Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আইনজীবী বাবা-ছেলের প্রতারণার শিকার আল-মুসলিম গ্রুপ!

এক মামলায় কারাগারে, অপর মামলায় রোববার থেকে রিমান্ড শুরু

Icon

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আইনজীবী বাবা-ছেলের প্রতারণার শিকার আল-মুসলিম গ্রুপ!

রাজধানীর ওয়ারীতে অ্যাডভোকেট সৈয়দ আজহারুল কবীর ও তার ছেলে ব্যারিস্টার ইজাজ কবীরের প্রতারণার শিকার আল-মুসলিম নামে একটি ব্যবসায়িক গ্রুপ। ইতোমধ্যে প্রতারণা ও নাশকতার মামলায় এই দুজনসহ ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বাবা-ছেলেকে ৭ ডিসেম্বর গ্রেফতারের পর ৮ ডিসেম্বর আদালতে হাজির করা হয়। 

গত ১৪ ডিসেম্বর আল-মুসলিম গ্রুপের মামলায় দুদিন এবং নাশকতায় (প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা) চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আল-মুসলিম গ্রুপের মামলায় রিমান্ড শেষে শুক্রবার বাব-ছেলেকে আদালতে হাজির করা হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

অন্যদিকে নাশকতার মামলায় রোববার তাদের ডিবি কার্যালয়ে এনে রিমান্ড কার্যকর শুরু করা হবে। ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

অ্যাডভোকেট সৈয়দ আজহারুল কবীরের ছেলে ইজাজ কবীর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন লিগ্যাল এইড কমিটির যুগ্ম সম্পাদক।

আজহারুল কবীর ও তার ছেলে ব্যারিস্টার ইজাজ কবীরের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, প্রতারণার বিষয়টি তাদের (পরিবারের সদস্যদের) জানা নেই। তবে কোনো নাশকতার সঙ্গে সৈয়দ আজহারুল কবীর ও তার ছেলে ব্যারিস্টার ইজাজ কবীর জড়িত নয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের নাশকতার মামলায় জড়ানো হয়েছে। এমনকি হয়রানিমূলকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের মামলাও দেওয়া হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আশরাফুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, প্রতারণার মামলায় আজহারুল কবীর ও তার ছেলে ইজাজ কবীরকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া যায়। তদন্তে আরও জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ চলাকালে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে যে হামলা হয়েছিল সেখানেও তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ কারণে ওই মামলায়ও তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা যাবে। 

আল-মুসলিম গ্রুপের পরিচালক ফিরোজ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ২০১১ সালে ওয়ারী থানাধীন ১ নম্বর নবাব স্ট্রিটে ৯২ শতাংশ জমি কেনার জন্য আজহারুল কবীরের সঙ্গে এক বছর মেয়াদি চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী পে-অর্ডারের মাধ্যমে ১০ কোটি এবং নগদ পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু চুক্তি শর্ত অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে জমির কাগজপত্র বুঝিয়ে দিতে পারেননি আজহারুল। পরে চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। এই সময়ে যেসব কাগজপত্র দেওয়া হয়, সবই ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। প্রকৃত অর্থে ৯২ শতাংশ জমির মধ্যে মাত্র নয় শতাংশ জমির মালিক আজহারুল। পরে ২০১৬ সালে জমির প্রকৃত মালিকদের কাছ থেকে ৬৬ শতাংশ জমি কেনে আল-মুসলিম গ্রুপ। 

অন্যদিকে আজহারুলের নামে থাকা নয় শতাংশ জমিসহ বাকি জমি এখনো বুঝিয়ে দেয়নি আজহারুল। অন্যদিকে ১২ বছর ধরে ১৫ কোটি টাকা আটকিয়ে রেখে আজহারুল ও ইজাজ প্রতারণা করছে মুসলিম গ্রুপের সঙ্গে। মুসলিম গ্রুপ সেখানে ইতোমধ্যে ৩৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জানান।

আল-মুসলিম গ্রুপের অপর পরিচালক এসএম আমজাদ হোসাইন বলেন, আমরা জমি কেনার আগে অনেক যাচাই করেছি। তারপরও প্রতারণার শিকার হয়েছি। তারা সামজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও কিছু গণমাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। এছাড়া এ বিষয়ে আদালতে মামলা প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে আজহারুল কবীরকে গ্রেফতারের সময় ফেসবুকে লাইভে এসে তার স্ত্রী ও মেয়েরা লাইভে এসে মুসলিম গ্রুপ এবং পুলিশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে সাইবার আইনে পৃথক মামলা হয়েছে।

প্রতারণা বিষয়ে জানতে চাইলে আজহারুল কবীরের মেয়ে রুমানা রিফাত বলেন, আমাদের বাসার পাশে দুই বিঘা জমি রয়েছে। ওই জায়গায় মার্কেট নির্মাণের কাজ চলছে। এই দুই বিঘা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আল-মুসলিম বিল্ডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিরোধ চলছে। এই বিরোধের জের ধরে তার বাবা, ভাই ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

গ্রেফতারকৃত ইজাজ কবীরের স্ত্রী কারশিমা জাহান যুগান্তরকে বলেন, জমিসংক্রান্ত চুক্তির বিষয়টি আমার জানা নেই। কারণ চুক্তি করছে আমার শ্বশুর। তবে এটুকু বলতে পারি, নাশকতা এবং ছিনতাইয়ের যে মামলার সঙ্গে ইজাজ এবং তার বাবাকে জড়ানো হয়েছে তা অন্যায়। এর সঙ্গে গ্রেফতারকৃতদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

আজহারুল কবীরের পরিবারের সদস্যরা জানায়, জমি দখলের জন্য পরিকল্পিতভাবে বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের পর কর্মচারী ও রাজমিস্ত্রিদের গ্রেফতার করে রাতের আঁধারে পুলিশের সহায়তায় জমি দখল করা হয়েছে। বাবা-ছেলে যেন জামিন না পান, সেজন্য নাশকতার মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম