লাখ পরিবার। প্রকাশকসহ, মূদ্রণ, কাগজ ও কালি শিল্প ওতোপ্রোতভাবে জড়িত এই শিল্পের সঙ্গে।
এ ছাড়া আছেন বাইন্ডার, লাইব্রেরিয়ান, শ্রমিক এবং সর্বোপরি লেখক-সম্পাদকরা। করোনাকালে এক দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আরেক দিকে বইমেলাগুলোও করা যায়নি।
সবমিলে গত ১৬ মাসে এই খাত কেবল বই বিক্রি থেকেই সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির শিকার হয়েছে। করোনার ধাক্কায় এই শিল্পটি এখন মৃতপ্রায়। অন্যান্য শিল্পের মতো বিশেষ প্রণোদনা না দিলে এই খাতটি অস্তিত্ব হারাবে। আর তেমনটি হলে জ্ঞানভিত্তিক ও সৃজনশীল সমাজ গঠন সম্ভব হবে না।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রকাশক নেতারা। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস) এটি আয়োজন করে। এতে নেতারা তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে আছে, পুস্তক ব্যবসা খাতের জন্য কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকার সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণের বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা; প্রায় ২৬ হাজার পুস্তক ব্যবসায়ী পরিবারের জন্য এককালীন ১০০ কোটি টাকা অনুদান হিসাবে বরাদ্দ; বিভিন্ন স্কুল-কলেজের লাইব্রেরির জন্য ৫০০ কোটি টাকার বই কিনে প্রকাশনা শিল্পকে বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের তিন সহ-সভাপতি কায়সার-ই-আলম প্রধান, শ্যামল পাল ও প্রকৌশলী মেহেদী হাসান, রাজধানী শাখার সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন প্রমুখ।
সভাপতি বলেন, দেশের প্রায় ২৬ হাজার বইয়ের দোকানে বেচাবিক্রি বন্ধ। এতে বহু প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারী আজ নিঃস্ব। কারোনকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে বই ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর। এই মুহূর্তে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিক্রেতা সদস্য ও তাদের পরিবারে চরম অভাব বিরাজ করছে। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এ অবস্থায় কেউ ওইসব দোকানে মুদি মাল বিক্রি করছেন। আবার কেউ কাঁচামাল বিক্রি করে জীবন ধারণ করছেন।
তিনি বলেন, আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, ইতোপূর্বে সরকার একাধিক প্রণোদনা প্যাকেজ ও অনুদান দিলেও এই খাতকে বিবেচনায় না নিয়ে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেছে। আমাদের হিসাবে গত ১৬ মাসে বাংলাদেশের একাডেমিক এবং সৃজনশীল প্রকাশনা ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান প্রায় সাড়ে বারো হাজার কোটি টাকার বিক্রয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে যেকোনো মূল্যে দেশের প্রকাশনা খাতকে বাঁচিয়ে রাখা সরকারের দায়িত্ব-কর্তব্যের মধ্যে পড়ে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, করোনার ক্ষয়ক্ষতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্বল্প সুদে যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছের, তার সুফল প্রকাশনা শিল্প পায়নি। এ ছাড়া সরকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর জন্য যে অনুদান ও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তাতেও পুস্তক ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ নেই। এ অবস্থায় এক দিকে উপার্জন নেই, আরেক দিকে প্রণোদনাও না পেয়ে ব্যবসায়ীরা দিশেহারা অবস্থায় আছেন। প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, করোনা দুর্যোগ বাংলাদেশের পুস্তক খাতের জন্য মূলত মহাদুর্যোগ বললেও অত্যুক্তি হবে না। এ দুঃসময়ে প্রকাশনা খাতকে রক্ষার জন্য যদি সরকার এগিয়ে না আসে, তাহলে ভবিষ্যতে জ্ঞাননির্ভর জাতি গঠন ও শিক্ষিত প্রজন্ম তৈরির কর্মসূচি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রকাশক ও বিক্রেতারা স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন। সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বইমেলায় অনুৎপাদনশীল বিনিয়োগের ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ-সহযোগিতা এবং সরকারিভাবে ১০০ কোটি টাকার বইকেনার দাবি জানানো হয়েছিল।
কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সরকার সমিতির দাবি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে এই খাতটি টিকে থাকবে।