Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আ’লীগ ও বিএনপির বাধা কোন্দল তৎপর জাতীয় পার্টি ও জাসদ

Icon

আতাউল করিম খোকন, অমিত রায় ও এনামুল হক বাবুল, নান্দাইল থেকে

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নান্দাইল উপজেলা নিয়ে ময়মনসিংহ-৯ আসনে বিভিন্ন দলের প্রায় দেড় ডজন প্রার্থী দৌড়ঝাঁপে রয়েছেন। প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টার ঝুলিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের পালা শুরু হয়েছে আগেই। করছেন গণসংযোগ, যোগ দিচ্ছেন সভা-সমাবেশেও। গরিবের মাঝে তুলে দিচ্ছেন দান-অনুদান ও শীতবস্ত্র। এলাকাটি কোনো একক দলের ঘাঁটি না হলেও বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোন্দল দৃশ্যমান। উভয় দলেই দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালিত হচ্ছে আলাদাভাবে। বিভক্তির এ ঢেউ আছড়ে পড়ছে তৃণমূলেও। ফলে তৃণমূলের নেতাকর্র্মীরাও বিভ্রান্ত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নান্দাইলে কঠিন রাজনৈতিক মেরুকরণ চলছে। জয় ঘরে তুলতে দলীয় কোন্দল মেটাতে হবে সবার আগে।

নব্বইয়ের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ময়মনসিংহ-৯ আসনের প্রথম ১৯৯১ সালের ভোটে জয় পান বিএনপির আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত ভোটে বিজয়ী হন বিএনপির জহুরুল ইসলাম খান। তবে ১৯৯৬ সালের মূল নির্বাচন ও ২০০৮ সালের ভোটে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম। ২০০১ সালে বিজয়ী হন বিএনপির প্রবীণ নেতা খুররম খান চৌধুরী। সবশেষ ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে এমপি হন আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী।

আসনটিতে বড় দু’দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে। দলের গ্রুপিংয়ের কারণে একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে দলীয় পৃথক কর্মসূচি, সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগের পাশাপাশি পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে দ্বিধাবিভক্ত তৃণমূল। সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামের মনোনয়নপত্র ঋণখেলাপির অভিযোগে বাতিল হলে আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন এমপি হন। এর পর থেকেই দলে কোন্দল বাড়তে থাকে। একদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি ও সাবেক এমপি মে. জে. (অব.) আবদুস সালাম এবং অপর দিকে পূর্বের উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনের দলীয় কার্যক্রম আলাদা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এমএ সালাম ও সহ-সভাপতি শাহাব উদ্দিন ভূইয়া জানান, মূল আওয়ামী লীগে কোন্দল নেই। বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদীন নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। তবে প্রতীক পেলে কোন্দল থাকবে না। যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান মাহমুদ জুয়েল জানান, তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ কমিটি অনুমোদিত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে নান্দাইলে আওয়ামী লীগ আনোয়ারুল আবেদীনের নেতৃত্বে সংগঠিত। শেষ পর্যন্ত দলে কোন্দল থাকবে না।

অপর দিকে বিএনপির সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরী ও তার ভাতিজা লন্ডন প্রবাসী তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ ইয়াসের খান চৌধুরী এবং সৌদি আরব বিএনপির পূর্বাঞ্চল কমিটির সভাপতি একেএম রফিকুল ইসলাম ও তার সহোদর সাবেক পৌরমেয়র এএফএম আজিজুল ইসলাম পিকুলের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য। তাদের মধ্যে বাদানুবাদের সঙ্গে আলাদাভাবে পালন করা হয় দলীয় কর্মসূচি। এ অবস্থা চলমান থাকলে প্রভাব পড়বে নির্বাচনে। জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সুলতান উদ্দিন মাস্টার জানান, অনুমোদিত বিএনপির কমিটিতে কোন্দল নেই। তবে বিএনপির নামে অপর একটি গ্রুপ মাঝেমধ্যে মিটিং-পিকেটিং করে থাকে। ধানের শীষ প্রতীক পেলে বিরোধ থাকবে না। বিএনপির অপর অংশের নেতা সাবেক পৌরমেয়র এএফএম আজিজুল ইসলাম পিকুল জানান, দলের দুর্দিনে আমরা মাঠে ছিলাম ও আছি।

আওয়ামী লীগের ১০ জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এরা হচ্ছেন- বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন, সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মালেক চৌধুরী স্বপন, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যটন বিভাগের প্রধান ও আওয়ামী পর্যটন লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ড. এ আর খান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও আওয়ামী আইনজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল হাই, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এডিএম সালাউদ্দিন হুমায়ূন, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কবির উদ্দিন ভূঁইয়া, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বিশিষ্ট সমাজসেবক ও দানবীর জালাল উদ্দিন মাস্টার, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা শাহাজাহান কবির সুমন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান খান।

জানতে চাইলে আনোয়ারুল আবেদীন যুগান্তরকে জানান, এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। তৃণমূলকে সংগঠিত করে দলীয় কর্মসূচি পালন, গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছি। চার বছরের মাঠপর্যায়ে উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বিজয় ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ আসনে আমার বিকল্প নেই। নৌকা পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আসনটি উপহার দিতে চাই।

সাবেক এমপি মে. জে. (অব.) আবদুস সালাম যুগান্তরকে জানান, নান্দাইলে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত ও জনমানুষের দলে পরিণত করেছি। এমপি থাকার সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে সার্বিক উন্নয়ন করেছি। সাংগঠনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে আশা করছি দলীয় মনোনয়ন এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।

আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালেক চৌধুরী জানান, দল ও মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। দলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মনোনয়ন পেলে বিজয় শতভাগ নিশ্চিত বলে জানান তিনি। আওয়ামী লীগের পর্যটন লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. এ আর খান নান্দাইলের রাজনৈতিক কলহ ভেঙে নতুন রূপরেখায় পর্যটনের মাধ্যমে নান্দাইলকে বদলে দিতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি জানান, নৌকা প্রতীক পেলে বিজয় ছিনিয়ে আনব। অ্যাডভোকেট আবদুল হাই যুগান্তরকে জানান, ২০০৮ সালে ঋণখেলাপির কারণে আবদুস সালামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। ফলে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে মাঠে কাজ শুরু করি। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে মনোনয়নের বৈধতা পান মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম। এবার আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন হুমায়ূন জানান, মাঠে আছি, কাজ করছি। বর্তমান ও সাবেক সাংসদের গোলযোগের কারণে আওয়ামী লীগ থেকে তৃতীয় বক্তি হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আসনটি উপহার দিতে পারব। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কবির উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। মনোনয়ন পেলে জনগণ নৌকার পক্ষে রায় দেবে। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সমাজসেবক ও দানবির জালাল উদ্দিন মাস্টার জানান, সভা-সামবেশ ও দান-অনুদান অব্যাহত রেখেছি।

এদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন- সাবেক এমপি ও ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খুররম খান চৌধুরী, সৌদি আরব বিএনপির পূর্বাঞ্চল কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক একেএম রফিকুল ইসলাম ও তার সহোদর সাবেক মেয়র, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এএফএম আজিজুল ইসলাম পিকুল, সাবেক এমপি আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরীর পুত্র তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ ইয়াসের খান চৌধুরী ও মালয়েশিয়া বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এমডি মামুন বিন আবদুল মান্নান।

চার বারের এমপি খুররম খান চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করি। তৃণমূল আমার নেতৃত্বে সংগঠিত। দলকে শক্ত অবস্থানে রেখেছি। ধানের শীষ নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আসনটি দলকে উপহার দিতে চাই।

বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক একেএম রফিকুল ইসলাম জানান, দেশে-বিদেশে দলকে উজ্জীবিত করার কাজে নিয়োজিত আছি। এলাকার শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দান-অনুদান অব্যাহত রেখেছি। নান্দাইলের মানুষ আমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়। ধানের শীষ পেলে বিজয় নিশ্চিত।

আন্দোলনে নির্যাতিত নান্দাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এএফএম আজিজুল ইসলাম পিকুল জানান, বিএনপির রাজনীতি নান্দাইলের মাটিতে টিকিয়ে রাখতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। তরুণদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপির হাতকে শক্তিশালী করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ধানের শীষ উপহার দিতে চান আরেক নেতা সাবেক এমপি আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরীর পুত্র এবং খুররম খান চৌধুরীর ভাতিজা প্রযুক্তিবিদ ইয়াসের খান চৌধুরী। সাবেক ছাত্রনেতা এমডি মামুন বিন আবদুল মান্নান জানান, বিএনপির মাধ্যমে নান্দাইলকে নতুনরূপে সাজাতে ও দ্বিধাবিভক্ত বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করতে মাঠে কাজ করছি। মনোনয়ন পেলে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারব ইনশাআল্লাহ।

বড় দুই দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কাজে লাগাতে চায় জাতীয় পার্টি ও জাসদ প্রার্থী। নান্দাইলে একাধিক স্কুল-কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, নান্দাইল উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম আবদুল হাকিম ভূইয়ার পুত্র হাসনাত মাহমুদ তালহা জাপার মনোনয়ন পেতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী হাসনাত মাহমুদ তালহা বলেন, নান্দাইলে আওয়ামী লীগের তীব্র কোন্দলের কারণে একমাত্র জাতীয় পার্টিকে এ আসন দেয়া হলে বিজয় সুনিশ্চিত। জাসদ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা জাসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন জানান, দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করছি। আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হতে পারব।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম