Logo
Logo
×

শেষ পাতা

টম ল্যান্টস কমিশনের শুনানি

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আরও কাজ করতে হবে

ভিসা নিষেধাজ্ঞা উপযুক্ত পদক্ষেপ, এটার প্রয়োগ উভয় দলের ক্ষেত্রে সমানভাবে হতে হবে

Icon

মাসুদ করিম

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আরও কাজ করতে হবে

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পরিবেশের কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে এজন্য আরও অনেক কাজ করতে হবে। ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিসের ভিজিটিং এক্সপার্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের এশিয়া প্যাসিফিক ডিভিশনের সিনিয়র অ্যাডভাইজার জিয়োফ্রে ম্যাকডোনাল্ড এই মন্তব্য করেছেন। মঙ্গলবার টম ল্যান্টস হিউম্যান রাইটস কমিশনের শুনানিতে অংশ নিয়ে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ২০০৮ সালে সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিদলীয় ‘টম ল্যান্টস হিউম্যান রাইটস কমিশন’ গঠিত হয়। হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সব সদস্যের জন্য এই কমিশনের সদস্যপদ উন্মুক্ত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে এই কমিশন কংগ্রেসের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সঙ্গে কাজ করে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার জুমের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

শুনানির আয়োজক টম ল্যান্টস হিউম্যান রাইটস কমিশনের কো-চেয়ার কংগ্রেস সদস্য জেমস পি. ম্যাকগভার্ন এবং কংগ্রেস সদস্য ক্রিস্টোফার এইচ স্মিথ। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিসের ভিজিটিং এক্সপার্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের এশিয়া-প্যাসিফিক ডিভিশনের সিনিয়র অ্যাডভাইজার জিয়োফ্রে ম্যাকডোনাল্ড, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র এশিয়া রিসার্চার জুলিয়া বেকনার, ডোনাল্ড এম অ্যান্ড সুসান এন উলসন ফেলো ক্রিস্টি ইউয়েদা, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান।

শুনানির মডারেটর ছিলেন কংগ্রেসের ল লাইব্রেরির ফরেন ল স্পেশালিস্ট তারেক আহমেদ।

শুনানির ঘোষণায় বলা হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অংশীদার এবং দেশটি প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। দেশটিতে সংসদীয় গণতন্ত্র থাকলেও মানবাধিকার ও শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে মারাত্মক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং তার বর্তমান ও সাবেক ছয়জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাগনিটস্কি স্যাংশন আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। আরেকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৭০৩১ (সি) ভিসা স্যাংশন আরোপ করা হয়। সংস্থাটির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে ব্যাপকভাবে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। সাংবাদিক ও সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে হয়রানি, নজরদারি, শারীরিক আক্রমণ এবং গ্রেফতারের কারণে ২০২৩ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কেউ আগামী গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে অবহেলা করলে তাকে ভিসা দেবে না বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর মেতে ঘোষণা দিয়েছে।

জিয়োফ্রে ম্যাকডোনাল্ড বলেন, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন শুধু নির্বাচনের দিনের স্বচ্ছতার ওপর নির্ভর করে না। গোটা নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বিএনপি বড় বড় সমাবেশ করছে। একটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে। উপযুক্ত নির্বাচনি পরিস্থিতির জন্য আরও অনেক কাজ করতে হবে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

জিয়োফ্রে ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছিল। ফলে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে উদ্বেগ থেকে যায়।

ম্যাকডোনাল্ড বলেন, নির্বাচন কমিশন কয়েকটি অপরিচিত পার্টিকে নিবন্ধন দিয়েছে। দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে সরাসরি এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে অবাধে সমালোচনা করার সুযোগ থাকতে হবে। তিনি আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে তিনটি কাজ করার পরামর্শ দেন। প্রথমত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকাশ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপকে উপযুক্ত পদক্ষেপ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, এটার প্রয়োগ উভয় দলের ক্ষেত্রে সমানভাবে হতে হবে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠানো দরকার। এতে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। নির্বাচনিব্যবস্থার সঙ্গে যুক্তদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

তৃতীয়ত, গণতান্ত্রিক অ্যাক্টরগুলোকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দিয়ে যেতে হবে।

জুলিয়া বেকনার বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সম্ভাবনাময় নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও হামলায় অংশ নিচ্ছেন। সাইবার সিকিউরিটি আইন যা করা হয়েছে, সেটা মূলত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনকেই অন্য নামে রূপান্তর করা হয়েছে।

ক্রিস্টি ইউয়েদা বলেন, বাংলাদেশে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের টার্গেট করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাবে ২০২৩ সালে সাংবাদিকদের ওপর ১৫১টি হামলা হয়েছে। ১৫১টি ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে। সভা-সমাবেশের অধিকার সীমিত করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের আদিলুর রহমান খান এবং নাসিরুদ্দিন অ্যালানকে হয়রানি করা হচ্ছে। অপরাপর মানবাধিকার নেতারাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব ব্যাপারে জবাবাবদিহির ব্যবস্থা করা উচিত।

মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশনের পর বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমে গেছে। ফলে স্যাংশন অনেক জীবন রক্ষার কার্যকর হাতিয়ার বলে প্রমাণ হয়েছে। স্যাংশনের পর কমে গেছে গুমের ঘটনাও। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অতিমাত্রায় ক্ষমতাধর। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বিচার করতে অস্বীকার করা হচ্ছে। ভয়ভীতি ও শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম