বাবুগঞ্জ উপজেলা
প্রকৌশলীকে আটকে চেকে সই নিলেন ইউএনও
দুই ঘণ্টা আটকে রেখে চেকে বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। রোববার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংকের খানপুরা শাখায় স্বাক্ষর ও মুচলেকা নিয়ে প্রকৌশলীকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতারা তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যান।
উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাকে আটকে রেখে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা চেকে জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছেন। তিনি বলেন, এডিপি প্রকল্পের প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। এ টাকা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও দুজনের যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে রাখার পরিকল্পনা করেন। যৌথ অ্যাকাউন্টে শুধু ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান নয়, আমাকেও যুক্ত করা হোক। কিন্তু বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মেনে না নিয়ে ব্যাংকের একটি কক্ষে আমাকে দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন। এ সময় ইউএনও আমাকে গ্রেফতারের হুমকি দেন। আনসার সদস্য দিয়ে আমাকে অপমান করেন। তিনি আরও জানান, কাজ শেষ না হওয়ায় বিধি ভেঙে আমাকে চাপ দিয়ে চেকে স্বাক্ষর করিয়ে টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে নিয়ে রেখেছেন। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়-একজন জনপ্রতিনিধিসহ ইউএনও উপজেলা প্রকৌশলীকে আটকের হুমকি দেন। দুজনকে ডেকে ইউএনও নুসরাত বলেন, ‘অ্যাই সাইফুল, জাহিদ এদিকে আস। যতক্ষণ না করবে (স্বাক্ষর) ততক্ষণ বের হবে না। অ্যারেস্টেড, সোল ডাউন।’ ইউএনও’র নির্দেশে প্রকৌশলীকে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয় এবং সেবা গ্রহীতাদের বের করে দিয়ে ব্যাংকের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ব্যাংকের ভেতরে থাকা এক সাংবাদিক বলেন, কাজ শেষ না হওয়া প্রকল্পের চেকে স্বাক্ষর না করায় উপজেলা প্রকৌশলীকে আটকে রেখে সই করতে বাধ্য করা হয়েছে। এ সময় আনসারদের উদ্দেশে ইউএনও বলছিলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলীকে বের হতে দিবেন না।’ সন্ধ্যার আগে ব্যাংক থেকে উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ অন্যরা বের হলেও তারা কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।
রোববার রাতে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা বলেন, জুন ক্লোজিংয়ে বিলগুলো যাতে দ্রুত সময়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেওয়া যায় সেজন্য সোনালী ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়েছিলাম। বিল কীভাবে দ্রুত পেতে পারি সেজন্য আমিসহ উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকৌশলী ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার সভা করেছি। এটা করা না হলে টাকা ল্যাবস হয়ে যাবে এবং ঠিকাদারদের বিল দিতে পারব না। অথচ বাইরে ঘটনা চাউর হয়েছে-জোর করে বিল দেওয়া হচ্ছে, যা সত্যি নয়। এখন পর্যন্ত কাউকে বিল দেওয়া হয়নি।
এদিকে, সোমবার সকালে মোবাইল ফোনে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা বলেন, রোববার উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা চেয়ারম্যান দুজনের মাথাই গরম ছিল। আমি তাদের দুজনকে দুদিকে সরিয়ে দিয়েছি। অ্যারেস্টেড শব্দটি উপজেলা চেয়ারম্যান করেছেন। শব্দটি নারী কণ্ঠের এবং উপজেলা চেয়ারম্যান কাউকে গ্রেফতার করতে পারেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাহলে ছড়িয়ে পরা ভিডিওতে কী আছে তা জেনে বলতে হবে। তিনি আরও বলেন, রোববার রাত পর্যন্ত আমি, উপজেলা প্রকৌশলী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছি। এখন কেন প্রকৌশলী এমন কথা বলছেন-তাকে ডেকে পাঠিয়ে তা জানছি।
বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন জানান, ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে বার্তা ছিল উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারদের টাকা দিতে বাধা দিচ্ছেন। এ খবর পেয়ে ইউএনওর সঙ্গে আমরাও ব্যাংকে যাই। চারটি ইউনিয়ন পরিষদের সংস্কার বাবদ ১০ লাখ টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) টেন্ডার হয়ে যাওয়া প্রায় ৬৭ লাখ টাকা রয়েছে। প্রকৌশলীকে কারাদণ্ড দেওয়ার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউএনও’র ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ড দেওয়ার কথা ছিল-অনেকটা কথার কথা।
প্রকৌশলীকে আটকে চেকে সই নিলেন ইউএনও
বাবুগঞ্জ উপজেলা
বরিশাল ব্যুরো
