Logo
Logo
×

শেষ পাতা

চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমস

ডেলিভারির গতি বাড়িয়ে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা

Icon

মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডেলিভারির গতি বাড়িয়ে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা

ফাইল ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় ৫ দিনের ক্ষতি পোষাতে কাজের গতি বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস। ধীরে ধীরে বাড়ছে পণ্য ডেলিভারি (সরবরাহ)। বৃহস্পতিবার একদিনে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ২০১ টিইইউএস কনটেইনার ডেলিভারির রেকর্ড করেছে বন্দর। এরপরও কমছে না কনটেইনার জট। ডেলিভারি শুরু হলেও প্রতিদিন যোগ হচ্ছে জাহাজ থেকে নামা নতুন কনটেইনার। তাই জট থেকেই যাচ্ছে। শনিবার বন্দরে কনটেইনার ছিল ৪১ হাজার ৩৭৫ টিইইউএস (২০ ফুট সমমান)। ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে না গেলেও এই সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি। বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস কনটেইনার রাখার জায়গা রয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় ১৮ জুলাই রাত থেকে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। সার্ভারে প্রবেশ করতে না পারায় বন্ধ হয়ে যায় কাস্টমসে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাব এবং কারফিউর কারণে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারিতে কার্যত অচলাবস্থা দেখা দেয়। ২৩ জুলাই বন্দরের ভেতরে কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ হাজার ৬২০ টিইইউএস। ওই রাত থেকে চট্টগ্রামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হয়। এর ফলে ৫ দিন পর অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত হয় কাস্টমস। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমেই মূলত আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। বুধবার থেকে ডিজিটালি ডেলিভারি কার্যক্রম ফের শুরু হয়। এরফলে কনটেইনারের সংখ্যাও কমতে থাকে। একপর্যায়ে তা ৪০ হাজারের নিচে নেমে এলেও এখন আবার ৪১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেলিভারিতে বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। অস্থিরতার কারণে বেশ কয়েকদিন বন্দর থেকে বের না হতে পারায় কনটেইনার জট তৈরি হয়। ডেলিভারি শুরু হওয়ার পর তারা দ্রুত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এদিকে নতুন আসা কনটেইনার ডেলিভারি নিতেও এক ধরনের হুড়োহুড়ি দেখা যাচ্ছে । তাই বন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।

বন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বন্দর থেকে ৫ হাজার ২০১ টিইইউএস কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। যা চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ। বন্দর থেকে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টিইইউএস বের হয়। ওইদিন ডেলিভারির পর জমা ছিল ৪০ হাজার ২৭২ টিইইউএস। এদিকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ শনিবার সকাল পর্যন্ত ডেলিভারি হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৯ টিইইউএস। শুক্র ও শনিবার আর্থিক এবং সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি থাকায় ডেলিভারি স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়ে থাকে। এ কারণে বন্দরের ভেতরে কনটেইনারের সংখ্যা আবারও কিছুটা বেড়ে ৪১ হাজার ৩৭৫-এ দাঁড়িয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস থেকে ডেলিভারির গতি আবার বাড়বে। সেক্ষেত্রে কনটেইনার জট কমতে শুরু করবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, ‘কয়েকদিন কার্গো জমে যাওয়ায় আমদানিকারকদের চাহিদা বেশি ছিল। সবাই একসঙ্গে ডেলিভারি নিতে আসছেন। আমাদের সক্ষমতা বরাবরই ছিল। এরপরও আমাদেরকে রাত-দিন পরিশ্রম করে পণ্য ডেলিভারি দিতে হয়েছে। আমাদের দিক থেকে বাড়তি তৎপরতাও ছিল। বন্দরের লোকজন সপ্তাহের ৭ দিনই সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। সবাইকে আমরা সক্রিয় রেখেছি, যাতে বন্দরের সেবা কোনোভাবে ব্যাহত না হয়। সব মিলিয়ে একদিনে চলতি বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যক কনটেইনার ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হয়েছে।’

বন্দরের পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণকারী কাস্টমস স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজেও আমদানি-রপ্তানির চালান শুল্কায়নের গতি বেড়েছে। বুধবার ৮ হাজার ১৫৩টি আমদানি-রপ্তানি চালান শুল্কায়ন হয়। শুল্কায়নের জন্য অনলাইনে ৯ হাজার ৩৪৫টি চালানের নথি জমা দেওয়া হয়। তবে শুক্র ও শনিবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শুল্কায়ন কমেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবারও কাস্টম হাউজে কাজ হয়েছে। তবে এদিন শুধু রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন হয়। শনিবার আমদানি-রপ্তানির শুল্কায়ন হলেও ব্যাংক খোলা না থাকায় অনেকে শুল্ক জমা দিতে পারেননি। তাই এদিনও শুল্কায়ন কিছুটা কম হয়েছে। তবে আমরা প্রস্তুত ছিলাম।

সূত্রমতে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৮ হাজার কোটি টাকা শুল্ক আদায় করে। গড়ে প্রতিদিন শুল্ক আদায়ের পরিমাণ ১৮৬ কোটি টাকা। এই হিসাবে ৫ দিন শুল্কায়ন বন্ধ থাকায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯৩০ কোটি টাকা।

এদিকে রপ্তানি পণ্য শুল্কায়ন না হওয়ায় ৫ দিনে বিরাট ক্ষতির মুখোমুখি হয় দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। এ শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। যথাসময়ে বিদেশি ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছাতে না পারায় তারা রপ্তানি আদেশ বাতিলসহ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম