‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
র্যাংকিংয়ের দিকে আমাদের মনোযোগ নেই: ঢাবি উপাচার্য
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকাসহ সাত বিভাগীয় শহরে এ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ের দিকে নিজেদের অ্যাটেনশন (মনোযোগ) নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান।
পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টায় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এদিন সকাল ৭টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ভর্তি পরীক্ষার আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকদের আসাকে অনুৎসাহিত করে আসছিল ঢাবি কর্তৃপক্ষ। তবে বিগত পরীক্ষাগুলোর মতো শনিবারও ক্যাম্পাসে অভিভাবকদের দৃশ্যমান উপস্থিতি দেখা যায়।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, ‘ঘ’ ইউনিটের সমন্বয়ক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী উপস্থিত ছিলেন।
পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন উপচার্য। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘র্যাংকিংয়ের দিকে আমাদের অ্যাটেনশন নেই। আমরা চাচ্ছি, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে র্যাংকিংয়ের যে প্যারামিটারগুলো আছে-গবেষণা, বিদেশি শিক্ষার্থী, বিদেশি শিক্ষক, শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের জীবনমান সেগুলো আমাদের এখন আ্যড্রেস করা খুব জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘এসব সূচকের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ করতে পারলে তখনই মূলত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের প্রত্যাশার জায়গাটা আরও স্পষ্ট হবে। যে প্যারামিটারগুলো দিয়ে র্যাংকিং করা হয়, সেগুলোর নিরসন না ঘটিয়ে, সেগুলোর যথাযথ প্রতিফলন না করিয়ে র্যাংকিংয়ের প্রত্যাশা করা খুবই দুরূহ।’
কারাগারে বসে ভর্তি পরীক্ষা : কারাগার থেকে ঢাবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটের অধীনে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ভর্তি-ইচ্ছুক এক শিক্ষার্থী। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই পরীক্ষার্থীর নাম প্রকাশ করেনি। শনিবার দুপুরে পরীক্ষা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী এ তথ্য জানান।
৫৫ বছর বয়েসে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় বেলায়েত : বয়সের বাধা ও সমাজের নানা তিরস্কার উপেক্ষা করে বহুলপ্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খুশি গাজীপুরের পঞ্চাশোর্ধ্ব বেলায়েত শেখ। শনিবার ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষে তিনি জানান, পরীক্ষা ভালোই দিয়েছেন। তবে ঢাবিতে ভর্তি-ইচ্ছুক তরুণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার তো শেষ বয়স, আমি একা সাগর পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি; আমার সঙ্গে যারা পরীক্ষা দিয়েছে, তারা একটা ছোট্ট খাল পাড়ি দিয়েছে। ‘লেখাপড়ার জন্য ইচ্ছাশক্তি আগে থেকেই ছিল, চেষ্টা করেছি, এ পর্যন্ত এসেছি। আমি অসময়ে লেখাপড়ায় আসছি, পরবর্তী প্রজন্মকে বলব তারা যেন যথাসময়ে পরীক্ষা দিয়ে জীবন গড়তে পারে।’
আগ্রহের কমতি না থাকলেও আর্থিক দুরবস্থা ও বাবার অসুস্থতার কারণে ১৯৮৩ সালে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়া থেকে ছিটকে গিয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন বেলায়েত শেখ। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজের ‘অপূর্ণতা’ তিনি পূরণ করতে চেয়েছিলেন ভাই-বোনদের মাধ্যমে, পরে সন্তানদের দিয়ে। কিন্তু তা পূরণ না হওয়ায় আক্ষেপ নিয়ে তিনিই আবার পড়ালেখা শুরু করেন। ২০১৭ সালে ঢাকার বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে ৪ দশমিক ৪৩ জিপিএ নিয়ে তিনি এসএসসি (ভোকেশনাল) পাশ করেন। এরপর ২০২১ সালে রামপুরার মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৫৮ পেয়ে পাশ করেন এইচএসসি (ভোকেশনাল)। এরপর থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। ১৯ মে বেলায়েত শেখ তার ফেসবুক আইডিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। ৫৫ বছর বয়সে ‘ভর্তিযুদ্ধে’ নামায় বহু মানুষ তাকে যেমন শুভেচ্ছা জানান, তেমনই উৎসাহও দেন লেগে থাকার জন্য। বেলায়েতের জন্ম ১৯৬৮ সালে। গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিমখণ্ড এলাকায় স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। দৈনিক করতোয়া প্রত্রিকায় শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসাবে তিনি কাজ করেন।