২৭ জুন ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
দুই ঘণ্টা আটকে রেখে চেকে বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। রোববার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংকের খানপুরা শাখায় স্বাক্ষর ও মুচলেকা নিয়ে প্রকৌশলীকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতারা তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যান।
উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাকে আটকে রেখে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা চেকে জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছেন। তিনি বলেন, এডিপি প্রকল্পের প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। এ টাকা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও দুজনের যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে রাখার পরিকল্পনা করেন। যৌথ অ্যাকাউন্টে শুধু ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান নয়, আমাকেও যুক্ত করা হোক। কিন্তু বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মেনে না নিয়ে ব্যাংকের একটি কক্ষে আমাকে দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন। এ সময় ইউএনও আমাকে গ্রেফতারের হুমকি দেন। আনসার সদস্য দিয়ে আমাকে অপমান করেন। তিনি আরও জানান, কাজ শেষ না হওয়ায় বিধি ভেঙে আমাকে চাপ দিয়ে চেকে স্বাক্ষর করিয়ে টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে নিয়ে রেখেছেন। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়-একজন জনপ্রতিনিধিসহ ইউএনও উপজেলা প্রকৌশলীকে আটকের হুমকি দেন। দুজনকে ডেকে ইউএনও নুসরাত বলেন, ‘অ্যাই সাইফুল, জাহিদ এদিকে আস। যতক্ষণ না করবে (স্বাক্ষর) ততক্ষণ বের হবে না। অ্যারেস্টেড, সোল ডাউন।’ ইউএনও’র নির্দেশে প্রকৌশলীকে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয় এবং সেবা গ্রহীতাদের বের করে দিয়ে ব্যাংকের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ব্যাংকের ভেতরে থাকা এক সাংবাদিক বলেন, কাজ শেষ না হওয়া প্রকল্পের চেকে স্বাক্ষর না করায় উপজেলা প্রকৌশলীকে আটকে রেখে সই করতে বাধ্য করা হয়েছে। এ সময় আনসারদের উদ্দেশে ইউএনও বলছিলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলীকে বের হতে দিবেন না।’ সন্ধ্যার আগে ব্যাংক থেকে উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ অন্যরা বের হলেও তারা কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।
রোববার রাতে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা বলেন, জুন ক্লোজিংয়ে বিলগুলো যাতে দ্রুত সময়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেওয়া যায় সেজন্য সোনালী ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়েছিলাম। বিল কীভাবে দ্রুত পেতে পারি সেজন্য আমিসহ উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকৌশলী ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার সভা করেছি। এটা করা না হলে টাকা ল্যাবস হয়ে যাবে এবং ঠিকাদারদের বিল দিতে পারব না। অথচ বাইরে ঘটনা চাউর হয়েছে-জোর করে বিল দেওয়া হচ্ছে, যা সত্যি নয়। এখন পর্যন্ত কাউকে বিল দেওয়া হয়নি।
এদিকে, সোমবার সকালে মোবাইল ফোনে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা বলেন, রোববার উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা চেয়ারম্যান দুজনের মাথাই গরম ছিল। আমি তাদের দুজনকে দুদিকে সরিয়ে দিয়েছি। অ্যারেস্টেড শব্দটি উপজেলা চেয়ারম্যান করেছেন। শব্দটি নারী কণ্ঠের এবং উপজেলা চেয়ারম্যান কাউকে গ্রেফতার করতে পারেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাহলে ছড়িয়ে পরা ভিডিওতে কী আছে তা জেনে বলতে হবে। তিনি আরও বলেন, রোববার রাত পর্যন্ত আমি, উপজেলা প্রকৌশলী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছি। এখন কেন প্রকৌশলী এমন কথা বলছেন-তাকে ডেকে পাঠিয়ে তা জানছি।
বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন জানান, ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে বার্তা ছিল উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারদের টাকা দিতে বাধা দিচ্ছেন। এ খবর পেয়ে ইউএনওর সঙ্গে আমরাও ব্যাংকে যাই। চারটি ইউনিয়ন পরিষদের সংস্কার বাবদ ১০ লাখ টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) টেন্ডার হয়ে যাওয়া প্রায় ৬৭ লাখ টাকা রয়েছে। প্রকৌশলীকে কারাদণ্ড দেওয়ার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউএনও’র ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ড দেওয়ার কথা ছিল-অনেকটা কথার কথা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2024