ব্যবসায়ী নেতাদের অভিমত
শিল্প টিকিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জিং হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আঠারো দিনের ব্যবধানে দুদফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি দেশের শিল্পায়নকে নতুন চ্যালেঞ্জে ফেলবে। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে প্রতিযোগী সক্ষমতায় টিকতে না পেরে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি শিল্প বন্ধের তালিকাকে আরও দীর্ঘ করবে। মোটা দাগে দেশের কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মঙ্গলবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় ব্যবসায়ী নেতারা যুগান্তরকে একথা বলেন।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, পুরো জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর করার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সবাইকে। স্থানীয় উৎস থেকে কয়লা ও গ্যাস উত্তোলনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ক্রেতার ওপর চাপ বাড়বে, ছোট-মাঝারি শিল্প বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এখনো করোনায় ক্ষতি বয়ে বেড়াচ্ছেন। এ মুহূর্তে জ্বালানির লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দেবে। মূল্যবৃদ্ধি বড় শিল্প সমন্বয় করতে পারলেও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য বহন কষ্টসাধ্য হবে। তাছাড়া সামনে রোজা আসছে। এখন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে।
নিত্যপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি শিল্প মালিকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এখন আর সমন্বয় করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সরকার ও বিদেশি ক্রেতাদের অবস্থান তৈরি পোশাক মালিকদের বিপক্ষে। একদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারা পণ্যের দাম কমিয়ে দিচ্ছেন, ডিসকাউন্টের জন্য চাপ দিচ্ছেন। এই মুহূর্তে মালিকরা পোশাকের দর নির্ধারণের ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারলে ভবিষ্যতে খারাপ দিন অপেক্ষা করছে।
তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, পোশাক শিল্পে এখন অর্ডার সংকট চলছে। অনেক কারখানা অর্ডারের অভাবে সায়মিক বন্ধ রাখা হয়েছে, আবার কিছু কারখানা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দিচ্ছে। গত এক মাসে ঢাকায় ২০৭টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, চট্টগ্রামেও একই অবস্থা।
এ অবস্থায় বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি তৈরি পোশাক শিল্পকে নতুন চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। অনেক কারখানা প্রতিযোগী সক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন থাকতে পারে। কিন্তু চুরি, সিস্টেম লস ও অপচয় রোধ করা গেলে সামান্য প্রতিকার পাওয়া সম্ভব ছিল। এখন শিল্পে গ্যাসের চাপ থাকে না। শিল্প মালিকদের বাতাসের দাম পরিশোধ করতে হয়। কারখানায় লোডশেডিং হয়। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে হয়তো কিছুটা সমন্বয় করা যেত, কিন্তু তার নিশ্চয়তাও কেউ দিতে পারছে না।