৬ দফার কর্মবিরতিতে বন্ধ মেট্রোরেল
মতিন আব্দুল্লাহ
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিরাপত্তাজনিত কারণে ১৮ জুলাই মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়। ইতোমধ্যে ৩০ দিন কেটে গেছে। কিন্তু মেট্রোরেল চালু করছে না কর্তৃপক্ষ। কবে চলবে তারও কোনো উত্তর দিতে পারছেন না তারা। বলছেন-দুর্বৃত্তদের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি স্টেশন ছাড়া সবগুলো স্টেশন যাত্রী ওঠানামার জন্য প্রস্তুত। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৬ দফা আদায়ের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করা যাচ্ছে না।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) দায়িত্বপ্রাপ্তরা এমন কথাই বলছেন। তারা বলেছেন, ১০ম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেশ কিছু দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে। তাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে এমন কথা বলা হয়েছে। তবুও তারা অফিস করছেন না। দাবি মেনে নেওয়ার অফিস আদেশ হওয়ার পর তারা কাজে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান যুগান্তরকে বলেন, আমি আগামীকাল (আজ) থেকে অফিস শুরু করব। এরপর মেট্রোরেল চালুর বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে মেট্রোরেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন ছিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি থেকে ফেরাতে ডিএমটিসিএলে’র একটি সভা করতে হবে। এটা কবে করা সম্ভব হবে তা বলতে পারছি না। তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিতে হলে ওই সভাটা দরকার। পরিবর্তিত সময়ে বেশকিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
মেট্রোরেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, নগরবাসী জানে দুর্বৃত্তদের আগুনে মেট্রো স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আপাতত চলাচল বন্ধ। তবে অপারেশন বন্ধ থাকলেও অন্যান্য স্টেশনে রক্ষণাবেক্ষণ চলছে। বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীরা শিডিউল মেইনটেন্যান্স করে মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠ বিভাগের সব কর্মচারী (১০ম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড) ট্রেন পরিচালনায় নামবে। তারা বলেন, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিজয়ের পর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। সেহেতু নতুন বৈষম্যহীন বাংলাদেশে ঢাকা মেট্রোর ক্ষেত্রেও গ্রেডভিত্তিক সব বৈষম্য দূর করে নতুন উদ্যমে মেট্রোরেল পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ শুরু হবে। কর্মবিরতি পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-প্রথমত, বর্তমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী ১-৯ম গ্রেড পর্যন্ত জাতীয় বেতন স্কেলের ২.৩ গুণ হারে এবং ১০-২০তম গ্রেড পর্যন্ত জাতীয় বেতন স্কেলের ২.০ গুণ হারে প্রদান করা হচ্ছে। যা পরিবর্তন করে বৈষম্যহীন বেতন কাঠামো অর্থাৎ সব গ্রেডের একইরকম বেতন কাঠামো যা জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর ২.৩ গুণ হারে যোগদানের তারিখ থেকে বকেয়াসহ পরিশোধ করা।
দ্বিতীয়ত, চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকে বকেয়াসহ সিপিএফ সুবিধা প্রদান করতে হবে। তৃতীয়ত, অন্য সব সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ও অন্যান্য দেশের মেট্রোর সঙ্গে সমন্বয় করে পদোন্নতির ব্যবস্থা চালুসহ সব ধরনের ভাতা সংবলিত সার্ভিস রুল প্রদান করতে হবে। চতুর্থত, শিক্ষানবিশকাল শেষে যোগদানের তারিখ থেকে স্থায়ীকরণ (নিয়মিতকরণ)। পঞ্চমত, স্টেশন ও ডিপোসহ সব স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ পরিবহণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ষষ্ঠত, সর্বোপরি কর্মক্ষেত্রে স্বৈরাচারী মনোভাব ও বৈষম্যমূলক আচরণ এবং ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ বন্ধ করা।
প্রসঙ্গত, ছয় দফা বাস্তবায়নে গত ৬ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে কর্মবিরতি পালন করে আসছেন মেট্রোরেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের সাড়া না পাওয়ায় তারা কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। এ অবস্থার মধ্যে মেট্রোরেলের এমডি গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছিলেন, গতকাল শনিবার থেকে মেট্রোরেল চলাচল করবে। যদিও পরে তা থেকে সরে এসেছেন তারা। কেননা কর্মবিরতি পালনকারীরা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগদান করবেন না। এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ায় মেট্রোরেল চালুর দিনক্ষণ বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। গত মাসের ১৮ জুলাই বিকাল ৫টায় বন্ধ হয়ে যায় মেট্রোরেল চলাচল। এর পরের দিন বিক্ষোভকারীরা মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশনে ভাঙচুর চালায়।