ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখাই চ্যালেঞ্জ
রাজাকারের তালিকা পেলে প্রকাশ করা হবে -মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী * আগুনের ঘটনা খতিয়ে দেখা উচিত-প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা * অনিবন্ধিত পোর্টাল গুজব ছড়ায়-তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, কমিটির কাছ থেকে রাজাকারের তালিকা পেলেই তা প্রকাশ করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুনের ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখা উচিত। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, গুজব প্রতিরোধে ডিসিদের চার কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল গুজব ছাড়ায়। মঙ্গলবার চলমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের তৃতীয় দিনের বিভন্ন কর্ম অধিবেশন শেষে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, সরকারিভাবে রাজাকারের যে তালিকা ছিল, ওই তালিকা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যখন দেখা গেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যারা যুদ্ধের সপক্ষে ছিলেন, তাদের নাম রাজাকারের তালিকায় এসেছে; তখন দেশবাসী এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। এখন তালিকা দুইভাগে ভাগ করেছি। একটি হলো সক্রিয়ভাবে যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। যেমন: পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে রাস্তাঘাট চিনিয়ে দিয়ে বাড়িঘর পোড়ানোর জন্য সহযোগিতা করেছে, লুটপাট করেছে, অস্ত্র নিয়ে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের একটি তালিকা হচ্ছে। আবার অনেকেই আছেন যারা রাজাকার হিসাবে নাম দিয়ে রেখেছেন জীবন বাঁচানোর জন্য। পরিস্থিতির কারণে তখন হয়তো তাদের কিছু করার ছিল না। কাজেই এটা একটি জটিল ব্যাপার। তারপরও শাজাহান খানের নেতৃত্বে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ওনারা কাজ করছেন। ওই কমিটি আমাদের কাছে তালিকা পাঠালে আমরা সেটি প্রকাশ করব। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন কাজী ফিরোজ রশীদ এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেইন এবি তাজুল ইসলাম।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বধ্যভূমি, যুদ্ধকালীন ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস নির্মাণের কাজ চলছে। কাজগুলো যেন যথাযথভাবে হয়, সেজন্য তাদের (ডিসি) তদারকি-তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না-জবাবে তিনি বলেন, আশা করছি, রমজানের পরই শিডিউল ঘোষণা করা হবে এবং মে মাসের মধ্যেই নির্বাচন হয়ে যাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। ডিসিদের অনুরোধ করা হয়েছে তারা যেন দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করেন। বিশেষ করে রোজার আগে তারা যেন পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহযোগিতা করেন। ডিসিরা জানতে চেয়েছেন করোনার সময়ের মতো ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যবস্থা করা যায় কি না। আমরা সেটা যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা করে দেখব। জেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা কোর কমিটির সভা প্রতিমাসে করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যাতে সবার সঙ্গে সবার একটা বোঝাপড়া থাকে। যেন কোনো অসুবিধা হলে সেটা দ্রুত সমাধান করা যায়। যত্রতত্র বালু উত্তোলন না করা হয়, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের বলা হয়েছে। ডিসিদের যখন প্রয়োজন, তখনই নিরাপত্তা বাহিনী তাদের পাশে থাকবে বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া আগুনের ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে আপনারা ষড়যন্ত্র হিসাবে দেখছেন কি না? জবাবে তারেক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, এটাই আমি বলেছি ডিসিদের। আমরা এসব ব্যাপারে ইনভল্ভ হই না, আমরা শুধু উদ্ধারকাজে ইনভল্ভ হই। খুঁজে বের করা, খতিয়ে দেখা, উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবু এটা দেখা উচিত। তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, ক্রস বর্ডার কিলিং তো এটা আসলে কোনো পরিকল্পিত কিছু না। এক্ষেত্রে দুই পক্ষেরই দোষ থাকে। আমাদেরও দোষ, বর্ডারের ওই পাশের ওদেরও দোষ। তিনি বলেন, এটা কিলিং না ইনসিডেন্ট বলতে পারেন। গুজব প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকদের চারটি কৌশল অবলম্বন করতে বলেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, সরকার এবং জনগণের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে সেতুবন্ধের ভূমিকা পালন করেন জেলা প্রশাসকরা। একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অন্যদিকে উন্নয়ন কার্যক্রম তদারকি করা। উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকদের যে দায়িত্ব আছে, সেগুলো নিয়েই কথা হয়েছে। কৌশলগুলো সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রথমত, ডিজিটাল ও এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স) বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, যেসব আইন আছে, সেগুলো শক্তভাবে প্রয়োগ করা এবং চতুর্থ, পুলিশ প্রশাসন যাতে সমন্বয় করে কাজ করে। এই চারটি কৌশল আমরা বলেছি সাইবার সিকিউরিটি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব প্রতিরোধের জন্য।
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, জবাবদিহি ও শৃঙ্খলার স্বার্থে পেশাদার এবং নিবন্ধিত অনলাইন পোর্টালই থাকবে। অনলাইনে কতগুলো আনরেজিস্টার্ড (অনিবন্ধিত) পোর্টাল আছে, যে পোর্টালগুলো বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ায়। আমরা সেগুলোকে স্ট্রিমলাইন করাচ্ছি, একটা পরিকল্পনা আমাদের আছে। যারা পেশাদার এবং রেজিস্টার্ড (নিবন্ধিত) আইনগতভাবে সিদ্ধ, সেগুলোই থাকবে এবং চলবে। যাতে সবকিছুর মধ্যে একটা জবাবদিহি থাকে এবং একটা শৃঙ্খলা থাকে। যেটা আপনারা (সাংবাদিক) চান, বিভিন্ন সময় আপনারা দাবি করেন।
তিনি বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে যেসব গুজব ছড়ায়, সেখানে তো আমি একা কিছু করতে পারব না। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী আছেন। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।