সময়োপযোগী নৈতিক শিক্ষা জরুরি

মো. মোস্তাফিজুর রহমান
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
দেশে যেভাবে শিক্ষার বিস্তার ঘটছে, সেভাবে উন্নত নৈতিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হচ্ছে না। বরং কোনো কোনো শিক্ষিত মানুষের আচরণে আমরা হতাশ হই।
সীমিত সুযোগ ও সামর্থ্যরে সদ্ব্যবহার করে আমাদের পূর্বপুরুষরা পরোপকারের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তুলনামূলক বেশি সুযোগ ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে আমরা তেমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারছি না।
প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সীমিত সামর্থ্যে অতীতের তুলনায় অল্প সময়ে অনেক বেশি মানুষের উপকার করা সম্ভব। প্রশ্ন হলো, আমরা কতজন এখন সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি? উত্তরটা সবারই জানা। এখন সমাজের বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে।
বস্তুত আত্মকল্যাণে মগ্ন থাকার বিষয়টি বর্তমানে সারা বিশ্বে এক স্বাভাবিক প্রবণতা হিসাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবার মনে রাখতে হবে, আমাদের যে গৌরবময় অতীত আছে, বিশ্বের অনেক জাতিরই এমন ঐহিত্য নেই। কাজেই আমাদের উচিত, আমাদের পূর্বপুরুষের মতো পরোপকারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।
একটি শিশু পরিবারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের শিক্ষা পাবে-এটি সবাই আশা করলেও প্রত্যাশা ও বাস্তব পরিস্থিতি কতটা ভিন্ন, তার বিস্তারিত বর্ণনা নিষ্প্রয়োজন।
আজ থেকে কয়েক দশক আগে একজন সচেতন নাগরিক সমাজের অবক্ষয় নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন ছিলেন, শিক্ষার ব্যাপক বিস্তারের পরও সেই নাগরিকের ততটা উদ্বেগ্ন রয়ে গেছে, বরং অনেক ক্ষেত্রে বেড়েছে। এ প্রবণতা থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে হবে।
বিভিন্ন সূচকে আমাদের দেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। এসব অগ্রগতির পাশাপাশি নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চায় আমরা কতটা পিছিয়ে পড়ছি, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চায় আমরা পিছিয়ে পড়লে একটা সময় আমাদের বহু মূল্যবান অর্জনও অর্থহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। কাজেই নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চায় আমরা কেন পিছিয়ে পড়ছি, তা চিহ্নিত করে সমস্যাটির সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে।
প্রতিটি শিশু পরিবার থেকেই উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের দীক্ষা পাবে, এটি প্রত্যাশিত হলেও অনেক শিশুর এমন সৌভাগ্য হয় না। শিশুদের এই ঘাটতি যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূরণ হয়, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষকরা যাতে দক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেজন্য শিক্ষকদের অব্যাহত প্রশিক্ষণের আওতায় আনা জরুরি।
বহু শিক্ষার্থীর পক্ষে কেবল বই পড়েই এসব বিষয় আত্মস্থ করা সম্ভব। এজন্য উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চার গুরুত্বসহ আনুসঙ্গিক বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে বিস্তারিত তুলে ধরা দরকার।
মনে রাখা প্রয়োজন, অভিভাবক, শিক্ষকসহ চারপাশের মানুষ উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় উদাসীন থাকলে শিশুদের ওপর এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে যত গুরুত্বপূর্ণ অর্জনই থাকুক না কেন, আমরা যদি উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারি, তাহলে আমাদের সেসব অর্জনের ঔজ্জ্বল্য হারানোর আশঙ্কা থেকে যাবে।
মো. মোস্তাফিজুর রহমান : গবেষক