Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বছরে ২০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি

Icon

মতিউর রহমান ভান্ডারী, সাভার

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বছরে ২০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি

ঢাকার সাভারে মহাসড়কের উভয় পাশের ফুটপাতে অন্তত ১২শ’ ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে ছয় মাস অন্তর ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করছেন সাভার উপজেলা হকার্স লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির মোল্লা।

এ ঘটনায় ফুটপাতের একাধিক ব্যবসায়ী সাভার মডেল থানায় ১০টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দৈনিক ভাড়া, প্রশাসন ম্যানেজ এবং বৈদ্যুতিক বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ প্রতিদিন ১৮০ টাকা আদায় করা হয়। এ ছাড়া ছয় মাস অন্তর ৫০ হাজার টাকায় প্রতিটি দোকানের চুক্তিপত্র নবায়ন করতে হয়। অন্যথায় দোকান তুলে দিয়ে নতুন করে স্ট্যাম্প করে অন্যদের কাছে ভাড়া দেন কাদির মোল্লা।

ফুটপাতের দোকান থেকে দৈনিক চাঁদা তুলতে কাদির একটি বাহিনী তৈরি করেছেন। কোনো দোকানদার যথাসময়ে চাঁদা দিতে না পারলে তার নির্দেশে ব্যবসায়ীদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালায় বাহিনীর সদস্য জহির, রমজান, পাভেল ওরফে তোতলা পাভেল, আনোয়ার, সুশান্ত, কালা শরীফ, জিয়া, ধলা শরীফ, জুয়েল, ইসরাফিল ও মানিক।

সাভার বাসস্ট্যান্ডের প্রায় ১২ শতাধিক দোকানির কাছ থেকে দৈনিক লাইনম্যানের বেতন ৫০ টাকা, পল্লীবিদ্যুৎ খরচ বাবদ ৩০ টাকা, হকার নেতা ও প্রশাসন খরচ বাবদ ১০০ টাকা করে সর্বমোট প্রতিদিন ১৮০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।

এ হিসাবে ১২শ’ দোকান থেকে প্রতিদিন দুুই লাখ ১৬ হাজর টাকা তোলা হয়। আর বছরে তোলা হয় সাত কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া প্রতিটি দোকান থেকে এককালীন (ছয় মাসে) ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এই হিসাবে এককালীন চাঁদার পরিমাণ হয় ১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ দৈনিক ও এককালীন মিলে বছরে মোট চাঁদার পরিমাণ হয় ১৯ কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী মো. বুলবুল বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে মাছবাজারের সামনে সাড়ে তিনহাত ফুটপাতের জায়গায় একটি ভ্রাম্যমাণ দোকানের পজেশন বুঝিয়ে দিয়ে গত বছরের মার্চ মাসে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন কাদির মোল্লা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দোকান নেওয়ার পর থেকে প্রতিদিন ১৮০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে আসছি।

ছয় মাস পর সেপ্টেম্বর মাসে আবারও চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে এককালীন ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে সে আমার দোকান বন্ধ করে দেয়। পরে তার ছেলে জহিরুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা দিলে আবার দোকান খুলতে দেয়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবারও দোকানের চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে এককালীন ৫০ হাজার টাকার জন্য চাপ দেয়।

কিন্তু ব্যবসা মন্দার কারণে টাকা দিতে পারিনি। পরের বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি কাদির মোল্লার নেতৃত্বে জুয়েল ও কাজলসহ অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে দোকানের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাইনি।

একই অভিযোগ কাপড় ব্যবসায়ী শাহিন শেখ, দ্বীন ইসলাম ও খেলনা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের। তারা সাভার মডেল থানা এবং র‌্যাব-৪ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

শাহিন শেখ বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা শুরু করলেই কাদির মোল্লার লোকজন আমার দোকান তুলে দিয়ে অফিসে দেখা করতে বলেন। বিকালের দিকে অফিসে গেলে একটি দৈনিক চাঁদার তালিকা ধরিয়ে দেন। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমাকে মারধর ও হত্যার হুমকি দেন। ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫০ হাজার টাকা দেই। আর প্রতিদিনের খরচ বাবদ গুনতে হয় ১৮০ টাকা। দৈনিক চাঁদা দিতে দেরি হওয়ায় কাদিরের ছেলে জহিরুল, রমজান, জুয়েল, কাজল, আনোয়ারসহ সাত-আটজন আমাকে কিলঘুষি ও থাপ্পড় মেরে গুরুতর আহত করে।

তিনি বলেন, ৪২ জন কাঁচামাল ব্যবসায়ী, ৬৫ জন কাপড় ও খেলনা ব্যবসায়ী, ৫০ জন ফল ব্যবসায়ী, ৩৫ জন মাছ ব্যবসায়ী ও ৪৫ জন টি-শার্ট ও টং চা দোকান ব্যবসায়ীসহ অন্তত ১২শ’ ব্যবসায়ী কাদির মোল্লার কাছে জিম্মি। বিষয়টি জানিয়ে সাভার মডেল থানা এবং র‌্যাব-৪ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু ফল শূন্য।

অভিযোগের বিষয়ে জানাতে চাইলে আব্দুল কাদির মোল্লা যুগান্তরকে বলেন, কিছু ব্যবসায়ী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। স্ট্যাম্পের মাধ্যমে আমি কোনো দোকানের মালিকানা হস্তান্তর করিনি। তবে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে উত্তোলন করি।

এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ সাহা বলেন, প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম