Logo
Logo
×

শেষ পাতা

এমপি রিমন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন না কেন?

রাজাকার পুত্রের হাত থেকে পুরস্কার নেননি মুক্তিযোদ্ধারা

Icon

আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিজয় অথবা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অধিকার নেই বরগুনা-২ (বামনা-বেতাগী-পাথরঘাটা) আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা শওকত হাসানুর রহমান রিমনের। এসব দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি অংশও নেন না। তার বাবা খলিলুর রহমান ছিলেন বরগুনার কুখ্যাত রাজাকার। এ কারণে প্রায় ৮ বছর আগে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রিমনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার নির্দেশ জারি করে। তবে এর বিরুদ্ধে তার করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিলেও এখন সেটির আর কার্যকারিতা নেই। ফলে মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশ এখনও বহাল রয়েছে।

পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবদুল খালেক বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে রিমন বিজয় দিবসের এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। সে সময় তার হাত থেকে উপহার নিতে অস্বীকৃতি জানান মুক্তিযোদ্ধারা। এ নিয়ে গোলমাল বাধলে তাকে বাদ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই পুরস্কার দেন। এই অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিয়ষক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে এর প্রতিকার চাওয়া হয়। স্বাধীনতা অথবা বিজয় দিবসে রিমন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন না বলে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর থেকে রিমন আর পাথরঘাটা-বামনায় এসব দিবসের অনুষ্ঠানে আসেন না। ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করতে রিমন বহু চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি।

পাথরঘাটার প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা মনি মণ্ডল বলেন, ওই অনুষ্ঠানে রিমনের হাত থেকে পুরস্কার নিতে আমি প্রথম অস্বীকার করি। পরে অন্য মুক্তিযোদ্ধারা আমার সঙ্গে যোগ দেন। রিমনের বাবা কুখ্যাত রাজাকার খলিলুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার জ্যাঠা শরৎ মণ্ডলকে হত্যার নেতৃত্ব দেন। আমি নিজের চোখে তা দেখেছি।

বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, কুখ্যাত রাজাকারপুত্র এমপি হওয়ায় লজ্জায় আমাদের মাথা কাটা যায়। এই কষ্টের কথা কার কাছে বলব?

এ প্রসঙ্গে এমপি রিমন বলেন, ‘আমি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে বরগুনা-২ আসনের তৎকালীন এমপি গোলাম সবুর টুলু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ওই নির্দেশ বের করে আনেন। এটা ছিল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’ তিনি বলেন, তবে নির্দেশ জারির দুই বছরের মাথায় হাইকোর্টে রিট করি। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে কেন এই নির্দেশ বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের রুল জারি করা হয়। প্রায় ৫-৬ বছর আগে করা ওই রিটের সর্বশেষ ফলাফল জানতে চাইলে এমপি রিমন বলেন, ‘স্থগিতাদেশ জারির পর আর এই ব্যাপারে কোনো খোঁজখবর নেইনি। এরপর কী হয়েছে তাও জানি না।’

এ ব্যাপারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ বলেন, মামলার শুনানিতে রিমন অনুপস্থিত থাকলে রিটটি বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশই বহাল রয়েছে।

বামনা উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইতুল ইসলাম লিটু বলেন, এমপি গোলাম সবুর টুলুর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে রিমন এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি পাথরঘাটার উপজেলা ও রায়হানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে তার তেমন সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এমপি হওয়ার পর নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দিলেও স্বাধীনতা অথবা বিজয় দিবসের মঞ্চে রিমনকে দেখা যেত না। এবারের ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা যায়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম