সিন্ডিকেটের কারসাজি অব্যাহত : ভোগান্তির শেষ নেই ক্রেতার
উলটো বাড়ল ভোজ্যতেল পেঁয়াজ ও চালের দাম
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ: সয়াবিন লিটারে ২ টাকা, পেঁয়াজ কেজিতে ১৫ টাকা, চাল বস্তায় ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে
সরকার চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানির ওপর শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এর কোনো প্রভাব নেই। বরং কমার পরিবর্তে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে লিটারে দুই টাকার কাছাকাছি। পেঁয়াজের দামও আগের মতোই অস্থির। খুচরা বাজারে দেশি এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
কয়েকদিন আগেও যে দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল সেই পেঁয়াজ শুক্রবার ১০৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ দাম ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। পাশাপাশি বেড়েছে চালের দামও। চিনি আগের মতো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে কমেছে আলু ও শীতকালীন সবজির দাম।
সরকার কোনো পণ্যের দামে শুল্ক বাড়ালে ব্যবসায়ীরা মিনিটের মধ্যে কার্যকর করে। আর দাম কমালে দিনের পর দিনও কার্যকর হয় না। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্ধারিত দাম বাজারে কার্যকর হয়েছে কিনা, তা দেখারও যেন কেউ নেই। সাধারণ মানুষ অসহায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে। আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানির ওপর শুল্ক-কর ছাড় দিয়ে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলে আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে প্রতি কেজি অপরিশোধিত সয়াবিনে ৫ টাকা ৬৭ পয়সা কর ভার কমবে। পাম তেলে কেজিতে কর ভার কমবে ৪ টাকা ৬৬ পয়সা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা শুল্ক কমানোর বিষয়টি পাত্তা দিতে রাজি নন। মূলত বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে আমদানিকারকরা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭২ টাকা থেকে ১৭৩ টাকায়। যা নির্বাচনের আগে বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকায়। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। দাম বাড়িয়ে ৫ লিটারের বোতল নির্বাচনের আগে বাজারে ছাড়লেও নতুন দামের এক লিটারের সয়াবিন তেল নির্বাচনের পরই বাজারে এসেছে।
এদিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা বলছেন, গত বছরের নভেম্বরে ডলারের দাম বেড়ে যায়। প্রতি ডলারের মূল্য ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২২-১২৪ টাকা হয়ে যায়। ওই সময় (৯ নভেম্বর) ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের কাছে এই দাম সমন্বয়ের আবেদন করে।
অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে, আগে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার টাকা, যা আগে ছিল তিন হাজার টাকা।
প্রতি কেজি চিনিতে আমদানিকারকরা গড়ে শুল্ককর দিয়েছেন ৪০ দশমিক ৩৫ টাকা। এখন শুল্ককরে ছাড় দেওয়া হয়েছে কেজিতে ৭৫ পয়সা। তাতে নতুন করে চিনি আমদানিতে প্রতি কেজিতে আমদানিকারকদের ৩৯ টাকার বেশি কর দিতে হবে। কিন্তু চিনি বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই। প্যাকেটজাত চিনি কেজি ১৪৮ টাকা এবং খোলা চিনি কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সিদ্ধ ও আতপ চালের ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগে চাল আমদানিতে কেজিতে কর ভার ছিল ৩১ টাকা। এখন তা কেজিতে সাড়ে ২৩ টাকা কমবে। কিন্তু চালের দামও আগের মতো ঊর্ধ্বমুখী।
চালের পাইকারি বাজারখ্যাত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী বাজারে প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। কেজিপ্রতি ৬০ টাকার নিচে কোনো চালই পাওয়া যাচ্ছে না। মিলাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাইকারদের। বর্তমানে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলেও জানান তারা।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত দাম হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আড়তদাররা বলছেন, মিলাররা দাম বাড়িয়ে দিলে আড়তদারদের কিছুই করার থাকে না। মূলত জানুয়ারির নির্বাচনের আগে স্থিতিশীল থাকলেও নির্বাচনের পর থেকেই চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠে।
চালের আড়তদার শামসুল হক যুগান্তরকে জানান, শুল্কহার প্রত্যাহারের পর এখনো ওই চাল এখনো বাজারে আসেনি। ফলে বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। নতুন চাল আমদানি হলে হয়তো চালের দাম কমবে।
উলটো বাড়ল ভোজ্যতেল পেঁয়াজ ও চালের দাম
সিন্ডিকেটের কারসাজি অব্যাহত : ভোগান্তির শেষ নেই ক্রেতার
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ: সয়াবিন লিটারে ২ টাকা, পেঁয়াজ কেজিতে ১৫ টাকা, চাল বস্তায় ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সরকার চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানির ওপর শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এর কোনো প্রভাব নেই। বরং কমার পরিবর্তে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে লিটারে দুই টাকার কাছাকাছি। পেঁয়াজের দামও আগের মতোই অস্থির। খুচরা বাজারে দেশি এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
কয়েকদিন আগেও যে দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল সেই পেঁয়াজ শুক্রবার ১০৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ দাম ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। পাশাপাশি বেড়েছে চালের দামও। চিনি আগের মতো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে কমেছে আলু ও শীতকালীন সবজির দাম।
সরকার কোনো পণ্যের দামে শুল্ক বাড়ালে ব্যবসায়ীরা মিনিটের মধ্যে কার্যকর করে। আর দাম কমালে দিনের পর দিনও কার্যকর হয় না। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্ধারিত দাম বাজারে কার্যকর হয়েছে কিনা, তা দেখারও যেন কেউ নেই। সাধারণ মানুষ অসহায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে। আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানির ওপর শুল্ক-কর ছাড় দিয়ে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলে আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে প্রতি কেজি অপরিশোধিত সয়াবিনে ৫ টাকা ৬৭ পয়সা কর ভার কমবে। পাম তেলে কেজিতে কর ভার কমবে ৪ টাকা ৬৬ পয়সা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা শুল্ক কমানোর বিষয়টি পাত্তা দিতে রাজি নন। মূলত বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে আমদানিকারকরা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭২ টাকা থেকে ১৭৩ টাকায়। যা নির্বাচনের আগে বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকায়। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। দাম বাড়িয়ে ৫ লিটারের বোতল নির্বাচনের আগে বাজারে ছাড়লেও নতুন দামের এক লিটারের সয়াবিন তেল নির্বাচনের পরই বাজারে এসেছে।
এদিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা বলছেন, গত বছরের নভেম্বরে ডলারের দাম বেড়ে যায়। প্রতি ডলারের মূল্য ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২২-১২৪ টাকা হয়ে যায়। ওই সময় (৯ নভেম্বর) ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের কাছে এই দাম সমন্বয়ের আবেদন করে।
অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে, আগে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার টাকা, যা আগে ছিল তিন হাজার টাকা।
প্রতি কেজি চিনিতে আমদানিকারকরা গড়ে শুল্ককর দিয়েছেন ৪০ দশমিক ৩৫ টাকা। এখন শুল্ককরে ছাড় দেওয়া হয়েছে কেজিতে ৭৫ পয়সা। তাতে নতুন করে চিনি আমদানিতে প্রতি কেজিতে আমদানিকারকদের ৩৯ টাকার বেশি কর দিতে হবে। কিন্তু চিনি বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই। প্যাকেটজাত চিনি কেজি ১৪৮ টাকা এবং খোলা চিনি কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সিদ্ধ ও আতপ চালের ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগে চাল আমদানিতে কেজিতে কর ভার ছিল ৩১ টাকা। এখন তা কেজিতে সাড়ে ২৩ টাকা কমবে। কিন্তু চালের দামও আগের মতো ঊর্ধ্বমুখী।
চালের পাইকারি বাজারখ্যাত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী বাজারে প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। কেজিপ্রতি ৬০ টাকার নিচে কোনো চালই পাওয়া যাচ্ছে না। মিলাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাইকারদের। বর্তমানে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলেও জানান তারা।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত দাম হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আড়তদাররা বলছেন, মিলাররা দাম বাড়িয়ে দিলে আড়তদারদের কিছুই করার থাকে না। মূলত জানুয়ারির নির্বাচনের আগে স্থিতিশীল থাকলেও নির্বাচনের পর থেকেই চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠে।
চালের আড়তদার শামসুল হক যুগান্তরকে জানান, শুল্কহার প্রত্যাহারের পর এখনো ওই চাল এখনো বাজারে আসেনি। ফলে বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। নতুন চাল আমদানি হলে হয়তো চালের দাম কমবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2024