Logo
Logo
×

শেষ পাতা

নিউক্লিয়ার ফুয়েল আমদানির জটিলতা

অর্থ বিভাগের গ্যারান্টি ৪৩৪৬ কোটি টাকা

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র: পারমাণবিক জ্বালানি দুর্ঘটনার দায় নেবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অর্থ বিভাগের গ্যারান্টি ৪৩৪৬ কোটি টাকা

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক জ্বালানি আমদানির জটিলতা কাটাতে ৩শ মিলিয়ন এসডিআর (দেশীয় মুদ্রায় ৪৩৪৬ কোটি টাকার) ক্ষতিপূরণজনিত গ্যারান্টি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। ক্ষতিপূরণের অঙ্কটি আন্তর্জাতিক আইনে নির্ধারিত। এ জ্বালানি বহনকালে বা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পারমাণবিকজনিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ বিভাগ এ গ্যারান্টি দিয়েছে। অপরদিকে প্রকল্পের রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জেএসসি এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট’ এ ক্ষেত্রে কোনো আর্থিক দায় নিচ্ছে না। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ সংক্রান্ত এক নথিতে সই করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে ১২০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চলমান আছে। এটি দেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ কেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি আগামী অক্টোবরে দেশে আসছে। নিউক্লিয়ার ফুয়েল রাশান ফেডারেশন থেকে বিশেষ কার্গো বিমানে করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিবহণ করা হবে। বিমানবন্দর থেকে এ জ্বালানি সড়কপথে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে পর্যন্ত রাশান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসসি এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট কর্তৃক পরিবহণ করা হবে। এর তত্ত্বাবধানে থাকবে দেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অংশগ্রহণে গঠিত কনভয়ে।

নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি বহনকালে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতির বিপরীতে বিমা করতে হয়। কিন্তু রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিউক্লিয়ার ফুয়েল বহনকালে দুর্ঘটনার বিপরীতে ক্ষতিপূরণের জন্য কোনো বিমা করা হয়নি।

সূত্র আরও জানায়, নিউক্লিয়ার ফুয়েল আমদানির জন্য সাইড রেডিনেস নিশ্চিত করতে অনসাইট পরিদর্শন শুরু হবে। ফলে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্ষতিপূরণ বাবদ আর্থিক নিশ্চয়তা পাওয়া না গেলে পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কারণ ‘সিভিল লাইবেলিটি ফর ডেমেজ’-এর নীতি অনুযায়ী এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি বহনকালে বা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে পারমাণবিকজনিত দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণের বিপরীতে বিমা পলিসি বা আর্থিক নিশ্চয়তা থাকতে হয়। নিয়মমতে নিশ্চয়তাপত্র ছাড়া নিউক্লিয়ার ফুয়েল আমদানি পারমিট ইস্যু করা হয় না। আর আর্থিক নিশ্চয়তাপত্র ছাড়া এ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে রাশান উপঠিকাদার ব্রারুস প্রজেক্ট লজিস্টিকের অনুকূলে বাপশিক কর্তৃক ইস্যুকৃত ক্লাস ডি লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। অবশ্য এসব বিষয় তুলে ধরে অনেক আগেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে অবহিত করেছিল।

এদিকে বাংলাদেশকে এই ক্ষতিপূরণে নিশ্চয়তা দিতে হচ্ছে। কারণ সংশ্লিষ্ট আইনে তা বলা আছে। বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এনার্জি রেগুলেটরি (বিইএআর) অ্যাক্ট-২০১২ এর ৪৩ ধারা অনুযায়ী পারমাণবিক স্থাপনায় যে কোনো ধরনের পারমাণবিক ঘটনাজনিত ক্ষতির জন্য অপারেটর (দেশি/বিদেশি) দায়বদ্ধ। অপরদিকে দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে একটি সাধারণ চুক্তি হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় পরিবহণ, হ্যান্ডলিং বা স্টোরেজের সময় ঘটনা এবং যে কোনো দূষিত উপকরণ বা এনপিপি সরঞ্জামের যে কোনো অংশ, ক্ষতির জন্য অপারেটর দেশ দায়ী থাকবেন। পারমাণবিক সরঞ্জাম, ইনস্টলেশন এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি যা রাশিয়ান ফেডারেশন থেকে চুক্তির অধীনে আমদানি করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি অর্থ বিভাগ স্বল্প মেয়াদে ৬ মাসের জন্য এই আর্থিক গ্যারান্টি দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশে পৌঁছবে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক জ্বালানি তেল। এই সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ ৩০০ মিলিয়ন এসডিআরের বিনিময় হার অনুযায়ী ৪৩৪৬ কোটি টাকার মূল্যমানের বিমা করার মতো সামর্থ্য বাংলাদেশি কোনো ইন্স্যুরেন্স কোম্পনির নেই। এছাড়া আন্তর্জাতিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো এই অল্প সময়ের মধ্যে বিমা করতে পারবে কিনা, পারলে বিমাসংক্রান্ত ব্যয়ের অঙ্ক, উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্যের ওপর প্রভাব জানতে চাওয়া হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে। সেটিও তারা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।

সেখানে আরও বলা হয়, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি যতদিন চালু থাকবে ততদিন আর্থিক নিশ্চয়তা বা বিমা পলিসি চলমান থাকতে হবে। ফলে এত দীর্ঘ সময়ের জন্য সরকারের পক্ষে উচ্চমূল্যে আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে অর্থ বিভাগ গ্যারান্টি প্রদান করে থাকে। কোনো সম্ভাব্য দুর্ঘটনার বিপরীতে সরকারের পক্ষে অর্থ বিভাগ কখনোই আর্থিক নিশ্চয়তা দেয় না। সব দিক বিবেচনা করে অর্থ বিভাগ ছয় মাসের জন্য ক্ষতিপূরণের বিপরীতে গ্যারান্টি দিয়েছে।

এদিকে বিমা সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ডা. অশোক কুমার পাল সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ৩০০ মিলিয়ন এসডিআর মূল্যের বিমা পলিসি প্রিমিয়ার হার এবং অন্যান্য শর্ত নিয়ে বিমা করপোরেশন আলোচনা করেছে লন্ডনভিত্তিক টাইসার গ্রুপ সার্ভিস লিমিটেড এবং মস্কোভিত্তিক এটোম ইন্স্যুরেন্স ব্রোকারের সঙ্গে। কিন্তু উভয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিমার প্রিমিয়ার হার নির্ধারণ একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম