ঢাকার লক্কড়ঝক্কড় বাস মেরামত নিয়ে সংশয়
সময় বাড়লেও মালিকদের কোনো উদ্যোগ নেই * অভিযান শুরু হলে গাড়ি চালাবেন না শ্রমিকরা
আরও এক মাস সময় বাড়লেও রাজধানীর লক্কড়ঝক্কড় বাস মেরামত নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। মালিকরা বাসগুলো মেরামত করতে চান না জানিয়ে পরিবহণ শ্রমিকরা বলছেন, অভিযান শুরু হলে তারা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামবেন না। এতে দুর্ভোগের শিকার হবেন যাত্রীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগেও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা এসেছে। কিন্তু তা কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। তারা বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করে অভিযানে নামলে এর সুফল মিলবে না।
জানা গেছে, রাজধানীর সড়ক থেকে ভাঙাচোরা, রংচটা, ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধ করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) ২ এপ্রিল এক সভায় আশ্বাস দেন বাস মালিকেরা। তারা এসব গাড়ি সারাতে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত সময় চান। বিআরটিএ তাতে রাজি হয়। তখন বলা হয়, ১ জুন রাজধানীতে এসব ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে। তবে ১৬ মে একটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিআরটিএ আরও এক মাস বাড়িয়ে ১ জুলাই থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে।
বিআরটিএর রোড সেফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেছেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে। তবে ১ জুলাই থেকে তা আরও জোরদার করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিআরটিএর ঘোষণার পর এ পর্যন্ত খুব কম সংখ্যক যানবাহন মেরামত হয়েছে। যখনই পরিবহণ সেক্টরে অনিয়ম বন্ধে প্রশাসন পদক্ষেপ নেয়, তখনই মালিক-শ্রমিকরা ভেদাভেদ ভুলে একাট্টা হন। তারা রাস্তায় গাড়ি না নামিয়ে শুরু করেন অঘোষিত ধর্মঘট। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। এক পর্যায়ে পিছু হটতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্টরা। অতিতে এরকম অসংখ্য নজির রয়েছে। ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর বিআরটিএ জানিয়েছিল, কিছু বাস-মিনিবাসের রংচটা, জরাজীর্ণ, জানালা-দরজার কাচ ভাঙা, সামনে-পেছনের লাইট ভাঙা, কোনোটিতে কালো ধোঁয়া নির্গমন হচ্ছে। ভেতরে ফ্যান থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা ভাঙা ও অচল দেখা যায়। সিটের কভারও অপরিষ্কার। অস্বাস্থ্যকর ও ত্রুটিযুক্ত এসব গাড়ি মেরামতে দেড় মাসের সময় বেঁধে দিয়েছিল মালিকদের। ওই সময়ও বাস মালিকরা বিআরটিএকে আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সরেজমিন মঙ্গলবার ও বুধবার রাজধানীতে চলাচলরত ১১টি পরিবহণের চালক ও তার সহকারীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা যুগান্তরকে জানান, ত্রুটিহীন গাড়ির সংখ্যা ঢাকার রাস্তায় খুবই কম। মালিকরা এসব গাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রজাপতি পরিবহণের একজন চালক যুগান্তরকে বলেন, এই যে আমার গাড়িটা, এটা যে রকম ভাঙাচোরা, তা মেরামত করতে মালিকের অনেক টাকার প্রয়োজন। মালিক এই গাড়ির পেছনে টাকাও খরচ করবে না। এটি মেরামতও করবে না। তিনি বলেন, অভিযান শুরু হলে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামব না। একই কথা জানান, অন্য পরিবহণের শ্রমিকরাও।
এদিকে অচিম পরিবহণ ও ইতিহাস পরিবহণের চেয়ারম্যান এবং ঠিকানা পরিবহণের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. দেলোয়ার হোসেন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, আয়-ইনকাম এতটাই খারাপ যে, মালিকদের চাপ দিয়েও গাড়িতে কাজ করানো যাচ্ছে না। অনেক মালিক টাকার অভাবে গাড়ি বসিয়ে রেখেছে। তিনি বলেন, যন্ত্রপাতির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তাছাড়া আগে ছিল ২শ টাকার মামলা, এখন সর্বনিু ৫ হাজার টাকার মামলা। এই অবস্থায় মালিকরা গাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছে। এই গাড়িগুলো ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অভিযান শুরু হলে ত্রুটিপূর্ণ গাড়িগুলো রাস্তায় নামবে না। যেসব গাড়িতে কাজ করানো হবে সেগুলো রাস্তায় নামবে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আহমেদ জামিল যুগান্তরকে বলেন, নগরীর বাস মালিকরা কোনো কিছুতেই সোজা হবে না। এরা আগের মতো বাসে সস্তা রং করাবে। এরপর কিছুদিন যেতেই সেগুলো উঠে গিয়ে আবার যেইসেই অবস্থা হবে। অভিযান পরিচালনা করেও কোনো লাভ হবে না। কারণ অভিযানের সময় মালিকরা বাস চালানো বন্ধ রাখে। অভিযান শেষ হলে আবার রাস্তায় বাস নামায়।
বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, অতীতে যখনই ঢাকায় ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে, তখনই মালিক শ্রমিকরা অঘোষিত ধর্মঘট করে। এক কথায় আমরা পরিবহণ সেক্টরে অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযানে নামলেই তারা যাত্রী জিম্মি করে।
পরিবহণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ হাদীউজ্জামান বলেন, প্রত্যেক রুট নির্ধারণ করে সেখানে ভালোমানের বাস দেওয়া এবং চাহিদা অনুযায়ী বাস যদি নামানো যায়, তাহলে আনফিট লক্কড়-ঝক্কড় ইকোনমিক লাইফ শেষ হয়ে যাওয়া বাসগুলো সড়ক থেকে তুলে নেওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নগরীর গণপরিবহণের প্রায় ৮০ শতাংশ গাড়ির ডকুমেন্ট ত্রুটিপূর্ণ। গাড়ির সামনের লাইট নেই, জানালার গ্লাস ভাঙা, গাড়ির রং উঠে গেছে। মামলা নিয়েই এসব গাড়ি চলাচল করছে। একটি গাড়ির বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।
ঢাকার লক্কড়ঝক্কড় বাস মেরামত নিয়ে সংশয়
সময় বাড়লেও মালিকদের কোনো উদ্যোগ নেই * অভিযান শুরু হলে গাড়ি চালাবেন না শ্রমিকরা
ইকবাল হাসান ফরিদ
২৫ মে ২০২৪, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরও এক মাস সময় বাড়লেও রাজধানীর লক্কড়ঝক্কড় বাস মেরামত নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। মালিকরা বাসগুলো মেরামত করতে চান না জানিয়ে পরিবহণ শ্রমিকরা বলছেন, অভিযান শুরু হলে তারা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামবেন না। এতে দুর্ভোগের শিকার হবেন যাত্রীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগেও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা এসেছে। কিন্তু তা কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। তারা বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করে অভিযানে নামলে এর সুফল মিলবে না।
জানা গেছে, রাজধানীর সড়ক থেকে ভাঙাচোরা, রংচটা, ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধ করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) ২ এপ্রিল এক সভায় আশ্বাস দেন বাস মালিকেরা। তারা এসব গাড়ি সারাতে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত সময় চান। বিআরটিএ তাতে রাজি হয়। তখন বলা হয়, ১ জুন রাজধানীতে এসব ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে। তবে ১৬ মে একটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিআরটিএ আরও এক মাস বাড়িয়ে ১ জুলাই থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে।
বিআরটিএর রোড সেফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেছেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে। তবে ১ জুলাই থেকে তা আরও জোরদার করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিআরটিএর ঘোষণার পর এ পর্যন্ত খুব কম সংখ্যক যানবাহন মেরামত হয়েছে। যখনই পরিবহণ সেক্টরে অনিয়ম বন্ধে প্রশাসন পদক্ষেপ নেয়, তখনই মালিক-শ্রমিকরা ভেদাভেদ ভুলে একাট্টা হন। তারা রাস্তায় গাড়ি না নামিয়ে শুরু করেন অঘোষিত ধর্মঘট। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। এক পর্যায়ে পিছু হটতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্টরা। অতিতে এরকম অসংখ্য নজির রয়েছে। ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর বিআরটিএ জানিয়েছিল, কিছু বাস-মিনিবাসের রংচটা, জরাজীর্ণ, জানালা-দরজার কাচ ভাঙা, সামনে-পেছনের লাইট ভাঙা, কোনোটিতে কালো ধোঁয়া নির্গমন হচ্ছে। ভেতরে ফ্যান থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা ভাঙা ও অচল দেখা যায়। সিটের কভারও অপরিষ্কার। অস্বাস্থ্যকর ও ত্রুটিযুক্ত এসব গাড়ি মেরামতে দেড় মাসের সময় বেঁধে দিয়েছিল মালিকদের। ওই সময়ও বাস মালিকরা বিআরটিএকে আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সরেজমিন মঙ্গলবার ও বুধবার রাজধানীতে চলাচলরত ১১টি পরিবহণের চালক ও তার সহকারীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা যুগান্তরকে জানান, ত্রুটিহীন গাড়ির সংখ্যা ঢাকার রাস্তায় খুবই কম। মালিকরা এসব গাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রজাপতি পরিবহণের একজন চালক যুগান্তরকে বলেন, এই যে আমার গাড়িটা, এটা যে রকম ভাঙাচোরা, তা মেরামত করতে মালিকের অনেক টাকার প্রয়োজন। মালিক এই গাড়ির পেছনে টাকাও খরচ করবে না। এটি মেরামতও করবে না। তিনি বলেন, অভিযান শুরু হলে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামব না। একই কথা জানান, অন্য পরিবহণের শ্রমিকরাও।
এদিকে অচিম পরিবহণ ও ইতিহাস পরিবহণের চেয়ারম্যান এবং ঠিকানা পরিবহণের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. দেলোয়ার হোসেন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, আয়-ইনকাম এতটাই খারাপ যে, মালিকদের চাপ দিয়েও গাড়িতে কাজ করানো যাচ্ছে না। অনেক মালিক টাকার অভাবে গাড়ি বসিয়ে রেখেছে। তিনি বলেন, যন্ত্রপাতির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তাছাড়া আগে ছিল ২শ টাকার মামলা, এখন সর্বনিু ৫ হাজার টাকার মামলা। এই অবস্থায় মালিকরা গাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছে। এই গাড়িগুলো ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অভিযান শুরু হলে ত্রুটিপূর্ণ গাড়িগুলো রাস্তায় নামবে না। যেসব গাড়িতে কাজ করানো হবে সেগুলো রাস্তায় নামবে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আহমেদ জামিল যুগান্তরকে বলেন, নগরীর বাস মালিকরা কোনো কিছুতেই সোজা হবে না। এরা আগের মতো বাসে সস্তা রং করাবে। এরপর কিছুদিন যেতেই সেগুলো উঠে গিয়ে আবার যেইসেই অবস্থা হবে। অভিযান পরিচালনা করেও কোনো লাভ হবে না। কারণ অভিযানের সময় মালিকরা বাস চালানো বন্ধ রাখে। অভিযান শেষ হলে আবার রাস্তায় বাস নামায়।
বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, অতীতে যখনই ঢাকায় ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে, তখনই মালিক শ্রমিকরা অঘোষিত ধর্মঘট করে। এক কথায় আমরা পরিবহণ সেক্টরে অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযানে নামলেই তারা যাত্রী জিম্মি করে।
পরিবহণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ হাদীউজ্জামান বলেন, প্রত্যেক রুট নির্ধারণ করে সেখানে ভালোমানের বাস দেওয়া এবং চাহিদা অনুযায়ী বাস যদি নামানো যায়, তাহলে আনফিট লক্কড়-ঝক্কড় ইকোনমিক লাইফ শেষ হয়ে যাওয়া বাসগুলো সড়ক থেকে তুলে নেওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নগরীর গণপরিবহণের প্রায় ৮০ শতাংশ গাড়ির ডকুমেন্ট ত্রুটিপূর্ণ। গাড়ির সামনের লাইট নেই, জানালার গ্লাস ভাঙা, গাড়ির রং উঠে গেছে। মামলা নিয়েই এসব গাড়ি চলাচল করছে। একটি গাড়ির বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2024