Logo
Logo
×

শেষ পাতা

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও উদ্যোগ নেই

বীরদর্পে মুনাফা লুটছে সেই সিন্ডিকেট

Icon

ইয়াসিন রহমান

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বীরদর্পে মুনাফা লুটছে সেই সিন্ডিকেট

যারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটছে তাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি শুক্রবার এই নির্দেশ দিলেও শনিবার পর্যন্ত অসাধুদের ধরার কোনো উদ্যোগ নেই। বরং বাজার তদারকিতে ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে।

ফলে ভারত থেকে আমদানিকৃত আলু বন্দরে কেজি ৩৩ টাকা বিক্রি হলেও ঢাকার খুচরা বাজারে দাম ৬০-৬৫ টাকা। পাশাপাশি পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না নেওয়ায় খুচরায় পণ্যটি কিনতে ক্রেতার ১২০-১৪০ টাকা ব্যয় হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন-পণ্য নিয়ে যারা কারসাজি করেছে তারা চিহ্নিত। কিন্তু তাদের কঠোর শাস্তি না হওয়ায় তারা ‘বীরদর্পে’ ক্রেতার পকেট মেরে বাড়তি মুনাফা লুটছে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, নতুন করে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনার কোনো নির্দেশ আসেনি। তাই প্রতিদিন অধিদপ্তর থেকে বাজার তদারকির যে নির্দেশনা আছে সেটাই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ সময় কোনো অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

এদিকে চলতি বছরের জুন থেকে অস্থির আলুর বাজার। সে সময় প্রতি কেজি আলু খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। পরে তদারকি সংস্থার অভিযানে কেজি ৩৫ টাকায় নেমে আসে। আর তদারকি শিথিল করা হলে আগস্টের শেষে ফের বাড়তে থাকে দাম। সে সময় কেজি ৪০ টাকা বিক্রি হলেও সেপ্টেম্বরে ৪৫ টাকায় স্থিতিশীল থাকে।

১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু বাজারে এই দাম কার্যকর হয়নি। এরপর অক্টোবরের শেষ দিকে প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকা বিক্রি হয়। কিছু কিছু স্থানে ৭০ টাকাও বিক্রি করতে দেখা গেছে। ৩০ অক্টোবর আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই আলু দেশে আসতে শুরুও করেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যমতে, ভারত থেকে আমদানি করা ১৮৪ টন আলু দেশে প্রবেশ করেছে। আমদানিকারকরা সেই আলু বন্দরে প্রতি কেজি ৩৩ টাকা বিক্রি করেছে। ফলে পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে পাঁচ টাকা কমলেও শনিবার খুচরা বাজারে এখনও ৬০-৬৫ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এছাড়া দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম সহনীয় রাখতে রপ্তানিতে প্রতি টন ৮০০ ডলার মূল্য বেঁধে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তবে আমদানি মূল্য ঘোষণার পরপরই দেশে কারসাজি করে বাড়ানো হয় দাম।

বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ১০০ টাকা ছিল। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। যা আগে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময় অসাধুরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ায়। অস্থির করা হয় বাজার। ক্রেতাদের নাজেহাল করে জিম্মি করা হয়। তাদের পকেট কেটে হাতিয়ে নেয় হাজার হাজার কোটি টাকা।

তিনি বলেন, বাজারে তদারকি করতে সরকারের একাধিক সংস্থা আছে। তারা একাধিক সময় অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করেছে। এছাড়া আলু ও পেঁয়াজের দাম কারা বাড়িয়েছে সংস্থার কাছে তথ্যও আছে। কিন্তু তাদের কঠোর শাস্তি হচ্ছে না। এতে সরকার ও ভোক্তা উভয় বেকায়দায় পড়ছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী মো. রবিউল যুগান্তরকে বলেন, জুন থেকে আলু নিয়ে কারসাজি করছে হিমাগার মালিকরা। তারা হিমাগার পর্যায় থেকে ২৬-২৭ টাকায় বিক্রি করতে পারত। সেটাই উচিত ছিল। কিন্তু কোল্ড স্টোরে প্রতি কেজি আলু ৩৪-৩৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এটা ২৭ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। আর বিভিন্ন হাত ঘুরে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৬ টাকা বেশি হওয়ার কথা না। কারা দাম বাড়াচ্ছে তা সরকারও জানে। ব্যবস্থা নিলে মূল্য কমে আসবে।

তিনি জানান, ভারত থেকে আমদানি হওয়ায় পাইকারিতে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা কমেছে। কিন্তু খুচরায় এখনও যা ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি আড়ত শ্যাম বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র দাস যুগান্তরকে বলেন, ভারত টনপ্রতি ৮০০ ডলার নির্ধারণ করার সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করেছে। যে কারণে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। বন্দর পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করলে দাম এত বাড়ত না।

আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন অনিয়মে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়। সঙ্গে মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান আলুর হিমাগার পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি অনিয়ম পান। পরে সরকার নির্ধারতি দামে বিক্রির নির্দেশ দেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা মানে না। ফলে এক প্রকার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে মহাপরিচালক আলু আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপরিশ করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম