কোটা সংস্কার আন্দোলন
মৃত্যুর কাছে হার আহত আরও দুজনের
লালমোহন ও নলছিটি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
তেরো দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে হার মানল লালমোহনের গুলিবিদ্ধ কিশোর ওমর ফারুক। ঠিক একই ভাবে দুই সপ্তাহ লড়াই শেষে জীবন প্রদীপ নিভে গেল নলছিটির যুবক সেলিমের। ১৯ জুলাই কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা ১৭ বছরের ওমর ফারুক বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টায় মারা যায় মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। ওমর ফারুক লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মুন্সি বাড়ির ফয়েজুল্লাহ মুন্সির ছেলে। বাবা, বড় ভাই এমরানসহ তিনজন ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। বাবা রায়েরবাগের একটি মসজিদের খাদেম। ওমর ফারুক সেখানে একটি কেমিক্যাল কোম্পানিতে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করত। ১৯ জুলাই বিকালে রায়েরবাগে কোটা আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয় ওমর ফারুক। একটি গুলি তার ফুসফুসে লাগে, আরেকটি গুলি লাগে বগলের নিচে। তাকে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই সে চিকিৎসাধীন ছিল।
ওমর ফারুকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে লালমোহন উপজেলার ৮ জন নিহত হওয়ার তালিকা পাওয়া গেছে। বাকিরা হলেন-লালমোহন লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের ইউসুফের ছেলে আরিফ (হোটেল কর্মচারী), পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের পাঙ্গাসিয়া গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে মোসলেহ উদ্দিন (লন্ড্রি দোকানি), বদরপুর ইউনিয়নের কাজিরাবাদ গ্রামের মৃত দলিল উদ্দিনের ছেলে শাকিল (হোটেল কর্মচারী), কালমা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের হমুজউদ্দিন বাড়ির বজলুর রহমান বেপারীর ছেলে আকতার হোসেন (অটোচালক), একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের লেছ ছকিনা গ্রামের খলিল রদ্দির ছেলে মুফতি শিহাবুদ্দিন (বেফাক কর্মকর্তা) ও আকবর হোসেনের ছেলে সাইদুল (হোটেল কর্মচারী) এবং ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের চরমোল্লাজী গ্রামের শফিউল্যাহর ছেলে হাবিবুল্লাহ (গাড়িচালক)।
জীবন প্রদীপ নিভে গেল সেলিমের : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ চাকরিজীবী যুবক সেলিম তালুকদার অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে বুধবার তার মৃত্যু হয়। সেলিম ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার মল্লিকপুর গ্রামের সুলতান হোসেন তালুকদারের ছেলে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে তার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন স্বজনরা। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
স্বজনরা জানান, ১৮ জুলাই বাড্ডা লিংক রোডের কুমিল্লাপাড়ার বাসা থেকে সকালে নারায়ণগঞ্জে তার অফিসে যাওয়ার জন্য বের হন সেলিম। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে পৌঁছালে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে আটকে পড়েন তিনি। এ সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে সেলিম গুলিবিদ্ধ হন। গুলি তার মাথা, বুক ও পিঠে বিদ্ধ হয়। কে বা কারা প্রথমে মুগদা হসপাতালে নেন তাকে। সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ সেলিমের মোবাইলে সেভ করা তার মায়ের মোবাইল নম্বরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফোন দেন অজ্ঞাতনামা একজন। ফোনে খবর পেয়েই স্বজনরা ওই হাসপাতালে ছুটে যান। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে স্বজনরা বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে আইসিইউ খালি পাননি। অবশেষে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করান সেলিমকে।
স্বজনরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও জানান, প্রায় এক বছর আগে বিয়ে করেন সেলিম। বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে আড়াই বছর আগে তিনি øাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন তিনি। তারা তিন বোন, এক ভাই। সেলিম ছিলেন মেজো।