ক্রেতার ভোগান্তি
বাজারে মসলার অগ্নিমূল্যে রান্নায় বাড়তি ঝাঁজ
ইয়াসিন রহমান
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজিতে মসলা পণ্যের বাড়তি দাম বাজারে যেন আগুন ছড়িয়েছে। সরবরাহ ঠিক থাকলেও আমদানির তুলনায় খুচরা পর্যায়ে দামের ব্যবধান বাড়ানো হচ্ছে।
পরিস্থিতি এমন-এক কেজি আদা ১২৯-১৩০ টাকায় আমদানি করলেও খুচরা বাজারে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিপ্রতি ৩৩২-৩৩৫ টাকায় জিরা আমদানি করলেও ক্রেতা সাধারণের কিনতে হচ্ছে ১২০০ টাকায়। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করায় অসাধুদের কারসাজিতে খুচরা বাজারে ফের পণ্যটির দাম সেঞ্চুরিতে গিয়ে ঠেকেছে।
তবে বৃহস্পতিবার দাম কিছুটা কমেছে। এছাড়া বছরের ব্যবধানে এলাচ, লবঙ্গ, ধনে, তেজপাতা ও রসুন-হলুদসহ সব ধরনের মসলার দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। তবে এতকিছুর পরও নিশ্চুপ বাজার তদারকি সংস্থা। এতে পণ্য কিনতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন ভোক্তা।
এদিকে মসলার বাজারে অস্থিরতা কমাতে ২৮ মে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করেন। সভায় জানানো হয়, প্রতি কেজি আদার আমদানি মূল্য ১২৯-১৩০ টাকা। কিন্তু রাজধানীর সর্ববৃহৎ আড়ত শ্যামবাজারে ২৬০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়।
আদার দাম বাড়াচ্ছেন আড়তদাররা। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজেই অসাধুদের চিহ্নিত করেন। কিন্তু ওই সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি একই সভায় জিরার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি কেজি জিরা আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৩৩২-৩৩৫ টাকা।
কিন্তু বাজারে তিন থেকে চারগুণ বেশি দাম। ওই সভায় কারসাজির তথ্য জানলেও এবং দোষীদের চিহ্নিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দায় সারেন।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বেশকিছু কারণেই মসলা পণ্যের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি ও জ্বালানি তেলের দামের কারণে বাড়তি পরিবহণ খরচ মূল্য বৃদ্ধির একটি কারণ। তবে দেশে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বড়িয়ে অতি মুনাফা করতে চায়।
অন্যান্য পণ্যের মতো মসলার বাজারে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কুরবানির ঈদের পর থেকেই ধাপে ধাপে মসলাজাতীয় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, এবার মূল্য বাড়িয়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যা অন্য বছরের তুলনায় রেকর্ড ভেঙেছে। তবে যারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন, তারাও নিশ্চুপ। তাদের কাছে তথ্য থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তাই অসাধুরা আরও বেশি সুযোগ পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে বথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ৮০ টাকা ছিল। আর গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়, যা সপ্তাহ আগে ছিল ৫৫-৬০ টাকা। আর গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা।
প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা। যা গত বছর একই সময় ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকা, যা গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ৩৮০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা, যা আগে ২৬০ টাকা ছিল।
দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা, যা আগে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ১১৮০-১২০০ টাকা। যা গত বছর একই সময় দাম ছিল ৫০০ টাকা। লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা কেজি, যা আগে ১৪০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ধনে বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা। যা আগে বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা।
রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. শাকিল বলেন, নিত্যপণ্যের অসহনীয় দামে এক প্রকার নাজেহাল হতে হচ্ছে। এর মধ্যে মসলা পণ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। আদা কিনতে হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি। জিরার দামতো হাজার ছাড়িয়েছে। এতে আমাদের মতো ক্রেতার হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে বাজারে কোনো ধরনের মসলা পণ্যের সংকট নেই। বিক্রেতারা বাড়তি দরে বিক্রি করছেন।
একই বাজারে খুচরা বিক্রেতা তুহিন বলেন, পাইকারি বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছে। সরকারের তদারকি সংস্থা জানে কে বা কারা পণ্যের দাম বাড়ায়। কিন্তু তাদের শাস্তি হয় না। শাস্তি হয় আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদের।
পাইকারি ও আমদানিকারকরা জানান, পণ্য আমদানির পর পোর্টে মালামাল আটকে যাচ্ছে। এজন্য সেখানে ভাড়া দিতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যে টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে, তা পণ্যের সঙ্গে যোগ হচ্ছে। কারণ, কোনো ব্যবসায়ী লস দিয়ে বিক্রি করবেন না। তাই পণ্যের আমদানি মূল্যের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের মিল থাকছে না।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন আগেই মসলাজাতীয় পণ্যের দাম কমাতে অধিদপ্তরে সভা হয়েছে। সেদিন থেকেই মহাপরিচালকের নির্দেশে পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তদারকি চলমান আছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।