সিলেটে বৃষ্টিতে বেড়েছে বন্যার ব্যাপ্তি
ওসমানী মেডিকেলে পানি, আরও বাড়িঘর প্লাবিত
সিলেটে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নতুন করে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নগরীর অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। রোববার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে সোমবার পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। বৃষ্টিতে নগরীর শতাধিক এলাকার বাসাবাড়ি ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পানি ঢুকে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবারের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল করা হয় বলে জানিয়েছেন এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী। তিনি জানান, প্রবেশ ফটক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক ভবন, কলেজ ফটক, ছাত্রীনিবাস ও ছাত্রাবাসেও পানি উঠেছে। অবস্থা অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, হাসপাতালের তিনটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এতে চিকিৎসাসেবায় ব্যাঘাত ঘটছে। প্রশাসনিক কক্ষ এবং বারান্দাতেও পানি আছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনসহ ১৪ উপজেলায় বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি। এসব উপজেলার ৫৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছে ১ হাজার ৪শ মানুষের।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা জানায়, নতুন করে আরও ৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলররা খাবার পানি, স্যালাইন বিতরণ করছেন। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান সিলেটে ভারি বৃষ্টিপাত আগামী কয়েকদিন থাকতে পারে। এছাড়া মৌসুমি বায়ুর প্রভাব সিলেটের দিকে চলে এসেছে, ফলে সামনের দিনগুলোতে বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিক্ষতির মুখে সিলেটের মৎস্য সম্পদ। ঢলের পানিতে ভেসে গেছে জেলার দেড় সহস্রাধিক হেক্টরের মাছের ঘের। আর্থিক হিসাবে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা। সিলেট জেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক সীমা রাণী বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মৎস্য অফিস জানায়, বন্যার পানিতে ৭ হাজার ৩৮২ জন মৎস্য চাষি ও খামারির ৮ হাজার ২৫৮টি পুকুর, দিঘি ও মৎস্য খামারের মাছের পোনা ও মাছ ভেসে গেছে। অপরদিকে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় রোগবালাইয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সিলেটের কানাইঘাটে ১২টি মেডিকেল টিম মাঠে নামানো হয়েছে।
গোলাপগঞ্জে পানিবন্দি কয়েকশ মানুষ : গোলাপগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, গোলাপগঞ্জে বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। এতে তলিয়ে গেছে উপজেলার ১৫টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েকশ মানুষ। সুরমা ও কুশিয়ারা নদী পানিতে টইটম্বুর অবস্থা। জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ বাজারে জমেছে হাঁটুপানি। সিলেট-জকিগঞ্জ রুটের গাছতলা এলাকায় রাস্তায় পানি উঠে ব্যাহত হচ্ছে যানচলাচল। বাঘা, শরীফগঞ্জ, ভাদেশ্বর, বুধবারীবাজার, বাদেপাশা, ঢাকা দক্ষিণ ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা হয়েছে জলমগ্ন। এর মধ্যে বুধবারীবাজার, বাঘা ও ভাদেশ্বরের নিম্নাঞ্চল এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী সোমবার পর্যন্ত বুধবারীবাজার ইউনিয়নে থাকা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে ৩টি পরিবারের ১৮ জন লোক।
হাকালুকি হাওড়ে বাড়ছে পানি : বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, বড়লেখায় রোববার রাতের তিন ঘণ্টার ভারি বর্ষণে পৌরসভা ও উপজেলার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাকালুকি হাওড়ে ক্রমশ পানি বৃদ্ধিতে স্থায়ী বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সোনাই নদীর চান্দগ্রাম ও হলদিরপাড় এলাকার ডাইকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন কিংবা আক্রান্ত মানুষের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়নি। তবে পৌরমেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী ঘূর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবকালীন ও পরবর্তী ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
ওসমানী মেডিকেলে পানি, আরও বাড়িঘর প্লাবিত
সিলেটে বৃষ্টিতে বেড়েছে বন্যার ব্যাপ্তি
সিলেট ব্যুরো
০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেটে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নতুন করে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নগরীর অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। রোববার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে সোমবার পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। বৃষ্টিতে নগরীর শতাধিক এলাকার বাসাবাড়ি ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পানি ঢুকে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবারের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল করা হয় বলে জানিয়েছেন এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী। তিনি জানান, প্রবেশ ফটক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক ভবন, কলেজ ফটক, ছাত্রীনিবাস ও ছাত্রাবাসেও পানি উঠেছে। অবস্থা অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, হাসপাতালের তিনটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এতে চিকিৎসাসেবায় ব্যাঘাত ঘটছে। প্রশাসনিক কক্ষ এবং বারান্দাতেও পানি আছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনসহ ১৪ উপজেলায় বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি। এসব উপজেলার ৫৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছে ১ হাজার ৪শ মানুষের।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা জানায়, নতুন করে আরও ৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলররা খাবার পানি, স্যালাইন বিতরণ করছেন। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান সিলেটে ভারি বৃষ্টিপাত আগামী কয়েকদিন থাকতে পারে। এছাড়া মৌসুমি বায়ুর প্রভাব সিলেটের দিকে চলে এসেছে, ফলে সামনের দিনগুলোতে বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিক্ষতির মুখে সিলেটের মৎস্য সম্পদ। ঢলের পানিতে ভেসে গেছে জেলার দেড় সহস্রাধিক হেক্টরের মাছের ঘের। আর্থিক হিসাবে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা। সিলেট জেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক সীমা রাণী বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মৎস্য অফিস জানায়, বন্যার পানিতে ৭ হাজার ৩৮২ জন মৎস্য চাষি ও খামারির ৮ হাজার ২৫৮টি পুকুর, দিঘি ও মৎস্য খামারের মাছের পোনা ও মাছ ভেসে গেছে। অপরদিকে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় রোগবালাইয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সিলেটের কানাইঘাটে ১২টি মেডিকেল টিম মাঠে নামানো হয়েছে।
গোলাপগঞ্জে পানিবন্দি কয়েকশ মানুষ : গোলাপগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, গোলাপগঞ্জে বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। এতে তলিয়ে গেছে উপজেলার ১৫টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েকশ মানুষ। সুরমা ও কুশিয়ারা নদী পানিতে টইটম্বুর অবস্থা। জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ বাজারে জমেছে হাঁটুপানি। সিলেট-জকিগঞ্জ রুটের গাছতলা এলাকায় রাস্তায় পানি উঠে ব্যাহত হচ্ছে যানচলাচল। বাঘা, শরীফগঞ্জ, ভাদেশ্বর, বুধবারীবাজার, বাদেপাশা, ঢাকা দক্ষিণ ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা হয়েছে জলমগ্ন। এর মধ্যে বুধবারীবাজার, বাঘা ও ভাদেশ্বরের নিম্নাঞ্চল এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী সোমবার পর্যন্ত বুধবারীবাজার ইউনিয়নে থাকা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে ৩টি পরিবারের ১৮ জন লোক।
হাকালুকি হাওড়ে বাড়ছে পানি : বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, বড়লেখায় রোববার রাতের তিন ঘণ্টার ভারি বর্ষণে পৌরসভা ও উপজেলার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাকালুকি হাওড়ে ক্রমশ পানি বৃদ্ধিতে স্থায়ী বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সোনাই নদীর চান্দগ্রাম ও হলদিরপাড় এলাকার ডাইকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন কিংবা আক্রান্ত মানুষের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়নি। তবে পৌরমেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী ঘূর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবকালীন ও পরবর্তী ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2024