Logo
Logo
×

শেষ পাতা

নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি

প্রতি ইউনিটের মূল্য চূড়ান্তের নির্দেশ

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতি ইউনিটের মূল্য চূড়ান্তের নির্দেশ

নেপাল থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের সম্ভাব্য ব্যয় ৬ থেকে ৭ টাকা। চূড়ান্ত মূল্য কিছুটা কমবেশি হতে পারে। এর একটি অংশ পাবে নেপাল, কিছুটা ব্যয় হবে চার্জসহ অন্যান্য খাতে। তবে চূড়ান্ত হয়নি এখনো। আমদানিকৃত বিদ্যুতের প্রতি মেগাওয়াটের মূল্য এবং বছরে এ খাতে ব্যয় চূড়ান্তভাবে নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছে ‘বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন ও আমদানি’সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ওই কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব দ্রুত অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে গত মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। সে অনুযায়ী নেপালের ত্রিশুলি প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট এবং অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। চুক্তির মেয়াদ ৫ বছরের জন্য। তবে নেপালের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ আমদানির বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছে এ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে জয়েন্টভেঞ্চার প্রকল্প, উৎপাদন খাতে আঞ্চলিক বিনিয়োগ, প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিষয়ে গৃহীত কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ কমিটির প্রধান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রোববার এ কমিটির বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর অথনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বিদ্যুৎ সচিব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, অর্থমন্ত্রী নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ট্যারিফ জানতে চান। এ সময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে কয়লাভিত্তিক উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়ে নেপাল থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুতের মূল্য কম পড়বে। তবে সম্ভাব্য একটি ট্যারিফ উল্লেখ করে বৈঠকে জানানো হয়, প্রতি ইউনিটের দাম ৬ থেকে ৭ টাকার মধ্যে থাকতে পারে। এ সময় অর্থমন্ত্রী আমদানিকৃত বিদ্যুতের ট্যারিফ এবং আমদানি খাতে ব্যয় চূড়ান্ত করে প্রস্তাব আকারে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলেন। ওই বৈঠকে শীতকালে বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ নিতে নেপালের আগ্রহের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। সেটিও আলোচনা হয়। শীত মৌসুমে নেপালে বরফ পড়ে। ওই সময় নেপালে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। একই সময়ে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। ফলে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ওই সময় রপ্তানি নিয়েও আলোচনা চলছে নেপালের সঙ্গে তা তুলে ধরা হয়।

সূত্র জানায়, ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে। এ বিষয়ে ভারত সরকারের সম্মতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। ওই চিঠির জবাবে সম্মতি দিয়েছে ভারত সেটিও বলা হয়। পাশাপাশি গত জুন মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ভারত সফরকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুসারে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসবে ভারতের সঞ্চালন লাইন দিয়ে। এটি ভারতের বহরমপুর সঞ্চালন লাইন দিয়ে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে প্রবেশ করবে সেটিও তুলে ধরা হয়েছে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য উভয় দেশের সঙ্গে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। আমরা এ বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এখন বিদ্যুৎ বিভাগ একটি প্রস্তাব তৈরি করবে। সেখানে নেপাল থেকে বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য, ভারতীয় জাতীয় গ্রিড ব্যবহারের চার্জ, আমদানি শুল্কসহ প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মূল্য নির্ধারণ করে এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপর কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ শেষে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনা হবে।

এদিকে সম্প্রতি ‘অনলাইন কাঠমুান্ড পোস্ট’ বলেছে, নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি বিলম্ব হচ্ছে। কারণ দেশটি ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে শুল্ক নির্ধারণ প্রসঙ্গটি এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি। তবে শুষ্ক মৌসুমে ভারতের সঞ্চালনবিষয়ক অবকাঠামোর মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করতে চায় নেপাল।

বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড নেপালের ইলেকট্রিসিটি অথরিটি ও ভারতের বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের সঙ্গে গত মে মাসে বিদ্যুতের মূল্য ও ট্রান্সমিশন ফি নিয়ে এ বিষয়ে সমঝোতাও হয়েছে। ট্রান্সমিশন চার্জ ও সার্ভিস ফি পরিশোধ করতে হবে ভারত কর্তৃপক্ষকে। ভারতের বিদ্যুৎবিষয়ক কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ক্রেতাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ চার্জ নিচ্ছে তার সমপরিমাণ হবে ট্রান্সমিশন চার্জ। এটা ধার্য করা হবে ভারতের উন্মুক্ত নিয়ম অনুযায়ী।

কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, ভারতের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে এ বিদ্যুৎ আসায় ট্রান্সমিশন চার্জ ও সার্ভিস ফি দিতে হবে দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এনটিপিসিকে (ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়া কোম্পানি)। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, ইউনিটপ্রতি ট্রান্সমিশন চার্জ ৪০-৪৫ পয়সা (ভারতীয় রুপি) হতে পারে। এছাড়া ৪ থেকে ৭ পয়সা পরিষেবা চার্জ যুক্ত হতে পারে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম