নাগরিক প্লাটফর্মের জরিপ
করোনায় যুবকদের ৮০ শতাংশের আয় কমেছে

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
করোনা মহামারীর কারণে দেশের তরুণ ও যুবকদের ৮০ শতাংশের আয় কমেছে। আর্থিক সংকটে পরিবারকে সহায়তা করতে ২৮ শতাংশ পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়া বড় একটি অংশ হতাশায় ভুগছে। বেসরকারি সংগঠন ‘এসডিজি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নাগরিক প্লাটফর্ম’-এর অনলাইন জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সংগঠনটি ১৮-২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ১৬৩ জনের ওপর অনলাইনে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এ জরিপ চালায়। রোববার এক ভার্চুয়াল সংলাপে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত এসব তরুণ ও যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ এবং ৬ মাসের জন্য বেকার ভাতা দেয়া জরুরি।
সংলাপের বিষয় ছিল ‘করোনায় বাংলাদেশ : আর্থ-সামাজিক পুনরুজ্জীবনে যুব এজেন্ডা’। অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক ছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ, একশনএইড বাংলাদেশ, ফ্রেডরিক ইবার্ট স্টিফটুং বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংসদ-সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। জরিপ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির কর্মসূচি সহযোগী তামারা ই তাবাসসুম। জরিপে অবশ্য উঠে আসে, আলোচ্য সময়ে ১২ শতাংশ তরুণের আয় বেড়েছে।
ভার্চুয়াল সংলাপে আলোচকরা করোনা মহামারীর প্রভাব মোকাবেলায় তরুণদের আরও সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির তাগিদও দেন তারা। সেই লক্ষ্যে তরুণদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত বলে অভিমত দেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৮-৩০ বছর বয়সী ৮৬৩ জন পুরুষ, ২৯৯ জন নারী এবং ১ জন তৃতীয় লিঙ্গের। মহামারীর প্রযুক্তিগত বৈষম্য, শিক্ষা ও দক্ষতা এবং কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে বলা হয়, নারীদের মধ্যে ৮ শতাংশ বিয়ের কারণে পড়াশোনা ছেড়েছে। আর পরিবারকে সহায়তার জন্য ছেড়েছে ১৩ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে এটি ৩২ শতাংশ। দুই-তৃতীয়াংশ ভবিষ্যৎ কর্মজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। করোনায় তরুণ যুবাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ৯৬ শতাংশ জানিয়েছে, তারা নানা ধরনের মানসিক অবসাদে ভুগছে। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশের অবসাদ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। অনলাইনে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে যুক্ত নেই ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আলোচনায় অংশ নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন নারী ও যুব নেতৃত্ব, উদ্যোক্তা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দলিত, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিরা। সংসদ-সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ধারণা করা যাচ্ছে, করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পলিটেকনিক, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ১০-১৫ শতাংশের পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার মতে, দক্ষ কর্মশক্তি তৈরির জন্য কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারে নিয়ে আসতে হবে। সংকটকালে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে শর্তসাপেক্ষে আগামী ছয় মাসের বেকার ভাতা দেয়া যেতে পারে তরুণ-যুবকদের।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যুবসমাজের একটি অংশ শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন তৎপরতায় সক্রিয় রয়েছে। অপর একটি অংশ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। কেউ মাদকে যুক্ত, কেউ অবসাদে ভুগছেন। তাই অখণ্ড নয়, বিভাজিতভাবেই যুবাদের দেখতে হবে এবং তাদের কীভাবে সক্রিয়ভাবে কর্মসংস্থানে যুক্ত করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনাকালে শহর ও গ্রামের মধ্যে এবং নারী-পুরুষ তৃতীয় লিঙ্গের মধ্যে ত্রিমাত্রিক লিঙ্গবৈষম্য দেখা দিয়েছে। এই বৈষম্যগুলো শনাক্ত করে বাজারের চাহিদার সঙ্গে দক্ষতার সমন্বয় কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে।