নৈতিকতা কি হারিয়ে যাচ্ছে?
আর কে চৌধুরী
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। সমাজও যেন ক্রমেই বর্বরতার চরমে চলে যাচ্ছে। সমাজ থেকে নৈতিকতা যেন নির্বাসিতপ্রায়। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে। প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ধর্ষণকারীরা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কিছু প্রতিবাদ হলেও ব্যাপক অর্থে গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠছে না। আমাদের সমাজের পরিচয় যেন বদলে যাচ্ছে। গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের নবীনবাগের হেলিপ্যাড এলাকায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। এক বন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তিনি। এ সময় সাত-আটজন যুবক ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে করে এসে দুজনকে তুলে নেয়। পরে খবর পেয়ে অন্য শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ধার করেন। ছাত্রীকে প্রথমে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করতে নেমেছিলেন। কিন্তু বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর দুই দফা হামলা হয়। আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রলীগ এ হামলা চালিয়েছে। ছাত্রলীগ বলছে, ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নয়, বহিরাগতরা এ হামলা চালিয়েছে।
এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বহিরাগতদের হামলা ও উৎপাতের ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে। কিন্তু ধর্ষণ বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা এবারই প্রথম। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে চার দফা দাবি জানিয়েছেন। আমাদের সমাজে কোনো কোনো ঘটনা সমাজ ও মানুষের বিবেককে আলোড়িত করে। বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছিল সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে। সেখানে এক তরুণী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। অভিযুক্ত ধর্ষণকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় ছিল-তারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী। এবার গোপালগঞ্জে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর দুই দফা হামলার ঘটনায়ও এসেছে ছাত্রলীগের নাম। কেন এমন হয়? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। বিশ্ববিদ্যালয়কে অবশ্যই বহিরাগতমুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বর্বর ধর্ষণকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। আমরা আশা করি, ধর্ষণকারীদের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড দেওয়া হবে। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় সামাজিক দুর্বৃত্তদের দমন করা কঠিন হবে না। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে সারা দেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১ হাজার ৩২১ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৯ জন। পরিশেষে বলছি-ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করার জন্য কঠোর আইনই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের খবর যত বেশি পাওয়া যায়, এসব অপরাধের দায়ে অপরাধীদের শাস্তির দৃষ্টান্ত তার চেয়ে অনেক কম। অপরাধ করে পার পাওয়া যায়-এ ধরনের বিশ্বাস থেকে অপরাধীরা অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়। তাই ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস অপরাধের রাশ টেনে ধরতে হবে। অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে গোটা সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।
আর কে চৌধুরী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা