Logo
Logo
×

শেষ পাতা

১৪ দল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের অংশ নিয়ে খ্রিষ্টান দেশ বানানোর চক্রান্ত চলছে

বঙ্গোপসাগরে ঘাঁটি বানানোর প্রস্তাবও দিয়েছে ‘সাদা চামড়ার’ দেশ * রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই * জ্বালাও-পোড়াও করলে ছাড় নেই, যতই মুরব্বি ধরুক আর যাই করুক ছাড়ব না

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের অংশ নিয়ে খ্রিষ্টান দেশ বানানোর চক্রান্ত চলছে

গণভবনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে বক্তৃতা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের একটি অংশ নিয়ে পূর্ব তিমুরের মতো খ্রিষ্টান দেশ বানানোর চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে ঘাঁটি বানানোর প্রস্তাবও দিয়েছে ‘সাদা চামড়ার’ দেশ। আমার ক্ষমতায় আসতেও অসুবিধা হবে না, যদি আমি বাংলাদেশে কারও এয়ার বেজ করতে দিই, ঘাঁটি করতে দিই-তাহলে আমার কোনো অসুবিধা নেই। গণভবনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ১৪ দল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি একই জবাব দিয়েছি, আমি স্পষ্ট বলেছি-আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি, দেশের অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারও হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না, ক্ষমতার দরকার নেই। যদি জনগণ চায় ক্ষমতায় আসব, না হলে আসব না।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ইনফ্লুলেশন। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, আমেরিকাতেও এ সমস্যা রয়েছে। অনেক দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, আমাদেরও। কোভিডের সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, যাতায়াত, আমদানি-রপ্তানি সব বন্ধ ছিল। তাছাড়া আরেকটা কথা হচ্ছে, যারা হুন্ডির ব্যবসা করে, যাতায়াত না থাকায় তারা (করোনার সময়) হুন্ডির ব্যবসা করতে পারেনি। ফলে টানা ব্যাংকে লেনদেন করতে হয়েছে। ফলে আমাদের রিজার্ভ বেড়ে গিয়েছিল। এরপর সবকিছু যখন চালু হলো, তখন খরচ হবেই। আপৎকালীন সময়ের জন্য আমাদের যদি খাদ্য মজুত থাকে, তখন রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার ব্যাপার নেই। এটা নিয়ে বেশি চিন্তার কিছু নেই। 

তিনি বলেন, রিজার্ভ বলতে বলতে মানুষকে মানুষকে এত সচেতন করে ফেলেছি, সবাই এখন রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। সবাই জিডিপি নিয়ে কথা বলে। এটা লক্ষণ ভালো, কারণ আমাদের মানুষ (এসব বিষয়ে) নজর দেওয়া শিখছে। কিন্তু জিনিসের দাম কমানো, এখানেও অনেক খেলা হয়। আজকে দেখলাম আলু যেখানে রাখে, সেখানে ডিম নিয়ে রাখা। আলুর জন্য যে হিমাগার সেখানে তো ডিম রাখার কথা নয়। কিন্তু ডিম নিয়ে আলুর স্টোরে রাখা হচ্ছে। এমন অনেক ঘটনা ঘটছে। জমি অনাবাদি না রেখে সবাইকে চাষাবাদ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি টুঙ্গিপাড়ায় আমার নিজের জমি আবাদ করতে শুরু করেছি। আমাদের বেশ কিছু জমি অনাবাদি ছিল, সেই সঙ্গে আশপাশে যাদের জমি অনাবাদি ছিল পুরো জায়গা পরিষ্কার করে আমরা চাষ শুরু করেছি। 

শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে আমরা যদি আমাদের সব অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে পারি আমাদের কোনো অভাব হবে না। আমাদের শরীয়তপুরের তরিতরকারি সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছে। ফুল রপ্তানি হচ্ছে। এভাবে আমরা চতুর্দিকে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের যে অর্জন, এগুলো ধরে সামনের দিকে এগোতে হবে। স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে আমরা সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি। পাশাপাশি ২১০০ সালে বাংলাদেশ ডেল্টাপ্ল্যান করে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে আমরা চুক্তি করে বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় যে ঘটনাগুলো ঘটছে, মানুষ হত্যা, নারী হত্যা, শিশু হত্যা থেকে শুরু করে রীতিমতো গণহত্যা। আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর প্রতিবাদ করি, আমি যেখানেই যাই প্রতিবাদ করি এবং যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাই। এ বিষয়ে আমাদের নীতি সব সময় ঠিক থাকবে। কারণ আমরা চাই না এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটুক। ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে আমরা শোক দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছি। আজকেই সেটা পালন করলাম। এ সময় মিয়ানমার থেকে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মিয়ানমারে এখন খুবই খারাপ অবস্থা। এখন এরা কবে যে ফেরত যাবে তারও কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। 

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন যুদ্ধের জন্য দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন বলেন, পরিবহণ থেকে শুরু করে সবই কিছুর খরচ বেড়ে গেছে। তবুও আমাদের দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তেল, গ্যাস, ভোজ্য তেলমহ যা যা লাগে আমরা ক্রয় করি। আমরা পারিবারিক কার্ড দিয়েছি। ভর্তুকি দিয়ে সেখানে চাল, ডাল, তেল যাতে তারা অল্প দামে কিনতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। 

জ্বালাও-পোড়াও অগ্নি-সংযোগের বিরুদ্ধে আবারও কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এগুলো যেন আর না করতে পারে। এটা যারা করবে তাদের কোনো ছাড় নেই। যতই মুরব্বি ধরুক আর যাই করুক, এদের আমরা ছাড়ব না, পরিষ্কার কথা। মানুষের ক্ষতি যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত থাকবে। পঁচাত্তর-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জয় বাংলা নিষিদ্ধ ছিল। আজকে জয় বাংলা স্লোগান চলে এসেছে। জাতির পিতার নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, সেই ইতিহাস বিকৃতি আমরা পরিবর্তন করতে সফল হয়েছি। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এটাই জোট নেত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম বৈঠক। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জোটের শীর্ষ নেতারা। পরে শুরু হয় মূল আলোচনা। এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টি- জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মুঞ্জু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াসহ জোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন।
 

Jamuna Electronics

img img
Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম