Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আন্তর্জাতিক ৬ সংগঠনের বিবৃতি

বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান

বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের ৬টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। এর পাশাপাশি তারা ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং নাগরিক সমাজের স্থান সংকুচিত হয়ে আসায় গভীর উদ্বেগও জানিয়েছে। 

মঙ্গলবার রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ: আর্জেন্ট কল টু সেফগার্ড হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি অ্যাহেড অব জানুয়ারি ইলেকশন্স’ শীর্ষক যৌথ বিবৃতি দেওয়া সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস (আরএফকেএইচআর), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট (সিপিজেপি), দি ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চার কনসোর্টিয়াম (ইউএটিসি), এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ান্সেস (এএফএডি), অ্যান্টি-ডেথ পেনালটি এশিয়া নেটওয়ার্ক (এডিপিএএন) এবং ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সেস (আইসিএইডি)। 

ছয় সংগঠন বিবৃতিতে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে চারটি সুপারিশ তুলে ধরেছে। এসব সুপারিশে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সুপারিশগুলো হলো: 

১.প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা, নিজের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত সততাকে সম্মান করা, সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। 

২. অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে সব রাজনৈতিক, উদ্দেশ্যমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। খেয়ালখুশিমতো আটক অধিকারকর্মী এবং বিরোধীদলীয় সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে। সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। 

৩. ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্ণাঙ্গ এবং পক্ষপাতহীন তদন্ত করতে হবে। এর মধ্যে মৃত্যু এবং নির্যাতনের অভিযোগগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

৪. আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডোটা সুরক্ষা আইনের খসড়া পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও অধিকারকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, উপরন্তু আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে মনিটরিং করতে এবং মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত রাখায় ব্যবস্থা নিতে। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগামী বছর ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং নাগরিক সমাজের জন্য স্থান সংকুচিত হওয়ায় আমরা বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। 

রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর অক্টোবরের শেষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীকে দমন করতে সহিংসতা ফিরিয়ে এনেছে। এই দমনপীড়নে একজন সাংবাদিকসহ ১৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বিরোধী দলের ৮২৪৯ জন নেতা আহত হয়েছেন। 

এছাড়াও হবিগঞ্জের শায়েস্তানগর এলাকায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে আয়োজিত মানববন্ধনের সময় পুলিশ, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। এসব সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জরুরি ভিত্তিতে জবাবদিহিতা, একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো করেছে। 

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বৈষম্যমূলক আচরণ এবং অতিমাত্রায় কাঁদানে গ্যাস, লাঠি, লাঠিপেটা, রাবার বুলেট ব্যবহার সহিংসতা বৃদ্ধির উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অক্টোবরের শেষের দিক থেকে সরকার গণহারে এবং খেয়ালখুশিমতো কমপক্ষে ২০ হাজার ব্যক্তিকে আটক করেছে। এরা বিরোধী দলের বা বিরোধী দলের সমর্থক হিসাবে মনে করা হয়। 
৮৩৪টি বানোয়াট মামলার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। যৌক্তিক প্রেক্ষাপট থাকা সত্ত্বেও অব্যাহতভাবে এসব ব্যক্তির জামিন অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। এদের বিচারের ক্ষেত্রেও যথাযথ প্রক্রিয়ার নিশ্চয়তাও বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন এবং অন্যদের কাছ থেকে আলাদা রাখার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, গণহারে বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অভিযুক্ত করতে সরকার পর্যায়ক্রমে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা বিরোধী দলের শক্তিধর প্রার্থীদের অযোগ্য করতে রাতেও আদালতে বিচার পরিচালনা করছে। এটা কয়েক মাস আগের পরিকল্পনারই অংশ।

অতিমাত্রায় সহিংসতার ব্যবহার এবং খেয়ালখুশিমতো আটক বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়ে তোলে। জনগণ যখন আগামী মাসে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করছে, তখন এসব নির্যাতন করা হচ্ছে। 

গণতন্ত্রের মৌলিক মূলনীতিকে সমুন্নত করার পরিবর্তে বাংলাদেশ সরকার সহিংস ও দমনপীড়নের মতো পদক্ষেপ ব্যবহার করছে। এতে ভয়, উদ্বেগ এবং নাগরিকদের জন্য চরম অনিরাপদ এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এই সহিংস দমনপীড়নের বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ডেটা সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারীদেরকে নাগরিকের ডেটায় বাধাহীন প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষমতার অপব্যবহারে ব্যাপক বিস্তৃত নজরদারি সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে মানবাধিকার, বিশেষ করে ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্যের বিষয়ে হুমকি হয়ে উঠতে পারে। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ একটি সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ সমাজের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। তাই আমরাও বাংলাদেশের মানুষের পাশে আছি। অবিলম্বে সহিংসতা, নিপীড়ন, রাজনৈতিক বিরোধীদের টার্গেট করে ভীতি প্রদর্শন বন্ধ রাখার জন্য আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে আহ্বান জানাই।

বাংলাদেশকে শ্রম অধিকার লঙ্ঘন বন্ধের আহ্বান অ্যামনেস্টির : বাংলাদেশকে অবশ্যই শ্রম অধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে করপোরেট জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মঙ্গলবার রাতে সংগঠনটি তাদের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের ওয়েবসাইটের এক এক্স (টুইট) বার্তায় এ কথা জানান। 

বার্তায় স্বল্প মজুরি, বিক্ষোভ দমন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানিকে শ্রমিকদের মারাত্মক হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে সংগঠনটি। 

এ অবস্থায় শ্রমিকদের সংগঠন, সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি। পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য যে আইন রয়েছে তা যেন পরিবর্তন করা হয়, যাতে করে তারা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলে সঠিক সময়ে তাদের পরিবার-পরিজন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পান।
 

 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম