Logo
Logo
×

শেষ পাতা

‘ব্লু ডট নেটওয়ার্কে’ যোগদানের প্রস্তাব

বাংলাদেশে ‘ফোকাসে’র ক্ষেত্র বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

Icon

মাসুদ করিম

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে ‘ফোকাসে’র ক্ষেত্র বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ফাইল ছবি

অবকাঠামোর বড় প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মানের সনদ পাওয়ার জন্যে ‘ব্লু ডট নেটওয়ার্কে’ বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। অবকাঠামো সংক্রান্ত বড় বড় কাজে দুর্নীতিরোধ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্যই মূলত তারা এই নেটওয়ার্কে যোগদানের কথা বলে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তা রিচার্ড নেফিউ সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে এই প্রস্তাব দিয়েছেন।

বাইডেন প্রশাসন বৈশ্বিক নীতির আলোকে বাংলাদেশে এতদিন সাধারণত গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শ্রমমান, মানবপাচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সন্ত্রাস দমন, শান্তিরক্ষায় সহায়তা, সামরিক সহায়তা প্রভৃতি বিষয়ে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনে এতটা সোচ্চার ছিল না। তবে এবার এ ইস্যুতেও তারা সোচ্চার হয়ে উঠেছে। এর অংশ হিসাবে তারা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী কোনো প্রতিনিধিকে পাঠিয়েছে। যদিও দুর্নীতি দমনও তাদের বৈশ্বিক নীতিরই অংশ। পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ইস্যুতে তারা কাজ করেছে।

গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য মোতাবেক বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৯১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়। এ ছাড়াও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি সংক্রান্ত ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান সব সময়ই খারাপের দিকে থাকে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রিচার্ড নেফিউর এই সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মাহবুব হোসেন এবং বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনে সমস্যা এবং এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে এসব বিষয় বিভিন্ন বৈঠকে প্রাধান্য পেয়েছে।

আগামী ১১-১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় জাতিসংঘের দশম দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সম্মেলনে যোগদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে, বড় প্রকল্প টেকসই ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ‘ব্লু ডট নেটওয়ার্কে’ বাংলাদেশকে দেখতে চায়। ‘ব্লু ডট নেটওয়ার্ক’ হলো, অবকাঠামো প্রকল্প সনদের জন্য একটি ম্যাকানিজম। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, স্পেন এই ম্যাকানিজমের উদ্যোগ নিয়েছে। বড় অবকাঠামো প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মান সনদ এই ম্যাকানিজমে দেওয়া হয়। এতে প্রকল্প উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ, অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কি না এসব বিষয় দেখা হয়। পাশাপাশি, আর্থিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক দিক থেকে কতটা টেকসই সেই মূল্যায়ন করা হয়। প্রকল্পে আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মকানুন সুরক্ষার দিকও বিবেচ্য।

জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বুধবার যুগান্তরকে বলেন, বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে বৈশ্বিক নীতির কারণে শাসন ব্যবস্থা সংক্রান্ত নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সোচ্চার। বাংলাদেশে অপরাপর ইস্যুর পাশাপাশি নতুন করে দুর্নীতি দমন ইস্যু ফোকাসে এসেছে। শাসন ব্যবস্থার কোনো দিকে সমস্যা দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্রের নজরে আসে। নতুন সমস্যার জায়গা তৈরি হয়। অর্থাৎ শাসন ব্যবস্থার যে জায়গায় ঘাটতি দেখা দেয় সেটাই ফোকাসে আসে। ফলে আমাদেরকে সেই ঘাটতি দূর করতে হবে।

বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের কর্মকাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটির কিছু সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। কেউ নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে তাকে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। রিচার্ড নেফিউর বাংলাদেশ সফরকালে ব্লিৎজ নামের একটি ওয়েবসাইটে খবর চাউর হয় যে, দুর্নীতির কারণে ১১ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে স্যাংশন দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এমন কোনো স্যাংশনের ইঙ্গিত তাদের জানা নেই। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, স্যাংশন দেওয়ার আগে এ ব্যাপারে তারা কিছু বলেন না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে সাংবাদিকদের নিয়মিত ব্রিফিংকালে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল আগামী ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ সফরে আসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপর একটি প্রাক-নির্বাচনি প্রতিনিধি দল আগেই বাংলাদেশ সফর করে গেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম