তিন কোটি যুবক আগামীতে ভোট দিতে পারবে কিনা বড় বিষয়: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে একবারও ভোট দেয়নি এমন যুবকের সংখ্যা তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি। তারা ২০১৪ সালে দিতে পারেনি, ১৮ সালে দিতে পারেনি। তারা আগামীতে ভোট দিতে পারবে কিনা সেটা একটা বড় বিষয়। এই যুবকদের নিজেদের ভোটার হিসাবে নিবন্ধন করা এখন একটি জাতীয় কর্তব্য হিসাবে দেখা উচিত। যুবকরা যেন ভোট দিতে পারে সেজন্য আন্দোলন দাঁড় করাতে হবে।
তিনি বলেন, যুব ভোটারদের একত্রিত করা, তাদের সংগঠিত করা এবং তাদের আগামীদিনের ভোটের বাক্সে ভোটটা যাতে দিতে পরে সেজন্য তাদের নিবন্ধিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশের বেকার যুবকদের সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সর্বশেষ জনশুমারির তথ্যানুযায়ী দেশে এখন পাঁচ কোটি যুবক রয়েছে। এরমধ্যে গড়ে তিনজনের মধ্যে একজন বেকার। বাংলাদেশে কর্মের নিশ্চয়তা দিয়ে একটি আইন প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি। যেমন করে খাদ্য নিরাপত্তার আইন দরকার, বৈষম্যবিরোধী আইন প্রয়োজন তেমনি যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি আইনের দাবি উঠানো উচিত।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, যুব সমাজের যারা কর্মহীন আছে স্বনিবন্ধনের মাধমে যদি হাজার টাকাও দেওয়া যায় তাহলে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ জিডিপির চেয়ে বেশি লাগে না। অর্থাৎ এটার আর্থিক সংস্থান বাংলাদেশে নেই বলে আমি মনে করি না। যদি লুটের টাকা ফিরিয়ে আনা হয় তাহলে আর কিছুই লাগে না।
তিনি বলেন, দেশে যুব সমাজের ভেতরে নানা ধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই হতাশ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। অনেকে আবার মাদকাসক্তসহ নানা ধরনের উগ্রবাদী চিন্তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের অ্যালার্মিং বিষয়। এসব থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।
দেবপ্রিয় বলেন, অনেক দেশে যুবকদের ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়। আমাদের দেশেও সেটা সম্ভব। সেখানে সারা বছরের অথবা দুই বছরের জন্য শিক্ষার ১ লাখ বা ২ লাখ টাকার ক্রেডিট কার্ড দেওয়া যায়, সেটা ব্যাংকের মাধ্যমে সরকার নিশ্চত করবে। যেই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে শিক্ষার ব্যয়ভার পূরণ করবে সেটার গ্যারান্টি সরকারের পক্ষ থেকে দিতে হবে। যখন তিনি চাকরি করবেন বা আয় করবেন সেখান থেকে তা পূরণ করবেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি শ্রমিক নেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সমাজে চরম শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। বৈষম্য এতই বেড়েছে যে মালিক বিলিয়ন ডলারের ক্লাবের সদস্য তার শ্রমিক দুবেলা ভাত খেতে পারে না। তাকে বাঁচার জন্য ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এখান থেকেই দেশের শ্রেণিবৈষম্য আরও স্পষ্ট বোঝা যায়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নজর সাধারণ মানুষের ওপর নেই। তাদের চোখ এখন বড় বড় প্রকল্প আর কি করে বিলিয়ন ম্যান তৈরি করবে সেই দিকে।
যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কাবেরি গায়েন, যুব ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বিএম শহিদুল হক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. সাজেদুল হক রুবেল, জাহাঙ্গীর আলম নান্নু প্রমুখ।