চালু হচ্ছে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প
দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর আরও চার উপহার

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। তাই তফশিলের আগেই একের পর এক মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করছে আওয়ামী লীগ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার চট্টগ্রামের কর্ণফুলী তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু টানেলসহ চট্টগ্রামের ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চট্টগ্রাম যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৪ নভেম্বর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন তিনি। ১১ নভেম্বর খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পসহ একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করতে খুলনা যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২ নভেম্বর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের। এসব মেগা প্রকল্পের সঙ্গে আরও বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব প্রকল্প উদ্বোধনের পাশাপাশি সেখানে জনসভা ও সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। এসব উন্নয়ন প্রকল্পকে দেশবাসীর জন্য উপহার হিসাবে উল্লেখ করে উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও তার দল আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাবেন তিনি।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে দশ মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। পরে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসাবে এগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম প্রকল্প পদ্মা সেতু। অন্যগুলোর মধ্যে ছিল-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।
এছাড়া আরও বেশ কিছু বড় প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এর মধ্যে ছিল-খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প, কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় এসব বড় প্রকল্পের কাজ নির্বিঘ্নে চালিয়ে নিতে পেরেছে সরকার। মাঝে করোনা মহামারির আঘাত এলেও মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান রাখা হয়েছিল। ফলে এরই মধ্যে অনেকগুলো বড় প্রকল্পের কাজ শেষে উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে অতিসম্প্রতি উদ্বোধন করেছেন-ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল ও পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প।
বঙ্গবন্ধু টানেল : আজ শনিবার চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও সেতু কর্তৃপক্ষের পদস্থ কর্মকর্তারা টানেল পরিদর্শন করেন। চট্টগ্রাম ও ঢাকার সাংবাদিকদের প্রথমবারের মতো টানেলের অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এদিকে টানেল উদ্বোধনের পর আনোয়ারার কেইপিজেড মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরসূচিতে উদ্বোধনী তালিকায় বঙ্গবন্ধু টানেল ছাড়াও আরও রয়েছে-চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স, জেলা পরিষদ টাওয়ার, রাঙ্গুনিয়া ও আনোয়ারা জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পটিয়ায় শেখ কামাল অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, রাউজানে শেখ কামাল কমপ্লেক্স, আগ্রাবাদে সিজিএস কলোনিতে নয়টি বহুতল আবাসিক ভবন, বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ও শিকলবাহা খালের ওপর পিসি গার্ডার ব্রিজ।
মেট্রোরেল আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ : গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চলাচলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে চালু হয়েছে এই অংশের সব স্টেশন। ওই অংশে সকাল থেকে রাত অবধি মেট্রোরেল চলাচলও করছে। মেট্রোরেলে দ্বিতীয় অংশের কাজ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ আগামী ৪ নভেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে গত ২০ আগস্ট সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২০ অক্টোবর মেট্রোরেলের মতিঝিল অংশ উদ্বোধনের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। পরে সেই তারিখ পিছিয়ে ২৯ অক্টোবর নির্ধারিত হয়েছিল। তবে সেটাও পিছিয়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে মেট্রোরেলে দ্বিতীয় অংশের উদ্বোধন ঘিরেও রাজধানীতে বড় সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। যদিও এখনো পর্যন্ত স্থান নির্ধারণ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলে আলোচনা করে এই সমাবেশের প্রস্তুতি শুরু করবে আওয়ামী লীগ।
খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প : এদিকে জাতীয় নির্বাচনের তফশিলে আগেই খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৯ নভেম্বর এই কর্মসূচি উদ্বোধনের কথা ছিল। সেদিন কর্মসূচি উদ্বোধনের পাশাপাশি খুলনায় দলীয় এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর উপলক্ষ্যে এরই মধ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন উপকমিটি। তবে এই কর্মসূচি আবার পেছাচ্ছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ বলছে-খুলনায় তাদের জনসভা হবে ১১ নভেম্বর। সে হিসাবে খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের উদ্বোধনও সেদিনই হবে বলে জানা গেছে। এদিন খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প ছাড়াও বেশ কটি প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন : দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারে রেল সংযোগ। অবশেষে কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ এবার বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যেই দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে। এই নতুন রুটে আগামী ২ নভেম্বর পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল রান) ট্রেন চালানো হবে। এ লক্ষ্যে ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই একটি নতুন ইঞ্জিন ও ৬টি কোচের সমন্বয়ে একটি রেক রেডি করে দোহাজারী রেলস্টেশনে প্রস্তুত রাখার জন্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর এ রেললাইনের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে পর্যটকরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার দেখতে যেতে পারবেন ট্রেনে চড়ে।
আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন : নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এই প্রকল্পের অংশ হিসাবে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৫০টি, ১৬ মার্চ তৃতীয় ধাপে ৫০ এবং ১৭ এপ্রিল চতুর্থ ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বাকি মসজিদগুলোর নির্মাণকাজও শেষের দিকে। আগামী ৩০ অক্টোবর রাজধানীর পূর্বাচলে জাতীয় ইমাম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে ষষ্ঠ পর্যায়ের আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনও করবেন।