প্রকৌশলীদের সংগঠন বিআইপি’র কাণ্ড
জাল নকশায় নজরকাড়া ২০ তলা ভবন
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: দায়ভার নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের -সাবেক সা. সম্পাদক, বিআইপি * অংশীদারি চুক্তিতে ভবনটি নির্মাণ করে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ট্রপিক্যাল হোমস
মাহবুব আলম লাবলু
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র বাংলামোটরে জাল নকশায় তৈরি করা হয়েছে ২০ তলা ভবন। সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া জমিতে অংশীদারি চুক্তিতে এই ভবনটি নির্মাণ করেছে নামকরা ডেভেলপার কোম্পানি ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেড।
ভবন নির্মাণের পর নিজেদের ভাগের অধিকাংশ বিক্রিও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর ভবনের ছয় তলায় গড়ে তুলেছে নিজস্ব বিলাসবহুল অফিস।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে এই জালজালিয়াতির সার্বিক কার্যক্রম। ১০ কাঠা জায়গার ওপর চোখের সামনে নিয়ম ভেঙে ২০০১ সালে বহুতল ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।
এ ধরনের ভবন তৈরিতে ওই সময় ৭টি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্রের দরকার হলেও তা নেওয়া হয়নি। অবৈধ এই ভবনের স্পেস বিক্রির অনুমোদন রাজউক কীভাবে দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুধু অবৈধ নির্মাণই নয়, ভবনের পশ্চিম পাশে সড়কসংলগ্ন সরকারি প্রায় ১০ কাঠা খাসজমিও দখলে নিয়েছে ট্রপিক্যাল হোমস। এছাড়াও নিয়ম ভেঙে ভবনের দুটি কার পার্কিংয়ের বেজমেন্ট অফিস ও গুদাম হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে উঠে এসেছে উল্লিখিত সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেখানে আরও পাওয়া যায়, ১৯৯৬ সালের ২ এপ্রিল বাংলামোটর এলাকার ১৩/এ ময়মনসিংহ রোডে ১০ কাঠার একটি প্লট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সকে (বিআইপি) লিজ দেয় সরকার (লিজ দলিল নং ৬৩৮)।
এই জায়গার ওপর ভবন তৈরি করতে একই বছরের ২২ জুন ফ্রেন্ডশিপ টাওয়ার লিমিটেডকে আমমোক্তার নিযুক্ত করে (দলিল নং ১৩৯৬) সংস্থাটি। কিন্তু দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডশিপ টাওয়ার লিমিটেড রাজউক থেকে নকশা অনুমোদন করতে পারেনি।
ফলে দুপক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে ২০০০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আমমোক্তার দলিল বাতিল করা হয় (দলিল নং ২২৫)। এরপর যে নকশা (নকশা নম্বর ৩-সি ১৮২৯/১৯৯৭) দেখিয়ে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে, সেই নকশায় অনুমোদনের তারিখ রয়েছে ১৯৯৭ সালের ২৩ জুলাই।
নকশায় থাকা তথ্য বলছে, নকশাটি অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স। অথচ সেসময় ওই প্লটের আমমোক্তার বলে মালিক ফ্রেন্ডশিপ টাওয়ার লিমিটেড। তখন এই প্রতিষ্ঠানকে ছাড়া ভূমি মালিকের একার পক্ষে নকশা অনুমোদন করানো সম্ভব নয়। একই সঙ্গে নকশায় ফ্রেন্ডশিপ টাওয়ারের যে কোনো কর্মকর্তার সিল-সই থাকার কথা থাকলেও তা নেই।
সংশ্লিষ্ট নথিপত্রে পাওয়া তথ্যমতে, দোকান বিক্রির একটি দলিলের ৫ নম্বর পাতায় ট্রপিক্যাল হোমস কর্তৃপক্ষ নিজেরাই উল্লেখ করেছে, তফশিল বর্ণিত প্লটটিতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখলে থাকা অবস্থায় ভূমি দেখাশোনা, রক্ষণাবেক্ষণ, বেচা-বিক্রি, প্ল্যান পাশ, আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ইমারত নির্মাণসহ যাবতীয় কার্যাদি পরিচালনার জন্য ২০০০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তাদের আমমোক্তার নিয়োগ করা হয়।
আবার ভবনটির মামলাসংক্রান্ত কাজে ট্রপিক্যাল হোমসের আইনজীবী আদালতে উল্লেখ করেন, ফ্রেন্ডশিপ টাওয়ার লিমিটেড আমমোক্তারনামা দলিল বলে রাজউক থেকে ১৯৯৭ সালের ৩১ জুলাই ২০ তলা আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন করান।
কিন্তু নকশায় অবিশ্বাস্যভাবে ট্রপিক্যাল হোমসের কর্মকর্তা হামিদুল ইসলামের সই রয়েছে। যে তারিখে নকশা অনুমোদনের কথা বলা হয়ছে, এর ৩ বছর পর ট্রপিক্যাল হোমসের সঙ্গে বিআইপির চুক্তি হয়। এটিও জালজালিয়াতির বিয়য়টি স্পষ্ট করে তোলে। আবার নকশায় বিআইপির তৎকালীন সভাপতি গোলাম রহমানের যে সই রয়েছে, সেটিও জাল।
যুগান্তরের উদ্যোগে নকশায় দেওয়া সইয়ের সঙ্গে ভবনের ব্রশিউরে প্রকাশিত গোলাম রহমানের বাণীতে দেওয়া সই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এতে গরমিলের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় সইটি জাল বলে উল্লেখ করেছে সিআইডি।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিআইপি কিংবা ফ্রেন্ডশিপ টাওয়ার নকশাটি অনুমোদন করিয়ে থাকলে ট্রপিক্যাল হোমসের সঙ্গে করা আমমোক্তার দলিলে নকশাসহ জায়গা হস্তান্তরের কথা উল্লেখ থাকত। কিন্তু দলিলে তা নেই।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত রাজউকের সাবেক অথরাইজ অফিসার জিয়াউল হক নকশাটিতে সই করে ভুয়া অনুমোদন দেন। রাজউকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো নকশা অনুমোদনের জন্য বিসি (বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন) কমিটির সভায় তুলতে হয়। সভায় আলোচনার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নকশা অনুমোদন দেওয়া হয় এবং নকশায় কমিটির সদস্যদের সই থাকে। কিন্তু প্ল্যানার্স টাওয়ারের নকশাটি বিসি কমিটিতে তোলা হয়নি।
১৯৯৭ সালের বিসি কমিটির নথি ঘেঁটে এই নকশা অনুমোদনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে রেকর্ড কিপারদের যোগসাজশে এই নকশার একটি কপি রেকর্ড রুমে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
তারা বলেন, রাজউকের রেকর্ড কিপার জামাল উদ্দিনের মাধ্যমে অত্যন্ত সুকৌশলে এ কাজ করা হয়। কোনো ক্রেতা সত্যতা যাচাই করতে গেলে যেন নকশাটি দেখতে পান, সেজন্যই জাল নকশা রেকর্ড রুমে সংরক্ষণ করা হয়। জামালও দুর্নীতির দায়ে রাজউক থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানকালে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জিয়াউল হক ও জামাল উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কেউ কেউ বলেছেন, চাকরিচ্যুতির পর তাদের সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই। আবার কেউ বলেছেন, জামাল উদ্দিন দেশে থাকলেও জিয়াউল হক বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এমনকি তাদের ল্যান্ড ফোন বা মোবাইল ফোন নম্বরও কেউ দিতে পারেননি। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জালজালিয়াতির বিষয়ে জানতে বিআইপির সাবেক সভাপতি ড. গোলাম রহমানের (নকশায় যার সই) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ল্যান্ড টেলিফোনে তিনি যুগান্তরকে জানান, জিয়াউল হক নামের কোনো অথরাইজ অফিসারের কাছ থেকে তিনি ওই ভবনের জন্য নকশা অনুমোদন করাননি।
তাহলে জিয়াউল হকের সই করা দুটি বেজমেন্টসহ ২০ তলা ভবনের নকশায় তার সই এলো কীভাবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকদিন আগের কথা বলে সবকিছু এখন মনে নেই। অনেক কাগজপত্রও নেই। তবে এটুকু মনে আছে, ভবন নির্মাণের সময় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়েছিল। বিআইপির পক্ষ থেকে তখন একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি তদন্ত শেষে নকশা ঠিক থাকার কথা বলেছিল।’
বিআইপির অফিস সূত্রে জানা যায়, জাল নকশায় ভবন নির্মাণের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইপির নেতাদের নজরেও আছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে এই ভবন নির্মাণের অনুমোদনপত্রসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে ট্রপিক্যাল হোমসের কাছে বারবার অনুরোধপত্র পাঠালেও তারা তা দেয়নি।
একাধিকবার অনুরোধের পর ট্রপিক্যাল হোমসের পক্ষ থেকে শুধু নকশার একটি অনুলিপি সরবরাহ করা হয়। নকশাটি সম্পর্কে মতামত চেয়ে ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল রাজউক চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন বিআইপির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। চিঠিতে ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ঝুঁকির কথাও তুলে ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু রাজউক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআইপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল মোহাম্মদ খান যুগান্তরকে জানান, ভবনের মূল নকশা তাদের কাছে নেই। তাদের অনুরোধের পর ট্রপিক্যাল হোমস নকশার একটি অনুলিপি দিয়েছে। তবে সেটি জাল কি না, তা এখনো তারা যাচাই করতে পারেননি। এই নকশার ব্যাপারে মতামত চেয়ে রাজউকে চিঠি লেখার কথাও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, প্রথমে ভবনটির ১৬ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। এরপর নির্মাণ করা হয় ২০ তলা। কিন্তু কোনো রিভাইস প্ল্যান করা হয়েছে কি না, তা তারা জানেন না। পরবর্তী সময়ে যে ফ্লোরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, ভূমি মালিক হিসাবে বিআইপির সঙ্গে কোনো আলোচনাও করেনি ট্রপিক্যাল হোমস। এমনকি এসব ফ্লোরের কোনো অংশ বিআইপিকে দেওয়া হয়নি। ২০ তলা ভবনে মাত্র দুটি ফ্লোর পেয়েছে বিআইপি। ভবন নির্মাণে কোনো অনিয়ম করা হলে এর দায়দায়িত্ব ট্রপিক্যাল হোমসের। যদি এক ইঞ্চিও অবৈধভাবে তৈরি করা হয়, তা তারা মেনে নেবেন না।
নকশা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভবনটিতে দুটি কার পার্কিং বেজমেন্ট রয়েছে। কিন্তু সরেজমিন এর কোনো অস্তিত্ব মেলেনি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সেগুলো বিক্রয় অনুমোদন করিয়ে অফিস ও গোডাউন হিসাবে বিক্রি করেছে ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেড।
বাংলামোটরের মতো ব্যস্ততম এলাকায় একটি বহুতল ভবনের কার পার্কিং গোডাউন ও অফিস স্পেস হিসাবে কীভাবে বিক্রির অনুমতি (বিক্রি আদেশের স্মারক নং রাজউক/এস্টেট/৪০৮৩ স্থা. তারিখ-০৩/১১/২০০৪) দিল রাজউক, সেই বিষয়টি রহস্যজনক। রাজউকের অনুমোদন পাওয়ার পরই ২০০৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মমতাজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির কাছে দুটি বেজমেন্ট বিক্রি করে দেওয়া হয়, যার দলিল নম্বর ৩৯৫ ৩৯৬। ২০ তলার দুটি বেজমেন্ট দোকান, অফিস ও গোডাউন হিসাবে শ্রেণি পরিবর্তন করে বিক্রির বিষয়টিও আইনসিদ্ধ নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জোন ৫-এর অথরাইজড অফিসার রঙ্গন মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে ২০ ফুট রাস্তার পাশে ১০ কাঠা জায়গার ওপর ২০ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন পাওয়ার কথা নয়। আর বেজমেন্টের শ্রেণি পরিবর্তন করে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এরকম অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়ার পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার সুযোগ আছে।
জানা যায়, এই ভবনের দ্বিতীয় তলার ৫টি দোকান ট্রপিক্যাল হোমসের কাছ থেকে সাফকবলা রেজিস্ট্রিমূলে ক্রয় করেন ঢাকার সেনপাড়া পর্বতার একজন ব্যবসায়ী। ২০০৫ সালের ১৪ জুলাই তাকে রেজেস্ট্রি দেওয়া হয় (দলিল নম্বর ৩৬১৮)। দোকান বুঝে নেওয়ার পর তিনি জানতে পারেন ভবনের রাজউক অনুমোদিত কোনো নকশা নেই। ট্রপিক্যাল হোমস অন্য ক্রেতাদের মতো তাকেও প্রতারিত করেছে।
প্রতারিত ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মোশারফ হোসেন শিকদার যুগান্তরকে বলেন, জাল নকশার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা জালজালিয়াতির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে প্রতিকার পাওয়ার আশায় ২০০৫ সালের ৪ এপ্রিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও দুর্নীতি দমন কমিশনে-(দুদক) আবেদন করেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে কোনো সংস্থাই আবেদনের বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়নি। উলটো ক্ষিপ্ত হয়ে ট্রপিক্যাল হোমস তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং দোকানগুলো দখলে নিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
জালজালিয়াতির বিষয় অস্বীকার করে ট্রপিক্যাল হোমসের পরিচালক ফিরোজ আহমেদ যুগান্তরকে জানান, রাজউকের অনুমোদন নিয়েই তারা ভবন নির্মাণ করেছেন। সরকারি জয়গা দখলে নিয়ে ১০ কাঠার ওপর কীভাবে ২০ তলার অনুমোদন পেলেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজউক অনুমোদন দিয়েছে বলেই আমরা ভবন নির্মাণ করতে পেরেছি। কীভাবে অনুমোদন দিয়েছে, সেটি রাজউকের বিষয়। আর এ নিয়ে ক্রেতাদের কোনো অভিযোগ নেই।
রাজউকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ ভবনের নকশা সংরক্ষিত আছে। কার নামে নকশা অনুমোদন করা হয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি অনেক আগের প্রজেক্ট হওয়ায় এ সংক্রান্ত সব ফাইল আমাদের কাছে নেই। এ সম্পর্কে ট্রপিক্যাল হোমসের প্রকল্প পরিচালক শাজাহান রেজা ভালো বলতে পারবেন। মোবাইল ফোনে শাজাহান রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। বরং এ প্রতিবেদককে তিনি ফিরোজ আহমেদের সঙ্গেই কথা বলার পরামর্শ দেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শুধু ভবন নির্মাণে জালজালিয়াতি নয়, ভবনের সামনে প্রায় প্রায় ১০ কাঠা সরকারি খাসজমি দখলে নেয় ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ট্রপিক্যাল হোমস। মূল সড়কের সঙ্গে লাগোয়া এই জায়গাকে পুঁজি করেই ১০ কাঠার ওপর ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
অথচ এই জায়গার মালিক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ট্রপিক্যাল হোমস সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ওই জায়গা ইজারা না নিয়েই ভরাট করে বিআইপির জায়গার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলে। মূলত ভবনের দক্ষিণ পাশে যে ২০ ফুট রাস্তা রয়েছে, সেটি দেখিয়ে নকশা অনুমোদন করালে ১০ কাঠা জায়গায় ১০ তলার বেশি অনুমোদন পাওয়ার কথা নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন যুগান্তরকে বলেন, জায়গাটি দীর্ঘদিন ট্রপিক্যাল হোমসের দখলে ছিল। সম্প্রতি ওই জায়গা দখলমুক্ত করে সেখানে ডিজিটাল পার্কিং নির্মাণের কাজ চলমান আছে।
তবে শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, প্ল্যানার্স টাওয়ারের দোকান ও অ্যাপার্টমেন্ট মালিক, ভাড়াটে ও সাধারণ মানুষ এই জায়গা পার্কিং হিসাবে ব্যবহার করছে। এ জায়গা ব্যবহার করতে না দিলে প্ল্যানার্স টাওয়ারের সদর দরজাই বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে পুরো জায়গা দখলে নিয়ে কীভাবে এত বড় ভবন তৈরি করেছে ট্রপিক্যাল হোমস, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।